ঘটনাস্থলে পুলিশ। শুক্রবার, সল্টলেকে। নিজস্ব চিত্র
ভরদুপুরে এক দুষ্কৃতী আবাসনের ফ্ল্যাটে ঢুকে এক বৃদ্ধাকে ছুরির কোপে ক্ষতবিক্ষত করে পালাল! অথচ, কারও নজরে পড়ল না! পুলিশ জানিয়েছে, ওই আবাসনে নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও নেই কোনও সিসি ক্যামেরা।
শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে পরিকল্পিত উপনগরী, সল্টলেকের পূর্বাচল আবাসনের তিন নম্বর ক্লাস্টারে। আহত বৃদ্ধাকে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর নাক, ডান চোখ, থুতনি এবং হাতে আঘাত রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। ওই বৃদ্ধার নাম জয়শ্রী চক্রবর্তী (৭১)।
বিধাননগর পুর প্রশাসনের একাংশের অভিযোগ, বারবার বলা হলেও সিসি ক্যামেরা বসানোর ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের অনেকেই উদ্যোগী হচ্ছেন না। যদিও এই ঘটনার পরে ওই আবাসনের বাসিন্দারাই জানিয়েছেন, সিসি ক্যামেরা থাকলে দুষ্কৃতীকে চিহ্নিত করা সহজ হত।
পুলিশ জানায়, এ দিন বৃদ্ধার ছেলে অনীশ চক্রবর্তী তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কাজে বাইরে গিয়েছিলেন। তাঁদের ছেলে স্কুলে গিয়েছিল। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ প্রতিবেশীদের কাছ থেকে অনীশ ঘটনার কথা জানতে পারেন। পড়শিরাই গুরুতর জখম বৃদ্ধাকে স্থানীয় এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান। পেশায় ব্যবসায়ী অনীশ জানান, হাসপাতালে তাঁর মা জানিয়েছেন, সাড়ে ১২টা নাগাদ ফ্ল্যাটের কলিং বেল বাজলে তিনি ভাবেন, নাতি স্কুল
থেকে ফিরেছে। দরজা খুলতেই হেলমেট ও মুখোশ পরা এক দুষ্কৃতী জোর করে ঘরে ঢুকে পড়ে। সে জানায়, তার মা অসুস্থ। ১০ হাজার টাকা লাগবে। তার পরেই সে বৃদ্ধাকে কোপাতে থাকে। আজ, শনিবার জয়শ্রীদেবীর অস্ত্রোপচার হবে।
প্রতিবেশী রণবীর দাশগুপ্ত জানান, দুপুরবেলা জয়শ্রীদেবী তাঁদের নাম ধরে ডাকেন। বাইরে এসে তিনি দেখেন, বৃদ্ধা বারান্দায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। অঝোরে রক্ত ঝরছে। তিনি জানান, দুষ্কৃতী টাকা চেয়েছিল। তিনি দিতে চাননি। তাই ছুরি মেরেছে। এর পরেই অনীশকে ফোনে সব জানানো হয়।
অনীশ জানান, ওই দুষ্কৃতী সম্ভবত কিছু টাকা নিয়ে গিয়েছে। কারণ, তাঁর মায়ের কয়েকটা ব্যাগ খোলা ছিল। তাতে কত টাকা ছিল, তা তিনি জানেন না। এ দিন ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিনু চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের কাছে সিসি ক্যামেরা বসানোর আবেদন করেও সাড়া মেলেনি। কারা আবাসনে যাতায়াত করছে, এ বার থেকে তা লিপিবদ্ধ করার কথা বলেছি। ফের আবেদন করব।’’
ওই আবাসনের চারটি গেটের মধ্যে একটি সব সময়ে খোলা থাকে। বাকিগুলি বন্ধই রাখা হয় বলে এক নিরাপত্তারক্ষী জানান। ওই দুষ্কৃতী হেঁটে এসেছিল, না কি মোটরবাইকে, কী ভাবেই বা সে বেরিয়ে গেল, সে সম্পর্কে কেউই স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানার পুলিশ। রক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সময়ে কারা ওই আবাসনে এসেছেন, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।