বিস্ফোরণে আহত সঞ্জয়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
ভরদুপুরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন দুই যুবক। আচমকাই বিকট শব্দে আঁতকে উঠলেন তাঁরা। দেখলেন, রাস্তার উল্টো দিকে দাঁড়ানো একটি নীল রঙের গা়ড়ি দুম়ড়ে গিয়েছে বিস্ফোরণে। ভিতরে কাতরাচ্ছেন দু’জন। এই দৃশ্য দেখে দেরি করেননি তাঁরা। তড়িঘড়ি পুলিশে খবর দেন। লালাবাজার সূত্রের খবর, বৌবাজার থানা থেকে পুলিশকর্মীরা গিয়ে সঞ্জয় দাস ও ভোপাল হালদার নামে দুই যুবককে উদ্ধার করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। রবিবার সন্ধ্যায় ভোপাল (৪০) মারা যান। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার হাট বকুলতলায়। রাতে সঞ্জয়কে বাইপাসের একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
দিন কয়েক আগেই মহানগরে খোঁজ মিলেছে বাংলাদেশি জঙ্গিদের। এখনও অধরা ব্লগার খুনের অভিযুক্ত-সহ তিন জন। এই পরিস্থিতিতে রবিবার দুপুরে সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের কাছে এই ঘটনা স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক ছড়ায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অবশ্য দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে কোনও জঙ্গি যোগ নেই। ওই গাড়িটিতে কোনও বিস্ফোরকও ছিল না। ওই দু’জন বেলুনে ভরার গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে গাড়িতে চেপে যাচ্ছিলেন। মাঝপথে তা ফেটে গিয়ে এই বিপত্তি। লালবাজারের খবর, গাড়িতে চাপিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। বেলুন ব্যবসায়ী ভোপাল একটি পশুপ্রেমী সংগঠনের নির্দেশে তাদের মহম্মদ আলি পার্কের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। তার আগে ধর্মতলাতেও সংগঠনের হয়ে বেলুন ফুলিয়েছিলেন।
এই ঘটনায় রাত পর্যন্ত ওই পশুপ্রেমী সংগঠনের কর্ণধারকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটিকে বৌবাজার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়িটির ফরেন্সিক পরীক্ষা করানো হবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার দুপুর একটা নাগাদ ধর্মতলা থেকে পশুপ্রেমী সংগঠনের একটি মিছিল মহম্মদ আলি পার্কে যাচ্ছিল। মিছিলের সামনে ওই নীল রঙের গাড়িটি ছিল। সেটি চালাচ্ছিলেন টালিগঞ্জের বাসিন্দা সঞ্জয় দাস। পিছনের সিটে বসেছিলেন বেলুন ব্যবসায়ী ভোপাল হালদার। তাঁর কোলের উপর বেলুন ফোলানোর গ্যাস সিলিন্ডারটি রাখা ছিল। দুপুর ১টা ১৫ মিনিট নাগাদ সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের সামনে গাড়িটি পৌঁছতেই বিকট আওয়াজে বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে গাড়িটির ছাদ ও পিছনের কাচ উ়ড়ে যায়। গাড়ির বাকি অংশও দুমড়ে-মুচড়ে যায়। পুলিশের দাবি, বিস্ফোরণের আওয়াজে সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে কর্তব্যরত পুলিশ ও ট্র্যাফিক পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। তারাই প্রথমে আহত দুই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ভোপালের দেহের পঞ্চাশ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। বিস্ফোরণের জেরে গাড়ির চালক সঞ্জয় সাহার মাথার বেশ কিছুটা অংশ ঝলসে গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রের দাবি, গ্যাস সিলিন্ডার এ ভাবে গা়ড়িতে চাপিয়ে শুইয়ে নিয়ে যাওয়া আইন বিরুদ্ধ। লরিতে দাঁড় করিয়েই সাধারণত নিয়ে যেতে হয়। রবিবার হওয়ায় এ দিন রাস্তা ফাঁকা ছিল। ফলে বিস্ফোরণে অন্য কোনও গা়ড়ি বা মানুষের ক্ষতি হয়নি। কিন্তু কাজের দিনে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে এমন বিস্ফোরণ ঘটলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হতে পারত। আতঙ্ক ছড়িয়েও বাড়ত বিপত্তি। এই ঘটনায় ভোপালের যেমন দোষ রয়েছে, তেমনই সংগঠনও দায় এড়াতে পারে না বলে মনে করছেন পুলিশকর্তাদের অনেকেই। তাঁরা বলছেন, মহম্মদ আলি পার্কে গিয়ে ওই সংগঠনের উৎসবেও তো ভোপালের বেলুন ফুলিয়ে শিশুদের হাতে দেওয়ার কথা ছিল। সেখানে সিলিন্ডার ফাটলেও তো বড় বিপদ হতে পারত।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পশুপ্রেমী সংস্থার তরফে সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘শিশুদের হাতে বেলুন তুলে দেওয়ার জন্য এই প্রথম বার ভোপাল হালদারকে ভা়ড়া করি। চলতি বছরে শিশু দিবসে ঢাকুরিয়ায় ওঁর খোঁজ পাই। এই ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার যে নিষিদ্ধ, তাও আমি জানি না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ধর্মতলায় বেলুন ফোলানোর পরে সিলিন্ডার নিয়ে ওঁকে গাড়িতে তুলে দেওয়ার সময়ও বলি, কোনও সমস্যা হবে না তো? গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে গাড়িতে উঠতে কোনও সমস্যা হবে না বলেই তিনি জানিয়েছিলেন।’’ এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তের কথায়, ‘‘এটি খুব অনভিপ্রেত ঘটনা। তবে আমরা এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও শুধু বিনোদনের বিষয়টিই দেখি।’’