দমদমে যুবক নির্যাতনে ধৃত আরও এক

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ প্রায় নিশ্চিত যে, এই ঘটনার পিছনে আর্থিক কিংবা সম্পত্তিগত বিষয় রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জেনেছে, ২০১০ সালে অনমিত্র বসু নামে নির্যাতিত ওই ব্যক্তির মা-বাবার মৃত্যুর পর থেকেই একটি পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে জট তৈরি হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১১
Share:

আহত অনমিত্র বসু। নিজস্ব চিত্র

এক ব্যক্তির ফ্ল্যাটে ঢুকে ১০ দিন ধরে তাঁকে বেঁধে লুঠপাট, মারধর এবং প্রাণে মারার চেষ্টার অভিযোগে আরও এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। দমদমের অমরপল্লির এই ঘটনায় আগেই তিন জন গ্রেফতার হয়েছিল। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার ধরা পড়া চতুর্থ অভিযুক্তের নাম অনুপকুমার গুহ ওরফে রাজু।

Advertisement

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ প্রায় নিশ্চিত যে, এই ঘটনার পিছনে আর্থিক কিংবা সম্পত্তিগত বিষয় রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জেনেছে, ২০১০ সালে অনমিত্র বসু নামে নির্যাতিত ওই ব্যক্তির মা-বাবার মৃত্যুর পর থেকেই একটি পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে জট তৈরি হয়। আত্মীয়দের একাংশের কোনও প্রোমোটিংয়ের পরিকল্পনা ছিল বলে জেনেছে পুলিশ। কিন্তু তাতে অনমিত্রবাবুর মত প্রয়োজন, যা তিনি দিতে রাজি হননি।

তবে এই ঘটনায় অনেক জায়গায় ধোঁয়াশাও তৈরি হয়েছে বলে জানাচ্ছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, এখনও আতঙ্কের মধ্যে আছেন অনমিত্রবাবু। পুলিশ চাইছে আগে তিনি শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থ হোন। বুধবার রাতেই নাগেরবাজারের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাঁকে। ধীরে ধীরে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতিও হচ্ছে। এর পরে তাঁকে ভাল ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানায় পুলিশ।

Advertisement

ধৃতদের জেরা করে পুলিশ অয়ন ওরফে রাজা নামে এক ব্যক্তির কথা জেনেছে। অনমিত্রবাবু যতটুকু জানাতে পেরেছেন, তাতে তিনিও উল্লেখ করেছেন ওই নামটি। পুলিশ জেনেছে, হুমকির চিঠিতেও রাজার নাম ছিল। স্থানীয় সূত্রের খবর, রাজা ছ’মাস আগে বিধাননগর কমিশনারেটের অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। ধৃত ব্যক্তিরা অনমিত্রবাবুর কাছে কোনও টাকা পেত কি না কিংবা কেউ তাদের ব্যবহার করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে কি না, তা-ও জানার চেষ্টা চলছে।

অনমিত্রবাবুর কথার ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত অগস্টে। রাজা নামে ওই ব্যক্তির থেকে একটি হুমকি চিঠি পান তিনি। তাতে লেখা ছিল, ৬০ হাজার টাকা না দিলে চার জনকে পাঠিয়ে তাঁকে মেরে ফেলা হবে। সেপ্টেম্বরে আরও একটি চিঠি আসে। তখন চিন্তায় পড়ে দমদম পুলিশকে জানান অনমিত্রবাবু।

কিন্তু অভিযোগ, তার পরেই ফ্ল্যাটে ঢুকে অনমিত্রবাবুকে এক ঘণ্টা বেঁধে রেখে চলে অত্যাচার। এর পরে ২৯ অক্টোবর থেকে ১০ দিন ফের অনমিত্রবাবুকে ঘরে বন্ধ রাখে দুষ্কৃতীরা। বাসিন্দারা জানান, রাত সাড়ে ৯টার পরে কয়েক জন যুবককে ঢুকতে দেখা যায়। তাতে সন্দেহ হয় পড়শিদের।

এর পরেই ওই বহুতলের মূল গেটের তালাটি বদলে দেন বাসিন্দারা। মঙ্গলবার এক ব্যক্তিকে তালা খোলার চেষ্টা করতে দেখা যায়। অনমিত্রবাবুর এক পড়শিকেই ওই ব্যক্তি তালা খুলে দিতে অনুরোধ করেন। তাতে সন্দেহ বেড়ে যায় ওই পড়শির। তিনি জানান, অনমিত্রবাবু বাড়িতে আছেন কি না, তা দেখে তালা খুলবেন। এর পরে অনমিত্রবাবুর ফ্ল্যাটে গিয়ে কোনও সাড়া পাননি তিনি। নীচে এসে দেখেন, চলে গিয়েছেন ওই ব্যক্তিও।

এর পরেই খবর দেওয়া হয় পুলিশে।পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তিন যুবককে হাতেনাতে ধরে ফেলে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (২) ধ্রুবজ্যোতি দে জানান, অনমিত্রবাবু একটু সুস্থ হয়ে কথা বললে বেশ কিছু বিষয়ে ধোঁয়াশা কাটবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন