কমলা সিংহ
গ্রামের গণ্ডী পেরিয়ে সালিশি সভার প্রভাব এসে পড়ল খাস কলকাতায়।
অভিযোগ, ‘সালিশি’র নামে এক মহিলাকে মেঝেতে ফেলে মারধর করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার বিকেলে, উল্টোডাঙা থানার দাসপাড়ার গোরাপদ সরকার লেনে। পরে অবশ্য বিবদমান দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে থানায় মারধরের অভিযোগ করেছে। ঘটনাটি তৃণমূলের কোনও স্বীকৃত অফিসে ঘটেনি ঠিকই, তবে স্থানীয় কয়েক জন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন কিছু বাসিন্দা। বিষয়টি জেনেই স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরকে খোঁজখবর নিতে বলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার রাতে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও অফিসের দায়িত্ব নয় সালিশি সভা ডাকা। ওখানে এক বস্তির মধ্যে একটি ঘরে কেউ কেউ ও সব করেছে। তা নজরে এসেছে দলেরও। তাঁদেরকে সাফ বলে দেওয়া হয়েছে, আইন আইনের পথে চলবে। দল এ সব সমর্থন করবে না।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, গোলমালটি একেবারেই পারিবারিক পর্যায়ের। পাঁচ নম্বর গোরাপদ লেনের একই বাড়িতে থাকেন অমিত সিংহ এবং তাঁর কাকা রাজ সিংহ। ওই বাড়িরই একটি ঘরে থাকা নিয়ে তাঁদের দু’জনের বিবাদ অনেক পুরনো। এ মাসের প্রথমেও বা়ড়ির ভিতরেই এক বার হাতাহাতির ঘটনা ঘটে বলে পরিবার সূত্রের খবর। গোলমাল ক্রমশ বাড়তে থাকায় রাজ সিংহের স্ত্রী কমলা সিংহ তৃণমূলের স্থানীয় একাধিক নেতাকে নিজেদের গোলমালের বিষয়টি জানান।
সে দিন কী হয়েছিল?
অমিত সিংহের মা অন্নু সিংহের কথায়, ‘‘১২ অক্টোবর বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ স্থানীয় তৃণমূলকর্মী বলে পরিচিত বাসু দত্ত আমাদের বাড়িতে আসেন। ওই যুবকই জানান, পরিবারের ঝামেলা মেটানোর জন্যে পার্টি অফিসে সকলে অপেক্ষা করছেন। সেখানে আলোচনা করে গোলমাল মিটিয়ে ফেলতে হবে।’’ আসলে সেটি বিধানচন্দ্র রায় সোশ্যাল ক্লাব। তবে তৃণমূলের কয়েক জন নেতার সেখানে আনাগোনা থাকায় সেটিকেই পার্টি অফিস বলে চেনেন এলাকার অনেকেই। প্রথমে তা এড়িয়ে গিয়েছিলেন অন্নু। কিন্তু বারবার অনুরোধ করতে থাকায় বাড়ির পাশেই বিধানচন্দ্র রায় সোশ্যাল ক্লাবে বৌমা অনিতা সিংহকে সঙ্গে নিয়ে যান তিনি। তাঁর অভিযোগ, সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন তাঁর আত্মীয় কমলা সিংহ-সহ জনা ছয়েক মহিলা এবং স্থানীয় বাসিন্দা বাসু দত্ত।
তাঁর অভিযোগ, এর পরেই বিবাদ মেটানোর নামে তাঁর বৌমাকে মেঝেতে ফেলে মারধর করা হয়। এলোপাথারি ঘুষি, লাথি মেরে দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেওয়া হয় অনিতার। মারধর খান তিনি নিজেও। পরে পাড়ার লোকেরাই ওঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ফিরেই উল্টোডাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অন্নু সিংহেরা।
অন্য দিকে কমলা সিংহ স্বীকার করে নিয়েছেন, পরিবারের বিবাদ মেটানোর জন্যে তিনিই এক তৃণমূলকর্মীকে বিষয়টি জানিয়েছেন। কিন্তু অনিতাকে মারধরের ঘটনা একেবারে সাজানো বলে জানান তিনি। উল্টে বলেন, ‘‘অনিতাই আমাকে থাপ্পড় মেরেছে। আমার চুল ছিঁড়ে দিয়েছে। হাতে আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। আমাকে মেরে উল্টে থানায় গিয়ে আমার নামেই অভিযোগ করেছে।’’
অনিতা সিংহ
কিন্তু পারিবারিক ঝামেলা নিয়ে তিনি কেন রাজনৈতিক দলের কাছে গেলেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। কমলার কথায়, ‘‘পা়ড়ার লোকেদের ভুল বুঝিয়ে সকলে মিলে আমাদের বিরোধিতা শুরু করেছে। প্রতিদিনের ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই ওঁদের সাহায্য নিতে হয়েছিল।’’
কিন্তু পরিবারের গোলমালে শাসকদলের কয়েক জন নেতা-কর্মীই বা নাক গলালেন কেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই। যদিও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এ বিষয়ে জানিয়েছেন, ওই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের মন্ত্রী, বিধায়ক এবং কাউন্সিলর কারও যোগ নেই। নীচের দিকের কেউ এটা করে থাকতে পারেন।’’
ডিসি (ইএসডি)-কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন বলেও জানান তিনি। মেয়র বলেন, ‘‘দল এ সব কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবে না। তা অভিযুক্তেরা যে পর্যায়ের কর্মী বা নেতাই হোন না কেন।’’
স্থানীয় কাউন্সিলর অনিন্দ্যকিশোর রাউত জানিয়েছেন, ওই ঘটনা দলের কোনও অফিসে হয়নি। দল তা সমর্থনও করে না। ব্যক্তিগত ভাবে কেউ তা করে থাকলে পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিক। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, বাসু দত্ত-সহ সব অভিযুক্তেরা পলাতক। তদন্ত শুরু হয়েছে।