পরমা উড়ালপুলে যানজট-জটিলতা থেকে আশু মুক্তির রাস্তা এখনও মেলেনি। কিন্তু এর থেকে শিক্ষা নিয়ে যানজট এড়াতে ইতিমধ্যেই বজবজ ট্রাঙ্ক রোডের প্রস্তাবিত উড়ালপুলের দৈর্ঘ্য বাড়ানোর কথা হচ্ছে। সূত্রের খবর, আংশিক ভাবে বদলানো হবে নকশা। এ নিয়ে কথা বলতে আজ মঙ্গলবার নির্মাতা সংস্থা, তদারককারী সংস্থা এবং কলকাতা পুরসভার পদস্থ অফিসারেরা বৈঠকে বসছেন।
গত বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বজবজ-জিঞ্জিরাবাজার উড়ালপুলের শিলান্যাস করেন। যৌথ উদ্যোগে (পিপিপি) সাড়ে আট মিটার চওড়া এই প্রকল্পের ন্যূনতম এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা হবে যথাক্রমে সাড়ে পাঁচ মিটার এবং আট মিটার। টেন্ডারে জেএনএনইউআরএম-প্রকল্পে এর খরচ ধরা হয়েছিল আনুমানিক ৩৫০ কোটি টাকা। কেন্দ্র অনুমোদন দিয়েছে ২৪৮ কোটি টাকার। যার মধ্যে ৩৫ শতাংশ বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বাকিটা দেবে প্রকল্প তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থা ‘বজবজ ট্রাঙ্ক রোড এলিভেটেড রোড প্রাইভেট লিমিটেড।’ এই সংস্থা পরে উড়ালপুলের উপর দিয়ে যাতায়াতকারী গাড়ির থেকে টোল আদায় করবে। এ নিয়ে ওই সংস্থার সঙ্গে রাজ্য সরকারের ৩২ বছরের চুক্তিও হয়েছে।
প্রাথমিক পরিকল্পনায় উড়ালপুলটির পূর্ব মুখ যাওয়ার কথা ছিল তারাতলা রোড পর্যন্ত। প্রস্তাবিত দৈর্ঘ্য ছিল ৭.৪ কিলোমিটার। পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা এড়াতে এটি জিঞ্জিরাবাজার মোড় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা হয়। সে ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য কমে হয় ৭ কিলোমিটার। নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ভাবে প্রকল্পটি রূপায়িত হলে পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়ের জটে পরমা উড়ালপুলের যে রকম নাভিশ্বাস উঠছে, তেমনই অবস্থা হবে বজবজ-জিঞ্জিরাবাজার উড়ালপুলের। সমস্যা এড়ানোর চেষ্টায় এখন ভাবা হচ্ছে উড়ালপুলটির দৈর্ঘ্য আরও বাড়িয়ে এর মুখ নামানো হবে বজবজ রোডে।
কেন উড়ালপুল তারাতলা রোড পর্যন্ত নেওয়া গেল না? কেএমডিএ-র এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘তারাতলা রোড ও সংলগ্ন বেশ কিছু অংশে মাটির তলায় গার্ডেনরিচের জলাধার ও সিইএসসি-র সংযোগ রয়েছে। পরিষেবা অক্ষুন্ন রেখে এগুলো প্রতিস্থাপন খুবই কষ্টকর। দ্বিতীয়ত, ওই অংশের মালিকানা মূলত কলকাতা বন্দরের। সেখানে উড়ালপুলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি লিজ দরকার। কেন্দ্রের কাছ থেকে তা পেতে সমস্যা হচ্ছে।’’ তাই বাধ্য হয়ে উড়ালপুলের মুখ জিঞ্জিরাবাজারে নামানোর কথা হচ্ছিল। উড়ালপুল নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থার মুখ্য পরামর্শদাতা বাস্তুকার দেবদাস ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘প্রকল্পের নকশা কিছুটা বদলানো দরকার।’’
কিন্তু উড়ালপুলের মুখ বজবজ রোডে নামানোর মতো জমি আছে কি? মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাস বলেন, ‘‘ওখানে বেশ কিছু খাস জমি এবং পূর্ত দফতরের জমি আছে। তাই সমস্যা হবে না।’’ রবিবার তিনি নিজে পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়ের দশা দেখে এসেছেন। তাঁর দাবি, পার্ক সার্কাসের ওই মোড় লাগোয়া যতগুলো রাস্তা থেকে গাড়ি যাতায়াত করছে, বজবজের মোড়ে সেই সমস্যা ও চাপ নেই। তিনি বলেন, ‘‘কাল কেএমডিএ-র সঙ্গে উড়ালপুল-সহ নানা প্রকল্প নিয়ে কথা হবে। ওদের বলব এই উড়ালপুলটি আরও সতর্ক হয়ে করতে।’’