স্কুল ছাড়িয়ে আঁচ পৌঁছল রাজপথেও

স্কুলের মধ্যেই চার বছরের এক ছাত্রীর যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর সামনে রাস্তা আটকে রাখেন এ দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত। সকালে কিছুক্ষণের জন্য অবরোধ করেন রানিকুঠি মোড়ও। সেই সঙ্গে চলে দীর্ঘ মিছিল, স্লোগান, রাস্তায় বসে অবস্থান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৭
Share:

প্রতিবাদের ঢেউ পৌঁছল টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর সামনেও। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

স্কুলের চৌহদ্দিতে আর সীমাবদ্ধ থাকল না অভিভাবকদের তীব্র ক্ষোভ। রানিকুঠির ওই গণ্ডী ছেড়ে রবিবার তা পৌঁছে গেল রাজপথেও। অভিভাবকদের ক্ষোভের মুখে একাধিক বার পড়তে হল ডেপুটি কমিশনার ও অন্য পুলিশকর্তাদের।

Advertisement

স্কুলের মধ্যেই চার বছরের এক ছাত্রীর যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর সামনে রাস্তা আটকে রাখেন এ দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত। সকালে কিছুক্ষণের জন্য অবরোধ করেন রানিকুঠি মোড়ও। সেই সঙ্গে চলে দীর্ঘ মিছিল, স্লোগান, রাস্তায় বসে অবস্থান। একটাই দাবি, বিচার চাই। পুলিশের বিভাগীয় ডেপুটি কমিশনার খোদ অবরোধ তুলতে একাধিক বার অনুরোধ করলেও, অন্য অফিসারেরা বারবার মাইকে অবরোধ তুলে নিতে বললেও অভিভাবকেরা কর্ণপাত করেননি। বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া অবরোধ চলে বিকে ল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত। এমনকী, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁর নাকতলার বাড়িতে নির্যাতিতার বাবা ও কিছু অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে তাঁদের ডাকেন এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ। কিন্তু তাঁরা মিছিল, বিক্ষোভ ছেড়ে যাননি।

ইতিমধ্যেই জানা যায়, ধৃতদের স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। স্কুলটি যে সংস্থার অধীন তার মুখপাত্র সুভাষ মোহান্তি বলেন, ‘‘যে সংস্থা থেকে ওই দু’জনকে নেওয়া হয়েছিল, তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়েছে। ফলে ওই দু’জন বরখাস্ত হয়ে যাবেন।’’ তাতেও অবশ্য অভিভাবকদের ক্ষোভ মেটেনি।

Advertisement

আরও পড়ুন: ক্লাস বন্ধ, খবর ছড়াতেই বাড়ল ক্ষোভ

ওই বিক্ষোভ-অবরোধের জেরে দীর্ঘক্ষণ টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দিয়ে দক্ষিণ ও উত্তরগামী যান চলাচল বন্ধ থাকে। বিস্তর দুর্ভোগে পড়েন মানুষ। যদিও রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় সমস্যা তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে।

আজ, সোমবার সকাল ৭টা থেকে অভিভাবকেরা স্কুলের সামনে ফের অবস্থান বিক্ষোভে বসবেন।

বেহালার এম পি বিড়লা ফাউন্ডেশন হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে সেপ্টেম্বর মাসে তিন বছরের যে শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তাঁর মা-ও এ দিন টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোয় অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হয়ে বক্তব্য পেশ করেন। স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের অভিভাবকদের ফোরামের সদস্যেরা এ দিনও সহমর্মিতা জানাতে আসেন।

এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি মতো স্কুলের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন বাবা-মায়েরা। হাজার খানেক মানুষের জমায়েত হয়েছিল। ঠিক ছিল স্কুলের সদর ফটকেই অভিভাবকদের একটি ফোরাম তৈরি হবে। সেটা তৈরিও হয় এবং তার যুগ্ম আহ্বায়ক হন সঞ্জয় ভট্টাচার্য ও মানসী মুখোপাধ্যায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সোমবার থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্কুল বন্ধ করার খবরে অভিভাবকদের ক্ষোভ আরও বাড়ে।

লোয়ার ইনফ্যান্ট ও চতুর্থ শ্রেণির দুই ছাত্রীর বাবা, নবীন অগ্রবাল নির্যাতিতার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেও তিনি বলেন, ‘‘এখন আমাদের কাঁদার সময় নয়। দেখুন, বাবা হয়েও আমি কাঁদছি না।’’

এর পরে অধ্যক্ষার গ্রেফতার ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসার দাবিতে বেরোনো মিছিলের সামনে থাকেন নির্যাতিতার বাবা-ই। সকাল পৌনে ১১টায় মিছিল রানিকুঠিতে পৌঁছলে সেখানে ১০ মিনিটের জন্য অবস্থান হয়। রাস্তায় গোল হয়ে বসে পড়েন অভিভাবকেরা। এর পরে মিছিল করে তাঁরা টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর সামনে গিয়ে রাস্তা আটকে অবস্থান করেন।

ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের যাদবপুর ডিভিশনের ডিসি রূপেশ কুমার জানান, সোমবার দুপুর ২টোয় আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের অডিটোরিয়ামে তাঁদের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসবেন। কিন্তু পুলিশের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন অভিভাবকেরা। উল্টে ডিসি-কে ঝাঁঝিয়ে বলেন, ‘‘আপনার মেয়ের সঙ্গে এমন ঘটলে কী রকম মনের অবস্থা হত, সেটা ভাবুন। আমরা রাস্তায় বসতে পারলে স্কুল কর্তৃপক্ষ এখানে আসতে পারবেন না কেন?’’ সঙ্গে থাকা অনেকেই বললেন, পুলিশের সঙ্গে কোনও কথা নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন