চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে ফের চিকিৎসকদের উপরে চড়াও হয়ে মারধর ও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠল। বুধবার রাতে, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পুলিশ জানায়, ঘটনায় এক মহিলা-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এই ঘটনার পরেই নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভে সামিল হন জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুধবার রাত দে়ড়টা নাগাদ তপসিয়া সেকেন্ড লেনের বাসিন্দা শেখ আরশাদকে (৫০) গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে আসা হয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সৈয়দ রফি আহমেদ তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ভর্তির সুপারিশ করেন। ভর্তির জন্য নিয়ে ওয়ার্ডে যাওয়ার সময়েই মৃত্যু হয় শেখ আরশাদের। অভিযোগ, এর পরেই রোগীর পরিবারের জনা বারো সদস্য জরুরি বিভাগে ঢুকে পড়েন। চিকিৎসায় দেরির কারণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে তাঁরা সেখানে গোলমাল শুরু করেন। বচসার মাঝেই সৈয়দ রফি আহমেদের উপরে চড়াও হন রোগীর পরিজনেরা। দুই জুনিয়র চিকিৎসক আসিফ আয়ুব এবং সৌরভ মজুমদার তাঁকে বাঁচাতে এলে তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, চিকিৎসকদের চড়, ঘুষির পাশাপাশি চেয়ার তুলেও মারা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষী এবং পুলিশে পৌঁছলে অভিযুক্তেরা পালিয়ে যান। তবে ঘটনাস্থল থেকেই পুলিশ হাবিব বক্স ওরফে রাজা এবং মহম্মদ সিরাজ আহমেদ নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে। পরে গ্রেফতার করা হয় রোগীর আত্মীয়া শাহজাদা বেগমকেও।
বৃহস্পতিবার নিরাপত্তার দাবিতে এমবিবিএস-এর প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা দফায় দফায় জরুরি বিভাগের সামনে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের ক্ষোভ, চিকিৎসকদের উপরে চ়়ড়াও হওয়ার ঘটনা ঘটলে তবেই পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ে। কিন্তু কিছু দিন পরে তাঁদের ফের গোলমালের মুখে পড়তে হয়। তাই কর্মক্ষেত্রে স্থায়ী নিরাপত্তা না থাকলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলন করবেন বলে হুমকিও দেন। এ দিন দুপুরে মৃতের পরিজনেরা হাসপাতালে গিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের কাছে ক্ষমা চান এবং অভিযোগ তুলে নেওয়ার আর্জিও জানান। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। পরে অবশ্য পরিজনেরা দেহ নিয়ে চলে যান।
এ দিনই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুলিশের কর্তারা নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক করেন। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান শান্তনু সেন জানান, বৈঠকে স্থির হয়েছে হাসপাতালের নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়াও দশ জন পুলিশকর্মী থাকবেন। বুধবার রাতের অভিজ্ঞতার পরে হাসপাতাল চত্বরে মহিলা পুলিশকর্মীও মোতায়েন করা হবে। পাশাপাশি, রোগীর পরিজন হিসাবে একাধিক ব্যক্তির জরুরি বিভাগে ঢোকা বন্ধ করার বিষয়েও এ দিন পরিকল্পনা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, নিরাপত্তার আশ্বাস পাওয়ার পরে জুনিয়র ডাক্তারেরা বিক্ষোভ কর্মসূচি বাতিল করেন।