রক্তের উপাদান মেলেনি পুজোয়, বিপাকে রোগীরা

সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রয়োজনীয় রক্তের উপাদান না মেলায় অস্ত্রোপচারই বাতিল হতে বসেছিল। শেষ পর্যন্ত বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে ২৪০০ টাকার বিনিময়ে লোহিত রক্তকণিকা (আরবিসি) কিনতে বাধ্য হলেন এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন রোগীর পরিজনেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:৩২
Share:

প্রতীকী ছবি।

রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর প্রয়োজন ছিল প্লেটলেটের। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ (সিএমসি) হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তা দিতে অস্বীকার করায় বুধবার মেজাজ হারান ওই রোগীর পরিজন।

Advertisement

সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রয়োজনীয় রক্তের উপাদান না মেলায় অস্ত্রোপচারই বাতিল হতে বসেছিল। শেষ পর্যন্ত বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে ২৪০০ টাকার বিনিময়ে লোহিত রক্তকণিকা (আরবিসি) কিনতে বাধ্য হলেন এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন রোগীর পরিজনেরা। ডেঙ্গির মরসুমে রক্তের উপাদান নিয়ে এই হয়রানি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মীদের। যার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তার পাল্টা বক্তব্য, ‘‘রক্তদানের শিবির কোথায়! পুজোর মরসুমে যাঁরা শিবির করেন তাঁরা হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন। একাধিক শিবির বাতিল হয়েছে। শিবির না হলে উপাদানের জোগান কী ভাবে সম্ভব?’’

গত এক মাস ধরে সিএমসি-তে চিকিৎসাধীন মানিকতলার মুরারিপুকুরের বাসিন্দা বছর চল্লিশের রুবি ঘোষ। বুধবার রুবির দেওর সন্দীপ ঘোষ জানান, তাঁর বৌদির চিকিৎসায় প্রতিদিন গড়ে তিন ইউনিট প্লেটলেট লাগে। এ দিন ‘বি পজিটিভ’ গ্রুপের পাঁচ ইউনিট প্লেটলেটের রিক্যুইজিশন দিয়েছিলেন চিকিৎসক। সন্দীপের অভিযোগ, ‘‘ব্লাড ব্যাঙ্কে এক

Advertisement

ইউনিটের বেশি প্লেটলেট দিতে চায়নি। বলছে স্টক নেই। স্টক যে নেই, তা লিখে দেওয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাই।’’ অভিযোগ, ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা তাতেও রাজি হননি। এর পরেই মেজাজ হারান সন্দীপ। তাঁর বক্তব্য, ‘নো স্টক’ লিখে দিলে তা দেখিয়ে অন্য সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে প্লেটলেট পাওয়া যায়। তা না হলে বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। গন্ডগোলের পরে অবশ্য সিএমসি-র ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ‘নো স্টক’ লিখে দেন।

অন্য দিকে, এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন যুবক বাবু ষাঁড়ের ক্ষেত্রে সন্ধ্যার মধ্যে চার ইউনিট আরবিসি না মিললে পিত্তথলির অস্ত্রোপচার বাতিল করতে হবে বলে মঙ্গলবার দুপুরে জানিয়ে দেন চিকিৎসকেরা। এসএসকেএম-এর ব্লাড ব্যাঙ্ক ‘নো স্টক’ লিখে দিলে মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে দুই ইউনিট ‘ও পজিটিভ’ গ্রুপের আরবিসি পাওয়া যায়। ২৪০০ টাকা খরচ করে আরও দুই ইউনিট আরবিসি কেনেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা, বাবুর ভাই সুজন ষাঁড়।

রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের সদস্য অচিন্ত্য লাহার মতে, পুজোর মরসুমে এমনিতেই রক্তদান শিবির কম হয়। এর উপরে পরিকাঠামোগত ত্রুটির কারণে রক্তের উপাদান পেতে সমস্যায় পড়ছেন রোগীর পরিজনেরা। অচিন্ত্যর কথায়, ‘‘ডেঙ্গি-সহ অন্য রোগের কথা মাথায় রেখে ২৪ ঘণ্টার ব্লাড ব্যাঙ্ক চালু হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা রক্তের উপাদান তৈরির ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের চিঠি দিয়েছি।’’

রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী দীপঙ্কর মিত্রের অভিযোগ, ‘‘অনেক সময়ে রক্তের উপাদান মজুত থাকলেও স্টক নেই বলে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মুখে বললেও ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা ‘নো স্টক’ লিখছেন না। খাতায়-কলমে পর্যাপ্ত রক্ত মজুত রয়েছে

দেখাতে গিয়ে বাস্তব পরিস্থিতি অস্বীকার করা হচ্ছে।’’

স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সন্ধ্যার পরে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে রক্তের উপাদান অমিল হচ্ছে, তা-ও ঠিক নয়। প্লেটলেট ছাড়া রক্তের আর কোনও উপাদানের ঘাটতি নেই।’’ প্লেটলেটের ঘাটতি প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, এই মুহূর্তে ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীরা তাঁদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছেন। ওই কর্তার কথায়, ‘‘ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী প্লেটলেট না পেলে দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হবে। রক্তদান শিবির যেহেতু সে ভাবে হচ্ছে না, তাই প্লেটলেটের অভাব রয়েছে। আমাকে শিবির দিন, আমি প্লেটলেট দেব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন