আলিপুর, কাশীপুরের পর পাটুলি। ফের তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে হামলা ও মারধরের অভিযোগ। তোলা না পেয়ে লাঠি-বাঁশ-রড নিয়ে হামলা চালানো হয় বলে আক্রান্ত প্রোমোটারের দাবি। অভিযোগ পেয়েও ১০১ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক বিশ্বজিত্ সরকারের কেশাগ্র স্পর্শ করার সাহস হচ্ছে না কলকাতা পুলিশের। এই গোলমালেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া রয়েছে, খবর স্থানীয় সূত্রে।
পুলিশের একাংশ দাবি করছে, আসলে লালবাজারের শীর্ষকর্তাদের নির্দেশেই বিশ্বজিত্ সরকারকে গ্রেফতার কর হচ্ছে না। এতেই শেষ নয়। বিশ্বজিত্ ওরফে শম্ভু আদালতে আগাম জামিনের আবেদন জানালে সরকারি কৌঁসুলি যাতে জামিনের তেমন বিরোধিতা না করেন, তার ব্যবস্থাও নাকি লালবাজার থেকেই করা হচ্ছে।
কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ শহরতলি) সন্তোষ পাণ্ডে জানিয়েছেন, পাটুলির প্রোমোটার নারায়ণ সাহাকে মারধরের ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে। সব অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করা হবে, আশ্বাস সন্তোষ পাণ্ডের।
লালবাজারের একটি অংশ কিন্তু অন্য কথা বলছে। তাঁদের দাবি, এখন শাসকদলের কোন নেতার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উঠলে প্রথমেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করাই কলকাতা পুলিশে দস্তুর হয়ে উঠেছে। তদন্তে ঢিলেমি দিয়ে আজকাল পুলিশ শাসক দলের ঘনিষ্ঠ অভিযুক্তদের কিছুটা সময় পাইয়ে দিচ্ছে, যাতে তারা আদালত থেকে আগাম জামিন নিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে পুলিশের একাংশ আলিপুরে পুলিশকে মারধরের ঘটনার কথা তুলে ধরছে। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহাকে গ্রেফতার না করে জামিন পেতে সাহায্য করেছিল পুলিশ, অভিযোগ পুলিশ মহলেরই কারও কারও। উদাহরণ আরও রয়েছে. দক্ষিণ শহরতলী সন্তোষপুরে ট্রাফিক পুলিশের এক অফিসারকে মারধরের অভিযোগ ওঠে যে তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে, তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়নি। পরে আদালতে পুলিশের তরফে ওই কাউন্সিলরের জামিনের আবেদনের কোনও বিরোধিতাও করা হয়নি। সহজেই জামিন পান অভিযুক্ত কাউন্সিলর।
গত এক বছরে আলিপুরের তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহার বিরুদ্ধে দু’বার পুলিশকে আক্রমণের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু কোনও বারই তাঁকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। প্রথমবার গত নভেম্বরে। আলিপুরে জেলাশাসকের দফতরের পিছনে সরকারি জমি থেকে ঝুপড়ি উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে হওয়া গোলমালে আলিপুর থানায় দলবল নিয়ে চড়াও হন প্রতাপ সাহা। পুলিশ কর্মীদেরও মারধর করা হয়। পরে কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন গোপালনগরে একটি সমাবেশে মঞ্চ ভেঙে দেওয়া ও বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে নিগ্রহের ঘটনায়ও প্রতাপবাবুর নাম জড়ায়। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের উপরে হামলায় ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত করে প্রতাপকে। প্রথম ঘটনায় পুলিশ তাকে অভিযুক্তই করেনি। আর দ্বিতীয় ঘটনায় সরকারি আইনজীবী বিরোধিতা না করায় আদালতে থেকে সহজেই জামিন পান প্রতাপ।
কলকাতা পুরভোটের আগের দিন কাশীপুরে প্রকাশ্যে গুলি-বোমা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল সেখানকার দুই তৃণমূল নেতা স্বপন চক্রবর্তী এবং আনোয়ার খানের দলবলের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার পর ছ’মাস পার হলেও তাদের গ্রেফতার করার সাহস দেখায়নি পুলিশ। অভিযোগ, অভিযুক্তরা সকলেই শাসকদলের নেতা হওয়াতে পুলিশ তাঁদের টিকি ছুয়ে দেখেনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, পাটুলির বাসিন্দা ও প্রমোটার নারায়ণ সাহার কাছে তোলা চেয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিশ্বজিৎ সরকার ও তাঁর অনুগামীরা। অভিযোগ, টাকা না পেয়ে গত ২ অক্টোবর রাতে বিশ্বজিৎ ও তাঁর দলবল এসে প্রথমে নারায়ণ বাবুকে থাপ্পড় মারে। তার পর মাটিতে ফেলে লোহার রড ও বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, নারায়ণবাবুর অভিযোগ পেয়ে ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকারের অনুগামী পিকেন্দু পাল ও বিকাশ দে-কে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু বিশ্বজিৎ সরকার, সুমিত দত্তের মতো বাকি অভিযুক্তরা ফেরার।
লালবাজারের একাংশ জানাচ্ছেন, পাটুলির ঘটনায় দুই পক্ষই শাসকদলের ঘনিষ্ঠ। অভিযোগকারী শাসক ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার। আর অভিযুক্তরা সকলেই স্থানীয় কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের ঘনিষ্ঠ। শাসকের ঘরোয়া কোন্দল সামলাতে গিয়ে পুলিশের অবস্থা এখন শ্যাম রাখি না কুল রাখি।
পাটুলির ঘটনার তদন্তের ভার যে অফিসারদের হাতে, তাঁরা অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁরা বলছেন,‘‘অভিযোগ মেলার পরেই দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তের খোঁজে শুক্রবার রাতে ও বিভিন্ন জায়গাতে তল্লাশি হয়েছে।’’