ব্রিগেড আচারে মিলে গেল আমরা-ওরা

বাম বা ডান— যে আদর্শেরই পথিক হোন না কেন, ব্রিগেডে এলে সকলেই যেন পথ ভুল করেন। ১৯ জানুয়ারির পরে ৩ ফেব্রুয়ারিও দেখা গেল, জনস্রোতের চাপ বা বাঁধভাঙা আদর্শবোধের দোহাই দিয়ে অবাধে রাস্তা পেরোচ্ছেন ব্রিগেডমুখীরা। ট্র্যাফিক সিগন্যাল মানার বা যানজটের পরোয়া করার কোনও ব্যাপারই নেই!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:১১
Share:

ছবিঘর: ওয়াই চ্যানেলে সমর্থকদের আবির খেলা। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

স্বভাব যায় না সভায় এলে!

Advertisement

বাম বা ডান— যে আদর্শেরই পথিক হোন না কেন, ব্রিগেডে এলে সকলেই যেন পথ ভুল করেন। ১৯ জানুয়ারির পরে ৩ ফেব্রুয়ারিও দেখা গেল, জনস্রোতের চাপ বা বাঁধভাঙা আদর্শবোধের দোহাই দিয়ে অবাধে রাস্তা পেরোচ্ছেন ব্রিগেডমুখীরা। ট্র্যাফিক সিগন্যাল মানার বা যানজটের পরোয়া করার কোনও ব্যাপারই নেই! সভা শেষে তাঁরা ফিরলেনও সে ভাবেই। আবার খাওয়া শেষে দিগ্বিদিক জ্ঞানহীন হয়ে আবর্জনা, উচ্ছিষ্ট ফেলে গেলেন ময়দানে। এক সময়ে ময়দান চত্বর ছেড়ে ব্রিগেডের জঞ্জাল-যন্ত্রণা পৌঁছে গেল পার্ক স্ট্রিট, ধর্মতলা পর্যন্ত। পথচারীদের তখন পায়ে পায়ে উচ্ছিষ্টই ভরসা। পুরনো চেনা ছবি দেখা গেল, যত্রতত্র শৌচকর্মের ক্ষেত্রেও! বড় পুরনো গাছ বা ঝোপ-জঙ্গল দেখলেই অবলীলায় দাঁড়িয়ে পড়লেন ব্রিগেডে আগতেরা। দলীয় নেতা-নেত্রীর ‘সাবধানবাণী’ও কাজে লাগল না।

রবিবারের ব্রিগেড-সভার বহু আগে থেকে বাম নেতারা বলে চলেছেন, এ ব্রিগেড ডেকে আনার ব্রিগেড নয়। যাঁরা আসবেন, তাঁরা ‘কমিটেড’! এ দিন সকাল থেকে বাম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সেই ‘নিয়মানুবর্তিতা’র ভাবের অভাব ছিল না। তবে তাল কাটল দুপুর সাড়ে ১২টার পরে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ধরে হেঁটে আসতে থাকা মিছিল বল্গাহীন হয়ে পড়ল ধর্মতলা ওয়াই চ্যানেলের কাছে। সিগন্যাল থাকলেও জোর করে গাড়ি থামিয়ে মিছিল নিয়ে ঢুকে পড়লেন বাম নেতারা। শুরু হল আবির খেলা। এক কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীকে এই সময়ে বলতে শোনা গেল, ‘‘যেন জিতেই গিয়েছে!’’ বাঁধভাঙা এই আনন্দে সঙ্গী হল, খোল করতাল হাতে নাচও।

Advertisement

পাতালে মেট্রোয় উঠে আবার ব্রিগেডমুখীদের হুড়োহুড়িতে নাজেহাল হলেন অন্য যাত্রীরা। একের পিঠে তিন জন ওঠার তৎপরতায় বহু মেট্রোর দরজা বন্ধ করতে সময় লেগে গেল বেশ কিছু ক্ষণ। ভিড়ের একই উগ্রতা দেখা গেল শিয়ালদহ, বিধাননগর এবং দমদম রেল স্টেশনেও। যা দেখে গত ১৯ জানুয়ারির তৃণমূলের ব্রিগেডের সঙ্গে অমিল পাওয়া কষ্টকর।

পড়ে রয়েছে খাবারের উচ্ছিষ্ট ও থালাবাটি। বাবুঘাট চত্বরে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

দুপুর দেড়টা নাগাদ ময়দানে ঢুকে দেখা গেল, সে যেন এক উচ্ছিষ্টের রাজ্য! যত্রতত্র পড়ে রয়েছে আধ-খাওয়া কলার খোসা, প্লাস্টিক, ছেঁড়া রুটি, ডিম-ভাত! ১৯ জানুয়ারির মতো সংগঠিত ভাবে গণ খাওয়া-দাওয়া না চললেও নিজের নিজের এলাকার নেতার ব্যবস্থা করা খাবার হাতে ময়দান মাতালেন অনেকে। খাওয়া শেষে সেগুলি ফেলেও গেলেন পুরনো স্বভাব মতোই। শুধু খাবার নয়, ঘাড়ে করে গোটা রাস্তা বাম কর্মীদের বয়ে আনা কাস্তে হাতুড়ির ‘রেপ্লিকা’ও বিকেলের পরে ঠাঁই পেল ময়দান লাগোয়া পরিত্যক্ত বিদ্যুতের মিটার বক্সের উপরে।

বদলাল না ব্রিগেডমুখী জনতার কলকাতা ঘুরে দেখার পুরনো রেওয়াজও। বেলা বাড়তেই ময়দানের থেকে কিছুটা করে ভিড় সরতে শুরু করল আশপাশের পার্কগুলিতে। চিড়িয়াখানা, তারামণ্ডলের পাশ দিয়ে রবীন্দ্রসদন, মোহরকুঞ্জও বাদ গেল না এ দিন। মুর্শিদাবাদ থেকে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে ব্রিগেডে এসেছেন রহমত হোসেন। তিনি অবশ্য বললেন, ‘‘আমরা ওঁদের মতো রাস্তা থেকেই খাওয়া শেষ করে চলে যাইনি। নেতাদের কথা শুনেছি। শেষের কিছুটা আগে বেরিয়ে এসেছি।’’ এ ক্ষেত্রেও ব্রিগেডের চেনা ছবি বদলাল না!

ময়দান জুড়ে পোশাক, জুতো, ঘড়ি, টুপির বেচা-কেনাও চলল ‘নিয়ম’ মতোই। রেড রোডের দিকে নেহরু কোট ১২০ টাকায় কিনতে ব্যস্ত এক কর্মীকে দেখে নেতার কড়া প্রশ্ন, ‘‘মঞ্চে কী নিয়ে কথা বলা হচ্ছে বল তো?’’ কিছু ক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থেকে কর্মীর উত্তর, ‘‘জ্যাকেটগুলো ভাল, এত কমে পাব না। নিয়ে নিচ্ছি!’’

১৯-এর বাবুঘাটের চেনা ছবি দেখা গেল এ দিনও। গঙ্গাসাগর মেলা মাঠে বাস রেখে গামছা-কাপড় নিয়ে বেশির ভাগই ছুটলেন বাবুঘাটে স্নান করতে। তার পরে ১০, ২০, ৩০ টাকায় পুরনো প্লাস্টিকের বোতল কিনে, তাতে গঙ্গাজল ভরে ব্রিগেডমুখী হলেন অনেকেই। প্রশ্ন করায় বললেন, ‘‘বারবার কলকাতায় আসা হবে না, তাই গঙ্গাজল ভরেই নিলাম। গঙ্গাস্নান মুখ্য নয়, ব্রিগেডে আসাই আসল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন