‘ওঁরা চাইবেন ভোট, আমরা দুর্গন্ধ-মুক্তি’

বিষয়টি প্রশাসনের নজরে থাকলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বাজার কমিটি বলছে, বারবার বলেও প্রশাসনের সাহায্য পায়নি তারা। ময়লা সাফ করতে সম্প্রতি ব্যবসায়ীরা নিজেরা মিলে একটি ‘ডাম্পিং স্পেস’ তৈরি করেছেন। তবে তা এখনও কাজে লাগানো যায়নি।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৯ ০৩:১০
Share:

বিসদৃশ: হাসপাতাল ও বাঘা যতীন বাজারের মাঝে এ ভাবেই পড়ে থাকে আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র

ভরা গ্রীষ্মেও কাদা-জলে গোড়ালি ডুবে যায়। মাছের আঁশ, কানকো, থার্মোকলের বাক্স স্তূপ হয়ে থাকে সর্বত্র। সঙ্গে যোগ হয়, আশপাশের এলাকা থেকে ফেলে যাওয়া আবর্জনা জমে স্তূপ হয়ে রয়েছে।— বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন বাঘা যতীন বাজারের এখন এমনই দুর্বিষহ অবস্থা বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরো কমিটির অন্তর্গত। স্থানীয় বরো চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত নিজেই বলেন, ‘‘অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে পাঁচিল চুঁইয়ে কাদা-জল হাসপাতালের ভিতরে ঢুকছে বলে অভিযোগ আসছে।’’

Advertisement

বিষয়টি প্রশাসনের নজরে থাকলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বাজার কমিটি বলছে, বারবার বলেও প্রশাসনের সাহায্য পায়নি তারা। ময়লা সাফ করতে সম্প্রতি ব্যবসায়ীরা নিজেরা মিলে একটি ‘ডাম্পিং স্পেস’ তৈরি করেছেন। তবে তা এখনও কাজে লাগানো যায়নি। বাজার কমিটি বলছে, ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় নেতা-নেত্রীরা সময় দিতে পারছেন না। তাই ‘ডাম্পিং স্পেস’ উদ্বোধন করানো যায়নি। অগত্যা ময়লা জটেই আটকে রয়েছে দক্ষিণ শহরতলির ওই গুরুত্বপূর্ণ বাজার।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এই বাঘা যতীন বাজার প্রায় ৭০ বছরের পুরনো। রিফিউজি অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে বাজারটি তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে বাজারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন প্রায় ৪৫০ জন ব্যবসায়ী। রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক রোড দিয়ে ওই বাজারে ঢুকতেই বাঁ দিকে রয়েছে বাঘা যতীন হাসপাতাল। শুক্রবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, বাজারে ঢোকার মুখেই পড়ে মৃত কুকুর। বাজারের এক কর্মীকে জিজ্ঞেসা করে জানা গেল, এ দিন সকালেই বাজারে মাছের লরি ঢোকার সময়ে চাকায় পিষে দিয়েছে কুকুরটিকে। সাফাইকর্মীরা মৃতদেহটি এখনও নিয়ে যাননি? বাজারের কর্মীর জবাব, ‘‘ভিতরে ঢুকে দেখুন আরও অনেক কিছু পাবেন।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কয়েক পা এগিয়েই দেখা গেল, বাজারের গেটের মুখে সার দিয়ে লরি দাঁড়িয়ে। কাদা জলে গোড়ালি ডুবে যায়। বাঁ দিকেই বাঘা যতীন হাসপাতালের পাঁচিল। পাঁচিলের গা ঘেঁষা ছবিটা দেখলে মনে হয় যেন ধাপার মাঠের ডাম্পিং গ্রাউন্ড! ময়লা-আবর্জনা ছিঁড়ে খাচ্ছে কুকুরের দল। দুর্গন্ধ নাকে আসছে দূর থেকেই। রাস্তা থেকে অপেক্ষাকৃত নিচু বাজারের মধ্যেও কাদা জল থইথই করছে! এমন অবস্থা কেন? এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘আগে অবস্থা আরও খারাপ ছিল। এখন তো অনেক ভাল দেখছেন!’’

বাঘা যতীন বাজার কমিটির সম্পাদক সুব্রত দাস অবশ্য বলছেন, ‘‘এটা এই তল্লাটের সব থেকে বড় পাইকারি মাছবাজার। তবে বাজারের অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। বহু নেতাদের কাছে গিয়েছি, কোনও সাহায্য পাইনি। নিজেরাই তাই প্রায় ১১ লক্ষ টাকা খরচ করে ডাম্পিং স্পেস বানিয়েছি। তবে উদ্বোধন করা যায়নি। আর অপেক্ষা না করে ওখানেই ময়লা ফেলব ভাবছি। কিন্তু, জায়গা করতে পারলেও ময়লা তো আমরা তুলতে পারি না! সে কাজে অন্তত পুরসভা সাহায্য করুক।’’

এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। সেখানকার আরএসপি কাউন্সিলর দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘নিজেরা গিয়ে দেখে এসেছি আমরা। বরো চেয়ারম্যানও গিয়েছিলেন। ভোট মিটলে বিষয়টি দেখা হবে।’’ বরো চেয়ারম্যান তপনবাবু অবশ্য বললেন, ‘‘পুরসভা ময়লা ফেলতেই পারে। কিন্তু, পুরসভাকে ওই বাজারের ব্যবসায়ীরা ময়লা সাফ করার টাকাই দেন না।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য এই ‘কথার কথা’য় কান দিচ্ছেন না। তাঁরা বরং আশাবাদী, এই ভোটের সময়ে বাজারের চেহারা ফিরলেও ফিরতে পারে। তাঁদের কথায়, ‘‘ভোট চাইতে আসা সব দলের প্রার্থীর থেকে আমরা দুর্গন্ধের মুক্তি চাইব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন