Durga Puja 2020

করোনার গ্রাসে পুজো, অপেক্ষা আগামী শারদীয়ার

প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় ক্যালিফর্নিয়া থেকে দেশে আসেন প্রসূনবাবুর মেয়ে পূজা। এ বার তাঁর ভরসা ছিল ভিডিয়ো-কল।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২০ ০০:৫৫
Share:

ছবি এএফপি।

আকাশে তখন সূর্য ডুবছে। কাঁসর-ঘণ্টা সহযোগে ঠাকুরদালানে উঠল একচালার প্রতিমা। নাটমন্দিরের সিঁড়ির সামনে বসল ব্যারিকেড। সেই দিকে তাকিয়ে প্রবীণ প্রসূন হাজরা আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘‘পঞ্চমীর সন্ধ্যায় বেদিতে ঠাকুর ওঠা জানবাজারের রানি রাসমণির বাড়ির দুর্গাপুজোর পরম্পরা। তবে সিঁড়ি বেয়ে দর্শনার্থীদের উঠতে না পারা এ বার প্রথম।’’ এই দালানেই এক সময়ে সখী বেশে এসে দুর্গাপুজো করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় ক্যালিফর্নিয়া থেকে দেশে আসেন প্রসূনবাবুর মেয়ে পূজা। এ বার তাঁর ভরসা ছিল ভিডিয়ো-কল। এ বছর ফুল ছাড়াই হয়েছে অঞ্জলি।

Advertisement

এ বার অন্নকূট উৎসব ‌হয়নি বলে জানিয়েছেন শ্যামবাজারের নব বৃন্দাবনের অরুণাংশু করুরী। বললেন, ‘‘প্রতি বছর ৩০০ পদের অন্নকূট হয়। প্রসাদ পান তিন হাজার লোক।’’ সংক্রমণ রোধে ভিড় এড়ানোর কথা বলছেন সকলেই। তাই প্রতিমার উচ্চতাও কমিয়ে দিয়েছেন অরুণাংশুবাবুরা। যাতে আজ, দশমীতে সাইকেল ভ্যানে করেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া যায়।

মণ্ডপে প্রবেশ নিষেধ। তাই প্রতিবেশীদের অনেকেই পুজো দেখতে এসেছিলেন তাঁদের বাড়িতে। আর তাই বাড়িতে ঢোকার মুখেই স্যানিটাইজ়েশন টানেল বসিয়েছে যাদবপুর রামগড়ের ঘটকবাড়ি। সেই পরিবারের নবীন সদস্য প্রসেনজিৎ ঘটক বললেন, ‘‘পুজোর কয়েক দিন আগে থেকেই বাড়ি লোকে ভরে যেত। এ বার আত্মীয়েরা তেমন ভাবে আসতে পারেননি। তবে পড়শিদের নিয়েই পুজোটা কাটিয়ে দিলাম।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: রাজ্যে লাফিয়ে বাড়ল সংক্রমণের হার, কাল প্রতিমা নিরঞ্জন ঘিরে বাড়ছে উদ্বেগ

প্রতি বছর গমগম করে মহাবীরতলার একটি আবাসন চত্বরের মণ্ডপ। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন আবাসিকেরাই। কিন্তু করোনা আবহে সেই অনুষ্ঠান এ বার হয়েছে ইউটিউবে। পুজোর আহ্বায়ক অঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আবাসিকেরা ঘরে বসেই রেকর্ড করে পাঠিয়েছেন। সেই সব অনুষ্ঠান চার দিন ধরে আবাসনের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে দেখানো হয়েছে।’’ পঙ্‌ক্তিভোজের বদলে ভোগ পাঠানো হয়েছে প্রতিটি ফ্ল্যাটে।

করোনা সচেতনতার প্রচারে বিমানবন্দর এলাকায় বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধারে একটি আবাসনে গান গেয়েছিল পুলিশ। তবে আদালতের নির্দেশ মেনে চার দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ রেখেছিলেন সেই আবাসনের বাসিন্দারা। পাত পেড়ে খাওয়ার বদলে অষ্টমীর ভোগ পৌঁছে দিয়েছেন বাড়ি বাড়ি।

আরও পড়ুন: পুজোয় অনুদান, বীরভূম জুড়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ধন্যবাদ দিদি আর ভাই কেষ্টকে

‘দূরত্ব-বিধি তো মানতেই হবে। বিসর্জনে তাই বাড়ির মহিলা ও শিশুরা থাকবেন না’— বলছিলেন ঝামাপুকুর চন্দ্রবাড়ির দেবকুমার চন্দ্র। পাঁচ খিলানের ঠাকুরদালান ভেঙে তৈরি হয়েছে আধুনিক নাটমন্দির। সেখানেই পুজো হয়েছে হরপার্বতী রূপে। ভিড় যাতে না হয়, সে দিকে নজর রেখেছেন পরিবারের সদস্যেরাই। তবে বয়স্কদের জন্য ছিল শুধু কয়েকটি চেয়ার।

পঞ্চমী থেকে শুরু করে পুজোর প্রতি সন্ধ্যায় সুর উঠত বাড়ির পিয়ানোয়। ঠাকুরদালানে বসে গলা মিলিয়ে পুরাতনী গাইতেন বাড়ির সদস্যেরা। বালির রঞ্জিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজোর সেই আমেজেও এ বার বাধা হয়েছে করোনা। পরিবারের প্রবীণ সদস্য, রাজ্যের প্রাক্তন অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট

জেনারেল অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘গোটা বাড়িতে অবিবাহিত দুই ভাই থাকি। পুজোয় বিদেশ থেকে আত্মীয়েরা আসেন। পুজোটা আমার কাছে মেয়ের বিয়ের মতো।’’ আত্মীয়, পরিচিত আর প্রতিবেশীদের নিয়ে চার দিনের পঙ্‌ক্তিভোজন এ বার বন্ধ। আসেননি ভিয়েনরাও। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘সময়ের চাকা নিশ্চয় ঘুরবে, আগামী বছর হয়তো আবার হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন