Coronavirus

বিড়ি, আমের ফরমায়েশও পুলিশকে

পুরোদস্তুর লকডাউন চলার সময়ে কোয়রান্টিনে থাকা এক বৃদ্ধের থেকে ফোনে এমন আবদার শুনে চমকে উঠেছিলেন বড়বাজার থানার জনৈক আধিকারিক।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২০ ০২:৫৮
Share:

প্রতীকী ছবি

‘স্যর। এক বান্ডিল বিড়ি এনে দিতে পারেন?’

Advertisement

পুরোদস্তুর লকডাউন চলার সময়ে কোয়রান্টিনে থাকা এক বৃদ্ধের থেকে ফোনে এমন আবদার শুনে চমকে উঠেছিলেন বড়বাজার থানার জনৈক আধিকারিক। কোয়রান্টিনে থাকা লোকজনকে জরুরি পরিষেবা দেওয়ার ভার পুলিশের উপরেই রয়েছে। তা বলে বিড়ি এনে দিতে হবে! তবুও মেজাজ হারাননি ওই আধিকারিক। সিগারেট, বিড়ি যে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক তা তিনি ওই বৃদ্ধকে বোঝানোরও চেষ্টা করেন। কিন্তু বৃদ্ধ নিজের জেদ ছাড়েননি। শেষে বিড়ির সন্ধানে ঘুরতেও হয় পুলিশকে। অবশ্য বিড়ি শেষ পর্যন্ত মেলেনি।

লকডাউন শুরুর পর থেকেই কোয়রান্টিনে থাকা কিংবা বাজারহাট যেতে অপারগ বহু পরিবারের কাছেই খাবার-দাবার, ওষুধপত্র পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ। আনলক-১ পর্বে এসেও এখনও কোথাও কোথাও সেই কাজ করতে হচ্ছে পুলিশকে। তা বলে বিড়ি এনে দেওয়ার ফরমায়েশও যে আসতে পারে, তা ভাবেনি বড়বাজার থানার পুলিশ।

Advertisement

করোনার পরিবেশে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বদলে গৃহস্থের দিকে নজর দেওয়ার কাজই বেশি করতে হচ্ছে পুলিশকে। লোকজনের বাড়িতে চাল-ডাল পৌঁছনো, অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছনো, করোনা-পরীক্ষা করতে নিয়ে

যাওয়া—সবই সামলাতে হচ্ছে পুলিশকে। কোনও কোনও থানার পুলিশকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, ছোটখাটো কাজের জন্যও অনেকে থানায় ফোন করেছেন।

যেমন, সপ্তাহখানেক আগে গড়িয়াহাট থানা এলাকায় হোম কোয়রান্টিনে থাকা এক প্রৌঢ় পুলিশের কাছে বিরিয়ানি এনে দেওয়ার আবদারও করেন। দিন তিনেক আগে ওয়াটগঞ্জ থানা এলাকায় হোম কোয়রান্টিনে থাকা এক প্রবীণ দম্পতি বাজার থেকে হিমসাগর আম এনে দেওয়ার জন্যে পুলিশকে ফোন করেছিলেন। ভরদুপুরে বাজার ঘুরে মোটরবাইকে চেপে ওই দম্পতির দরজায় আম নিয়ে হাজির হন পুলিশকর্মীরা। পরিষেবায় খুশি হয়ে দম্পতি ফের তাঁদের জন্য আম আনার ফরমায়েশ করে বসেন পুলিশকে।

লালবাজার জানাচ্ছে, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই শহরের ৮০ শতাংশ থানার পুলিশ দুর্গতদের খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করেছে। হোম কোয়রান্টিনে থাকা লোকজনকে নজরদারিতে রাখতে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে পুলিশকে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকজনকে দেখভালের জন্য প্রতি থানাতেই চার-পাঁচ জন করে পুলিশকর্মীকে আলাদা ভাবে নিয়োগ করা রয়েছে।

এক পদস্থ আধিকারিক জানান, শহরের বেশির ভাগ থানা এলাকায় বহু দম্পতি একা থাকেন। তাঁদের অনেকে আবার হোম কোয়রান্টিনেও রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই বিড়ি, বিরিয়ানি, আমের মতো জিনিসের জন্য পুলিশকে ফোন করে বসছেন। এ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে পুলিশকে। তবে আবদার মেটাতেও হচ্ছে।

শ্যামপুকুর থানা এলাকার হোম কোয়রান্টিনে থাকা এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘আমি স্ত্রীকে নিয়ে একা থাকি। পুলিশ গত তিন মাস ধরে আমাদের যা উপকার করেছে তা জীবনে ভুলব না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement