অবহেলায় ‘মৃত্যু’, উত্তপ্ত হাসপাতাল

অবহেলার জেরে রোগী-মৃত্যুর অভিযোগ পিছু ছাড়ছে না হাওড়া জেলা হাসপাতালের। সোমবার এক প্রৌঢ়ার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ফের সেই অভিযোগ উঠল সেখানকার চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৩৫
Share:

অবহেলার জেরে রোগী-মৃত্যুর অভিযোগ পিছু ছাড়ছে না হাওড়া জেলা হাসপাতালের। সোমবার এক প্রৌঢ়ার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ফের সেই অভিযোগ উঠল সেখানকার চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত চিকিৎসককে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখালেন মৃতার পরিজনেরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতার স্বামী।

Advertisement

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে থাইরয়েডের সমস্যা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাওড়া জেলা হাসপাতালের মহিলা বিভাগে ভর্তি হন চিন্তামণি দে রোডের বাসিন্দা, ৫৫ বছরের আশাদেবী কুর্মি। তিনি গত পাঁচ-ছ’দিন ধরে থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, রবিবার রাতে প্রবল শ্বাসকষ্ট হওয়ায় সোমবার সকাল ৯টা নাগাদ তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি করান ওই প্রৌঢ়াকে।

আশাদেবীর স্বামী ভরতপ্রসাদ কুর্মি বলেন, ‘‘ভর্তি করার পরে দীর্ঘ ক্ষণ কোনও চিকিৎসক আমার স্ত্রীকে দেখতে পর্যন্ত আসেননি। কিছু ওষুধ ও স্যালাইন দিয়ে ওঁকে ফেলে রাখা হয়েছিল। এক সিনিয়র চিকিৎসককে বলায় তিনি নির্দেশ দেন, রোগীকে তাঁর কাছে তুলে আনতে। ওই চিকিৎসক যে ঘরে বসেছিলেন, সেখান থেকে আমার

Advertisement

স্ত্রীর শয্যার দূরত্ব ছিল ৬০-৭০ ফুট। অতটা দূরত্ব আমি ওঁকে কোলে তুলে নিয়ে যাই। যখন ওই চিকিৎসকের কাছে পৌঁছই, তত ক্ষণে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে।’’

এই ঘটনার খবর পেয়েই মৃতার পরিজনেরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তাঁরা সরাসরি মহিলা ওয়ার্ডের যে জায়গায় চিকিৎসকেরা বসেন, সেখানে ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। মৃতার স্বামী পরে বলেন, ‘‘ওই অবস্থাতেই চিকিৎসকেরা আমাকে বলেন, স্ত্রী যে আমার সামনেই মারা গিয়েছেন, তা কাগজে লিখে সই করে

দিতে হবে। আমি দিইনি। যাঁদের অবহেলার জন্য এ ভাবে ওঁর মৃত্যু হল, তাঁদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।’’ পরিবারের লোকজনের আরও দাবি, বিক্ষোভের মুখে পড়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক নিজের ভুল স্বীকারও করেন। যদিও হাসপাতালের পক্ষ থেকে সেই দাবি অস্বীকার করা হয়েছে।

অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে গত কয়েক মাসে একাধিক বার ওই হাসপাতালে গোলমাল হয়েছে। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি না হওয়ায় তঙ্কিত অন্যান্য রোগীর আত্মীয়-পরিজনেরা। তাঁদের অভিযোগ, শুধু চিকিৎসকদের অবহেলা নয়, ওই হাসপাতালের নার্সরাও রোগী ও রোগীর পরিজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহযোগিতা করতে চান না তাঁরা। এ ব্যাপারে হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিলেও কোনও লাভ হয়নি।

হাওড়া জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই সব অভিযোগ মানতে রাজি নন। তাঁদের মতে, হাসপাতালে চিকিৎসায় কোনও অবহেলা হয় না। রোগী মারা গেলে আত্মীয়-পরিজনেরা রাগের মাথায় এ সব বলে থাকেন। নার্সদের ব্যবহার নিয়েও নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ তাঁদের কাছে জমা পড়েনি। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘আশাদেবী বলে যে মহিলা এ দিন মারা গিয়েছেন, তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হয়েছিল। সিনিয়র চিকিৎসক দেখার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন