বেধড়ক: পড়ে আছেন জখম যুবক। রবিবার সকালে, হাওড়ায়। নিজস্ব চিত্র
শুয়োর চোর সন্দেহে এক যুবককে ধরে গণপ্রহারের অভিযোগ উঠল। রবিবার ভোরে ঘটনাটি ঘটে হাওড়ার বেলগাছিয়ায়। ঘণ্টাখানেক টানা প্রহারে নেতিয়ে পড়লে সকাল সাতটা নাগাদ কোনওমতে ওই যুবককে ভিড়ের হাত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ভারী কিছু দিয়ে মারধর করায় ওই যুবকের ডান পা ভেঙে গিয়েছে। বুক, মুখ ও মাথার আঘাতও গুরুতর। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
অভিযোগ, এ দিন খিদিরপুর থেকে ট্যাক্সি করে সেখানে চুরি করতে গিয়েছিলেন ওই যুবক ও আরও তিন সঙ্গী। কিন্তু সে সময়ে স্থানীয়েরা জেগে গেলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। তিন জন পালালেও ধরা পড়ে যান ট্যাক্সিচালক অনিল দলুই। অভিযোগ, উত্তেজিত জনতা তাঁকে ঘিরে ধরে বেধড়ক মারধর করতে থাকে। যে ট্যাক্সি করে তাঁরা এসেছিলেন, তাতেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অনিলকে উদ্ধার করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত যুবক খিদিরপুরের বাসিন্দা। গত কয়েক বছর ধরেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তিনি। বেলগাছিয়া-সহ বেশ কিছু জায়গা থেকে নিয়মিত শুয়োর চুরি করেন তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা। হাওড়া পুলিশের ডিসি (উত্তর) অমিত রাঠৌরের অবশ্য দাবি, ওই যুবকের অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা এ ভাবে মারধর করেছেন, তাঁদের খোঁজ চলছে। চুরির অভিযোগেরও তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
রোষ: এই ট্যাক্সিতে চেপেই চার যুবক শুয়োর চুরি করতে এসেছিলেন বলে অভিযোগ। উত্তেজিত জনতা আগুন ধরিয়ে দেয় ট্যাক্সিতে। রবিবার সকালে, হাওড়ার বেলগাছিয়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
বেলগাছিয়ার ভাগাড় এলাকায় কয়েকটি পরিবার শুয়োর প্রতিপালন করে। পরিবারগুলির অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে শীতকালে সেখানে শুয়োর চুরির ঘটনা ঘটছে। ঠান্ডায় রাতে এলাকার মানুষ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন। সেই সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে চোরেরা। শঙ্কর চৌবে নামে এলাকার এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘দিনের শেষে শুয়োরগুলি ভাগাড়ে পড়ে থাকা আবর্জনার স্তূপের উপরে উঠে যায়। সেখানেই রাত কাটায়। তাই চোরের দল এসে প্রথমে ওই আবর্জনার স্তূপে আগুন লাগিয়ে দেয়।’’ আগুন লেগেছে বুঝতে পেরে শুয়োরেরা নীচে নেমে আসার চেষ্টা করে। তখন তাদের ধরে নিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা।
আরও পড়ুন: গরু চুরি নিয়ে উত্তেজনা, জনতার ইটে মাথা ফাটল পুলিশের
স্থানীয়দের দাবি, এ দিনও একই কায়দায় কাজ শুরু করেছিলেন অনিলেরা। আবর্জনায় আগুন লাগিয়ে দিলে ভয়ে নীচে নামতে শুরু করে শুয়োরের দল। সে সময়ে শুয়োরদের আর্ত চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় এলাকাবাসীর। স্থানীয় সূত্রের খবর, এর পরেই তাঁরা তা়ড়া করেন অনিলদের। বাকিরা পালিয়ে গেলেও ট্যাক্সি নিয়ে পালাতে পারেননি অনিল। ধরে ফেলা হয় তাঁকে।