দিন কয়েক আগে ভোর হতেই বরাহনগরের কাচের মন্দির এলাকার পি কে সাহা লেনে রাস্তার ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে থাকতে দেখা গিয়েছিল বাইশটি কুকুরের মৃতদেহ। ঘটনার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি সেখানে হাজির হয়েছিলেন পুর কর্তারা থেকে পুলিশ। কিন্তু একসঙ্গে এতগুলি কুকুরকে কে বা কারা মারল, সে রহস্য ভেদ করা যায়নি। অবশেষে বরাহনগর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির নামে কুকুর খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। চলছে পুলিশি তদন্ত। তবে পাশাপাশি, কুকুর মারার প্রতিবাদে এলাকায় আজ, রবিবার পদযাত্রা হবে। হবে কুকুরদের জলাতঙ্কের প্রতিষেধক দেওয়া ও নির্বীজকরণের কর্মসূচিও।
এই ভাবে কুকুর মারা কেউ সমর্থন না করলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, কুকুরের উৎপাতে এলাকায় চলাফেরা করাই দায় হয়ে উঠেছে। অভিযোগ, গোটা বরাহনগর জুড়েই কুকুরের উৎপাতে নাজেহাল বাসিন্দারা। পুরসভা সূত্রের খবর, গোটা বরাহনগরের ৩৪টি ওয়ার্ডে গড়ে ১০০টি করে রাস্তার কুকুর রয়েছে। কিন্তু ২২টি কুকুরকে রাতের অন্ধকারে মেরে ফেলাটা ক্ষমাহীন অপরাধ বলেই অভিমত বরাহনগরের পুর কর্তাদের। তাই আজ, রবিবার সকালে কাচের মন্দির, আলমবাজার-সহ বিভিন্ন এলাকায় কুকুর মারার প্রতিবাদে পদযাত্রা করবেন পুরকর্তারা।
রাস্তার কুকুরের জন্ম নিয়ন্ত্রণে ও নির্বীজকরণে নিজেরা ‘অসহায়’ বলেই স্বীকার করছেন ওই পুরকর্তারা। বরাহনগরের বিধায়ক তাপস রায় বলেন, ‘‘কুকুরগুলিকে সম্ভবত বিষ খাইয়ে মারা হয়েছে। কোন জীবকেই এ ভাবে মেরে ফেলা ঠিক নয়। তবে কুকুরদের উৎপাত নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রতিটি পুরসভাতেই নির্দিষ্ট পরিকাঠামো তৈরি করা দরকার।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বরাহনগরে এই পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের কথা বলছি।’’
যদিও কুকুর মারার এই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসেছেন বরাহনগরের পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভা সূত্রের খবর, মরা কুকুর রাস্তার এ দিকে ও দিকে ফেলে না রেখে ভাগাড়ে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করার জন্য রাজ্য প্রাণী বিকাশ দফতরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কুকুরের জন্ম নিয়ন্ত্রণ, নির্বীজকরণ, জলাতঙ্কের প্রতিষেধক দেওয়ার জন্য একটি ‘ডগ পাউন্ড’ তৈরির জন্য সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্টও তৈরি করেছে পুরসভা। বরাহনগরের চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, ‘‘কুকুরের উৎপাত বাড়ছে ঠিকই। তা বলে তাদের এ ভাবে মেরে ফেলাটাও অন্যায়। পুরসভার তরফে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া শুরু হয়েছে।’’
চেয়ারম্যান পারিষদ দিলীপনারায়ণ বসু জানান, বরাহনগরের পশ্চিম প্রান্তে অর্থাৎ গঙ্গার দিকের বিভিন্ন এলাকায় আজ, রবিবার, রাস্তার কুকুরদের নির্বীজকরণ করা হবে ও প্রতিষেধক দেওয়া হবে। উপস্থিত থাকবেন সারমেয়প্রেমী তথা বিধায়ক দেবশ্রী রায়, অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী, সোহম-সহ অন্যান্যরা। দিলীপবাবু আরও জানান, পুজোর কয়েক দিন আগে এবং পুজোর সময় ওই এলাকায় দু’বার নির্বীজকরণ ক্যাম্প করা হয়েছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, নিজস্ব ডগ পাউন্ড তৈরি হলে প্রতিদিন অন্তত পাঁচটি করে রাস্তার কুকুরকে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক টিকা দেওয়া যাবে এবং নির্বীজকরণও করা সম্ভব হবে। কোনও কুকুর অসুস্থ হয়ে
পড়লে কিংবা পাগল হয়ে গেলে তাকেও ওই জায়গায় রেখে চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।