জল জমা থেকে মশা, ভাঙা রাস্তা থেকে যত্রতত্র পড়ে থাকা জঞ্জাল— সমস্যা অনেক। তবু সব মিলিয়ে কেমন আছে বিধাননগর? পুরভোটের মুখে তারই হদিস পাওয়ার চেষ্টা।
Bidhannagar

বছর শেষেও সারানো হয়নি সব রাস্তা, ক্ষোভ বাসিন্দাদের

জল জমা থেকে মশা, ভাঙা রাস্তা থেকে যত্রতত্র পড়ে থাকা জঞ্জাল— সমস্যা অনেক। তবু সব মিলিয়ে কেমন আছে বিধাননগর? পুরভোটের মুখে তারই হদিস পাওয়ার চেষ্টা।

Advertisement

কাজল গুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:৪৮
Share:

n খন্দ: এমনই বেহাল অবস্থা সল্টলেকের জিই ব্লকের একাধিক জায়গায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

বর্ষায় রাস্তা মেরামত করা যায় না। তাই ভাবা হয়েছিল, বর্ষা কেটে গেলে বোধহয় রাস্তা চলাচলের যোগ্য হবে। কিন্তু বছর শেষ হতে চললেও রাস্তার মেরামতির কাজ সর্বত্র হয়নি। এখন আবার সামনে পুরসভার নির্বাচন। তাই বেহাল রাস্তাগুলির মেরামতি কবে হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে বিধাননগরে।

Advertisement

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সমস্যা দীর্ঘ দিনের। রাস্তা এক বার সারানো হবে, পরে সেই রাস্তা কোনও কারণে খোঁড়া হবে অথবা খারাপ হবে। আবার সেই রাস্তা মেরামত করা হবে। এই প্রক্রিয়াই চক্রাকারে চলতে থাকে, যার জেরে সরকারের খরচ অযথা বাড়ে এবং বাসিন্দারাও বার বার ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। তাই দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে রাস্তা সংস্কারের দাবি তুলেছেন তাঁরা। পুরসভা অবশ্য জানিয়েছে, তিন বছরের চুক্তিতে রাস্তা মেরামতির কাজ করানো হবে। যার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। সেই কারণে ইতিমধ্যেই প্রকল্পের বিস্তারিত খসড়া প্রস্তাব রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন এলেই কাজ শুরু হবে। এর আগেও রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হয়েছিল পুরসভা। এই সূত্রেই আবার প্রশ্ন উঠেছে, পুরসভা তা হলে কবে স্বনির্ভর হবে?

পুরকর্তারা জানিয়েছেন, এর আগেও বিস্তারিত খসড়া প্রস্তাব তৈরি করে নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম পর্যায়ের সেই টাকা দিয়ে বেহাল রাস্তার একাংশ মেরামত করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রস্তাব অনুমোদিত হলেই বাকি কাজ করা হবে।

Advertisement

সল্টলেক থেকে শুরু করে রাজারহাট-গোপালপুরের একাধিক জায়গায় রাস্তার এখন বেহাল দশা। ২১, ২২, ২৩, ৩৪ ও ৩০-সহ অধিকাংশ ওয়ার্ডের রাস্তারই বেহাল দশা। কোথাও পিচের আস্তরণ উঠে গিয়েছে, কোথাও ছোট-বড় গর্ত, কোথাও আবার রাস্তা পুরোপুরি ভেঙে গিয়ে বড় সড় গর্ত তৈরি হয়েছে। যেমন, সল্টলেকের হোমিয়োপ্যাথি হাসপাতালের কাছে রাস্তার খুবই খারাপ অবস্থা। আবার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক রাস্তাও বেহাল অবস্থায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, রাতে ওই সব রাস্তায় সতর্ক না হলেই দুর্ঘটনা ঘটে। বিদায়ী ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরদের দাবি, বেহাল রাস্তা সম্পর্কে পুরসভার উচ্চতর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সারানোর জন্য রাস্তার তালিকাও তৈরি হয়েছে।

বাসিন্দাদের আবার অভিযোগ, পুজোর আগে ও পরে বেহাল রাস্তাগুলিতে তাপ্পি দেওয়ার কাজ হলেও তার মান অত্যন্ত খারাপ। তাই কয়েক দিনেই রাস্তা ফের আগের অবস্থায় ফিরে গিয়েছে। তা ছাড়া, ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের রাস্তার ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ। কেষ্টপুরের বাসিন্দা অনিল চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘পুজোর আগে বলা হল, শুকনো মরসুমে রাস্তা সারানো হবে। এখনও সেই কাজ হল না। সামনে আবার পুর নির্বাচন। তার আগে আদৌ কাজ হবে তো?’’

বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, রাস্তা সারানোর নামে আদতে যা হয় তা হল, আগের পিচের আস্তরণের উপরেই নতুন আস্তরণ চাপিয়ে দেওয়া। যার ফলে রাস্তা ধীরে ধীরে উঁচু হতে থাকে। তখন জমা জল ঢুকে যায় বাড়িতে। তাঁদের দাবি, রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে কাজের পদ্ধতি এবং উপকরণের গুণমান, দু’দিকেই নজর দেওয়া প্রয়োজন।

বাগুইআটির বাসিন্দা নির্মল রায়ের কথায়, ‘‘গাড়ির চাপ ক্রমশ বাড়ছে। ফলে নিছক রাস্তা মেরামতি নয়, আধুনিক মানের রাস্তা তৈরি করা প্রয়োজন।’’ রাজারহাট-নিউ টাউনের বিধায়ক তথা বিধাননগর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তাপস চট্টোপাধ্যায় জানান, নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে রাস্তা মেরামতির খসড়া প্রস্তাব দু’টি পর্যায়ে পাঠানো হয়েছিল। প্রথম পর্যায়ের টাকা দিয়ে কিছু রাস্তা মেরামত করা হয়েছিল। এ বার দ্বিতীয় পর্যায়ের টাকা পেলে রাজারহাট-গোপালপুর এবং সল্টলেকের কিছু রাস্তা ও ফুটপাত সংস্কার করা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে রাস্তা সারানো হবে। সেখানে গুণমানের দিকে নিশ্চিত ভাবেই নজর থাকবে।’’

তিনি আরও জানান, নির্বাচনের আগে রাস্তা মেরামতিতে যাতে সমস্যা না হয়, তার জন্য বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। আগামী বর্ষার আগেই সব রাস্তা সংস্কারের কাজ শেষ করবেন তাঁরা। বিধাননগর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, সমস্যা সম্পর্কে পুরসভা ওয়াকিবহাল। রাস্তা সংস্কারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন