আলাপচারিতা: তখন সন্ধ্যা নামছে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
সে দিন মোহনবাগান হারতেই পাড়ার সান্ধ্য আড্ডাটা ভেস্তে গেল! ইস্টবেঙ্গলের কট্টর সমর্থক প্রদীপবাবুর একটা মন্তব্যে একেবারে রে রে করে উঠলেন মোহনবাগানের সমর্থকেরা। এর পর শঙ্করবাবুর ইশারায় ধোঁয়া ওঠা চা আসতেই নিমেষেই উধাও ঘটি-বাঙালের চিরকালীন ঝগড়া।
এমনই আমার পাড়া গৌর লাহা স্ট্রিট। পাড়াটায় মিশে আছে সেকেলে থামওয়ালা, খিলানযুক্ত রকওয়ালা বাড়ি। নিমতলা ঘাট স্ট্রিট থেকে শুরু হয়ে বৃন্দাবন বসাক স্ট্রিটে মিশেছে।
সকালটা শুরু হতো গমগমে ভাল্ভ রেডিওর আওয়াজে। এখন ভেসে আসে এফ এম-এর সুর। পাড়ার নিজস্বতা টিকে আছে রকের আড্ডায়। সকালেকাজে বেরোনোর আগে কিছুক্ষণের আড্ডা ‘মাস্ট’! সেটাই ভাল থাকার ‘অক্সিজেন’। মাঝ-বয়সিদের আড্ডা বসে সন্ধ্যায়। চলে রাত পর্যন্ত।
পাড়াটা এখন পরিষ্কার থাকছে। রাস্তা পরিষ্কার, জঞ্জাল সাফাই হয়। এ পাড়ায় কখনও লোকবলের অভাব হয় না। সবাই এক ডাকে পাশে থাকেন।
এখানেও তৈরি হয়েছে ফ্ল্যাট। এসেছেন নতুন মানুষ। কিন্তু এ পাড়ার মানুষ মিশুকে। তাই নতুনরা বেশি দিন অপরিচিত থাকেন না। ছুটির দিনে এখনও বাচ্চারা গলিতে খেলেন। এক কালে দাবা খেলার চল ছিল পাড়ায়।
তেষট্টি বছরের পুরনো ২০-র পল্লি পুজোটায় আজও আছে আটপৌরে চেহারায়। চৈত্র মাসে এ পাড়ায় শীতলা পুজো হয়। আগে যাত্রা হলেও এখন পালা কীর্তন হয়।
আরও পড়ুন...
এখন তো পাড়াময় সৌরভ
এ পাড়ার আকর্ষণ রাজরাজেশ্বরী কালীমন্দির। পাড়াতেই ছিল ভারতী স্কুল। জড়িয়ে আছে কত স্মৃতি। যদিও সেই স্কুল আজ আর নেই। তেমনই ছিল শঙ্কর ফ্যাক্টরি। সেখানে তৈরি হতো টিনের বাক্স। এখানে রয়েছে লাইব্রেরি ইউনাইটেড রিডিং রুমও। সময়ের প্রভাবে যদিও অনেক কমে গিয়েছে পাঠক সংখ্যা।
এ পাড়ার চিকিৎসক খগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় রাতবিরেতে রোগীর বাড়িতে চলে যেতেন। তাঁর অভাবটা আজও অনুভব করি। পাড়ার মুখেই রয়েছে নামহীন এক তেলেভাজার দোকান। তার আকর্ষণও কিন্তু নেহাত কম নয়। সব মিলিয়ে জীবনযাত্রায় এক সারল্য নিয়ে এই পাড়ায় বেশ ভালই আছি।
লেখক ব্যবসায়ী