প্রতীকী ছবি।
বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন পকসো মামলায় অভিযুক্ত পলাতক বলে আদালতকে জানাল পুলিশ।
আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে তিলজলা থানার বাসিন্দা বিশু রাও তাঁর নিজের নাবালিকা মেয়েকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতার হন। ধর্ষণের চেষ্টা ও পকসো আইনের ধারায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। বিশুকে হেফাজতে রেখেই আলিপুর বিশেষ পকসো আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ওই অভিযুক্ত আদালতে জামিনের আবেদন করে জামিন পান। জামিনের পরে প্রথম প্রথম বিশু আদালতে হাজিরা দিয়েছিল। তার পরে গত এক বছরেরও বেশি সময় সে বেপাত্তা।
মামলার সরকারি আইনজীবী রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায় ও মাধবী ঘোষমাইতি বলেন, ‘‘মামলার বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ। শুধু মাত্র অভিযুক্তকে বিচার প্রক্রিয়ার পদ্ধতি অনুযায়ী কয়েকটি প্রশ্ন করা করা বাকি ছিল। তার পরেই দোষী সাব্যস্ত ও সাজা ঘোষণার পর্ব। তবে বিশু বেঁচে রয়েছে না কি মারা গিয়েছে তা পুলিশ এখনও জানতে পারেনি। এখনও পর্যন্ত বিশু পলাতক বলেই রিপোর্টে জানিয়েছে পুলিশ।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
লালবাজারের এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘ঘটনার পর থেকে বিশুর খোঁজ করা হচ্ছে। কিন্তু সে এখনও অধরা।’’
আদালত সূত্রে খবর, ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনা ঘটে। স্ত্রীকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বিশু। অভিযুক্তের নাবালিকা দুই মেয়ে বাড়িতে একা ছিল। এক মেয়ের বয়স ১৪ আর এক মেয়ের বয়স ৯। ঘটনার দিন বিকেলে ছোট মেয়েকে দোকানে খাবার কিনতে পাঠিয়ে বিশু বড় মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। মেয়ে বাবার আচরণ দেখে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তার পরেই বাবার কীর্তি খুলে বলে ওই নাবালিকা। কিন্তু ঘটনার পরেই ফেরার হয়ে যায় বিশু। সেই বিকেলেই তিলজলা থানায় খবর দিলে পুলিশ ও এলাকার বাসিন্দারা এক সঙ্গে বিশুর খোঁজ শুরু করেন।
যদিও পুলিশ জানায়, রাতে নিজেই থানায় এসে ধরা দেয় বিশু। তাকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। পরে দিন পুলিশ আলিপুরের বিশেষ পকসো আদালতে বিশুকে পেশ করলে বিচারক তাকে পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। তার পরে জেল হেফাজতে রেখেই বিশুর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। পুলিশ বিশুর বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ দিয়ে চার্জশিট জমা দেয়। ওই নাবালিকার মেডিক্যাল পরীক্ষা রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়। ওই নাবালিকার গোপন জবানবন্দিও বিচারকের কাছে পেশ করা হয়। সরকারি আইনজীবীদের কথায়, প্রতি রিপোর্টেই বিশুর বিরুদ্ধে নাবালিকা মেয়েকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগের সমর্থন ছিল।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শুরু হওয়ার পরে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে নিজেকে ক্যানসার রোগী দাবি করে বিশু জামিনের আবেদন করে। বিশুর পক্ষে কোনও আইনজীবী সওয়াল করতে রাজি হননি। পরে আদালতই বিশুকে আইনজীবী দেয়। আদালত সংশোধনাগারে কাছে বিশুর শারীরিক অবস্থার রিপোর্ট চায়। সে চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে সংশোধনাগারের তরফে রিপোর্ট পেশ করা হয়। আইনজীবীরা জানান, ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে ২০১৭ সালের ২৯ অগস্ট বিশুর জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।
সরকারি আইনজীবী রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জামিনের শর্ত অনুযায়ী পর পর কয়েক মাস আদালতে হাজিরা দিয়েছিল বিশু। ২০১৮ সালে জানুয়ারি মাসে হাজিরা থাকা সত্ত্বেও বিশু উপস্থিত হয়নি। সে পলাতক বলেই রিপোর্ট পেশ করেন মামলার তদন্তকারী অফিসার। ফেব্রয়ারি মাসে বিশুর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিশুর কোনও হদিস পাওয়া যায়নি বলে আদালতকে জানিয়েছে পুলিশ।’’