দেবীর বোধন হয় ষষ্ঠীতে। কিন্তু এ বার মহালয়া থেকেই মণ্ডপমুখী হতে দেখা গেল দর্শনার্থীদের। সোমবার বিকেলে কেনাকাটা সেরে অনেকেই ঢুঁ মেরেছেন বিভিন্ন মণ্ডপে। কোথাও এ দিন উদ্বোধন হয়েছে, কোথাও আবার শেষ মুহূর্তের ‘টাচ’ দেওয়ার কাজ হয়েছে। লেক টাউনের শ্রীভূমি ক্লাব এ দিন থেকেই মণ্ডপ খুলে দিয়েছে। বাগবাজার সর্বজনীনের উদ্বোধনে এ দিন হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দেবীর বোধনের আগে ভিড়ের বোধন অবশ্য এ বছরই প্রথম নয়। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে, শহরের পুজোয় ভিড়ের বোধন আজকাল শুরু হয়ে যায় তৃতীয়া থেকেই। জনস্রোতের সেই রেশ রয়ে যায় দশমী পেরিয়ে একাদশীতেও। উৎসবের এই ভি়ড় নিয়ে উচ্ছ্বাস যেমন রয়েছে, তেমন রয়েছে চিন্তাও। তার উপরে পুজোর দিনে তারকা, বিদেশি রাষ্ট্রদূত, নেতা, মন্ত্রী-সান্ত্রীদের আনাগোনাও লেগে থাকবে। ফলে সাধারণ দর্শক ও ভিআইপি-দের নিরাপত্তা সামলানো নিয়েও চিন্তা থাকছে। সেই চিন্তা বাড়িয়েছে ২ অক্টোবর নাগেরবাজারের বিস্ফোরণ। অনেকেই বলছেন, আপাত শান্ত নাগেরবাজারের কাজিপা়ড়ায় যদি সাতসকালে বিস্ফোরণ হতে পারে, তা হলে নাশকতা চালানোর জন্য আরও বড় ও লোভনীয় নিশানা হতে পারে পুজোর ভিড়।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, শহরের বিভিন্ন জনপ্রিয় পুজোমণ্ডপে কী ধরনের নিরাপত্তা থাকে?
শহরের সর্বজনীন পুজোর ‘মুখ’ বলতেই সবার আগে মনে আসে বাগবাজার সর্বজনীনের কথা। কার্যত ষষ্ঠী থেকেই জনতার ঢল নামে সেখানে। এ বার এই পুজোর শতবর্ষ। শোনা যাচ্ছে, বিশ্বখ্যাত এক ভারতীয় খেলোয়াড় আসতে পারেন সেখানে। তবে প্রাচীন এই পুজোয় নিরাপত্তার খামতি থাকছে না বলেই দাবি করছেন পুজোর
অন্যতম কর্তা অভয় ভট্টাচার্য। তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের মাঠের চারপাশে মোট ছ’টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। আরও ১০টি ক্যামেরা বসবে। পুলিশ তো থাকেই। তার সঙ্গে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী ও স্বেচ্ছাসেবকেরাও থাকেন। ঘণ্টা দু’য়েক অন্তর তল্লাশি চলে।’’
নিরাপত্তার দিক থেকে এ বার তাক লাগিয়ে দেবে বলে দাবি করছেন সাবেক লেবুতলা পার্কের পুজো কমিটির কর্তারা। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের ওই পুজোয় এ বার দর্শনার্থীদের যেতে হবে স্ক্যানারের ভিতর দিয়ে। রুপোর রথ দেখতে এ বারের লেবুতলা মণ্ডপে আরও বেশি জনসমাগম হবে বলেই আশা করছেন পুজোকর্তা সজল ঘোষ। জানাচ্ছেন, মণ্ডপে থাকবে ‘স্মার্ট সিকিওরিটি’। সন্দেহজনক বস্তু বা জিনিস দেখলে লেসার রশ্মি তৎক্ষণাৎ চিহ্নিত করবে। বাজবে ঘণ্টাও। এর পাশাপাশি পুলিশ-স্বেচ্ছাসেবক-বেসরকারি রক্ষীরা তো রয়েইছেন। উত্তর কলকাতার জগৎ মুখার্জি পার্কের পুজোকর্তা সোনাই সরকারেরও ভরসা সিসি ক্যামেরায় নজরদারি ও পুলিশ।দক্ষিণ কলকাতার প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীদের পুজোয় ভিআইপি-দের আনাগোনা লেগেই থাকে।
ফলে সেখানে নিরাপত্তার কড়াক়়ড়ি বরাবরই বেশি। সেই পুজোগুলি বাদ দিলেও ম্যাডক্স স্কোয়ার, শিবমন্দির, মুদিয়ালি, বাদামতলার মণ্ডপেও ভিড় কিছু কম হয় না। ভিড় সামলাতে ম্যাডক্স স্কোয়ারের চারপাশে পুলিশ থাকে, থাকে সিসি ক্যামেরার নজরদারিও। পুলিশকর্মীরা বারবার গোটা তল্লাটে টহল দেন। লেক এলাকার সরু রাস্তার উপরে শিবমন্দিরের পুজোয় ভি়ড়ের ঢল সামলানোই দায় হয়ে ওঠে কোনও কোনও পুজোর সন্ধ্যায়। ওই পুজোর সম্পাদক পার্থ ঘোষ বলছেন, ‘‘পুলিশ, বেসরকারি রক্ষী এবং সিসি ক্যামেরাই ভরসা।’’ একই সুর বেহালা, হরিদেবপুরের পুজো কমিটিগুলিরও। পুজো উদ্যোক্তাদের সংগঠনের সভাপতি পার্থবাবু জানাচ্ছেন, সংগঠনের তরফে প্রত্যেক পুজো কমিটিকে নিরাপত্তার নির্দেশিকা পাঠানো হয়।
তবে পুজোর দিনে পুলিশই আসল ভরসা বলে মনে করেন কলেজ স্কোয়ারের পুজোকর্তা বাদল ভট্টাচার্য। গুজরাতের অক্ষরধাম মন্দিরের ধাঁচে এ বার মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে সেখানে। যা দেখতে অষ্টমীর সকালে হাজির হতে পারেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। ‘‘উনি এলে তো নিরাপত্তা এসপিজি-র দায়িত্বে থাকবে। কে জানে, তখন আমাকেই ঢুকতে দেয় কি না!’’— বলছেন ওই প্রবীণ পুজোকর্তা।