পুলিশি হেফাজতেই অনিন্দিতা, খুনের কথা স্বীকার, দাবি পুলিশের

অনিন্দিতার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হলেও কী ভাবে এই ঘটনা ঘটানো হল, তা নিয়ে ধোঁয়াশায় তদন্তকারীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৪৪
Share:

গ্রেফতারের পরে রবিবার, বারাসত আদালত চত্বরে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদের পরে অবশেষে ‘স্বীকারোক্তি’। পুলিশের দাবি, আইনজীবী রজত দে-র মৃত্যুতে স্ত্রী অনিন্দিতার যোগ সম্পর্কে প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হয়েই শনিবার রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাই ধৃতের বিরুদ্ধে খুন, তথ্যপ্রমাণ লোপাট এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তিনি একাই করেছেন এই কাজ, না কি আরও কেউ এতে জড়িত, তা-ও জানতে চায় পুলিশ। ফলে রবিবার অনিন্দিতাকে বারাসত আদালতে তোলা হলে তাঁর পুলিশি হেফাজতের আবেদন করা হয়। বিচারক অভিযুক্তকে ৮ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisement

এ দিন আদালতে সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, এই খুনের পিছনে বড় কোনও উদ্দেশ্য আছে। তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। ধৃতের জামিন হলে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের আশঙ্কা রয়েছে। তাই ধৃতকে পুলিশি হেফাজতে রাখার আবেদন জানানো হয়েছিল। উল্টো দিকে অনিন্দিতার আইনজীবী চন্দ্রশেখর বাগের আর্জি ছিল, ধৃতের স্বামী সদ্য মারা গিয়েছেন। দেড় বছরের সন্তান আছে তাঁদের। তাই অনিন্দিতা পাল দে-র জামিন হওয়া জরুরি। তবে সেই আর্জি খারিজ হয়ে যায়।

অনিন্দিতার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হলেও কী ভাবে এই ঘটনা ঘটানো হল, তা নিয়ে ধোঁয়াশায় তদন্তকারীরা। পুলিশের অনুমান, শ্বাসরোধ করেই রজতের মৃত্যু ঘটানো হয়েছে। সেই কাজে তার কিংবা মোবাইলের চার্জারের মতো সরু কোনও জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে। তবে তা প্রমাণ সাপেক্ষ। এ ছাড়াও তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, রজতের সারা শরীরে অনেক ক্ষত ছিল। সেই চিহ্ন দেখে পুলিশের অনুমান, ফুট ছয়েক উচ্চতার রজতকে মৃত্যুর আগে ঘায়েল করার চেষ্টা হয়েছিল। তবে সেগুলি পুরনো ক্ষত কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: রজতকে আমি খুন করিনি, আদালত চত্বরে বললেন অনিন্দিতা

কিন্তু কেন সন্দেহ করা হল অনিন্দিতাকে? পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথমে অনিন্দিতা চেষ্টা করেছিলেন এটি স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে তুলে ধরার। কিন্তু রজতের দেহের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট সামনে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাঁর বয়ানে আত্মহত্যার তত্ত্ব উঠে আসে। বয়ান বদলের কারণ জানতে চাইলে অনিন্দিতা দাবি করেছেন, আচমকা ওই ঘটনায় ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এ দিকে, রজতের বাবা সমীর দে আগেই খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ফলে অনিন্দিতা বয়ান বদলালে সন্দেহ বাড়ে পুলিশের।

কিন্তু অনিন্দিতা যদি ঘটনার কথা স্বীকার করেও থাকেন, এই কাজ কি পুরোটা তাঁর পক্ষে একা করা সম্ভব? সূত্রের খবর, তদন্তকারীদের বক্তব্য, রজত স্বাস্থ্যবান ছিলেন। একা অনিন্দিতার পক্ষে রজতকে কাবু করা কঠিন। যদি অনিন্দিতা একা করেও থাকেন, তবে সেই কাজ কোন পরিস্থিতিতে সম্ভব হয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, পুরো ঘটনাক্রম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে অনিন্দিতার মোবাইলের কল রেকর্ড এবং হোয়াটসঅ্যাপে কাদের সঙ্গে তিনি চ্যাট করতেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারটি জানতে খতিয়ে দেখা হচ্ছে ওই দম্পতির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট।

খুনের কারণ নিয়েও ধন্দ কাটেনি পুলিশের। পুলিশ সূত্রের খবর, স্বামী-স্ত্রীর অশান্তি লেগেই থাকত। গত ২৫ নভেম্বর, ঘটনার দিনও ঝামেলা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে, অনিন্দিতার উপরে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতেন রজত। কিছু ক্ষেত্রে তা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যেত। সূত্রের খবর, এই দাবির পক্ষে কিছু তথ্যও মিলেছে। মেয়ের উপরে অত্যাচার প্রসঙ্গে বাবা অলোক পাল এ দিন বলেন, ‘‘আমার মেয়ে কষ্টে ছিল। ও কী ধরনের অত্যাচারের শিকার হয়েছে, তা নিশ্চয় তদন্তে উঠে আসবে।’’ বস্তুত অনিন্দিতার দু’টি ফেসবুক পোস্ট ঘটনাচক্রে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। গত ৭ নভেম্বর অনিন্দিতা ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। যাতে লেখা, ‘বিয়ে।

একটা পাবলিক টয়লেট। যারা বাইরে আছে, ভিতরে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে, যারা ভিতরে আছে, বাইরে আসার জন্য ছটফট করছে।’ রজতের মৃত্যুর তিন দিন আগে অনিন্দিতা নিজের প্রোফাইলে একটি সংবাদ শেয়ার করেছেন। তার শিরোনাম হল, ‘সাত বছরের প্রেম ভেঙে প্রেমিক অন্য মহিলাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিতেই তাঁকে খুন করলেন প্রেমিকা।’ তবে পারিবারিক অশান্তির কারণেই রজতের মৃত্যু কি না, স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে।

বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রে খবর, টানা জেরার মুখে পড়ে ঘটনায় যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন অনিন্দিতা। পুলিশের বক্তব্য, রজতের মৃত্যুতে অনিন্দিতার হাত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তবেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু অনিন্দিতা পরিকল্পনা করে এই কাজ করেছেন, নাকি অশান্তি চলাকালীন নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে স্বামীর মৃত্যু ঘটানোর দায় নিলেন, তা স্পষ্ট নয়। অনিন্দিতার বাবা অলোক পালের দাবি, ‘‘আমার মেয়ের প্রতি আস্থা আছে। ও এই কাজ করেছে বলে বিশ্বাস করি না।

আমাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। সবটাই তদন্তসাপেক্ষ।’’ তবে পুলিশের একাংশের মতে, নিজেরই পেশ করা একের পর এক যুক্তির জালে এ বার জড়িয়ে গিয়েছেন অনিন্দিতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন