ব্যবসায়ীকে প্রতারণা, গ্রেফতার টলিউডের অভিনেত্রী, নজরে এক রাজনৈতিক নেতাও

পুরুলিয়ার ব্যবসায়ীকে প্রতারণার ঘটনায় টলিউডের এক অভিনেত্রী ধরা পড়তেই নতুন করে গতি পেয়েছে পুলিশি তদন্ত।পুলিশ সূত্রের খবর, পুরুলিয়ার এক সিমেন্ট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কয়েক দফায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সোমা বাগ ওরফে ‘মিত্তল’-কে রবিবার যাদবপুর থেকে গ্রেফতার করেছে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৭ ১০:০০
Share:

পুরুলিয়ার ব্যবসায়ীকে প্রতারণার ঘটনায় টলিউডের এক অভিনেত্রী ধরা পড়তেই নতুন করে গতি পেয়েছে পুলিশি তদন্ত।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, পুরুলিয়ার এক সিমেন্ট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কয়েক দফায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সোমা বাগ ওরফে ‘মিত্তল’-কে রবিবার যাদবপুর থেকে গ্রেফতার করেছে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ। ২০১৪ সালে ওই মহিলার বিরুদ্ধে পুরুলিয়া টাউন থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। কিন্তু তদন্ত সে ভাবে এগোয়নি। এমনকী, সোমার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও অভিযোগ জানানো হয়েছিল। পুলিশকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, সোমা এতটাই প্রভাবশালী যে, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর নির্দেশ দেওয়ার পরেও তদন্তে গতি আসেনি। এর পরে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে ব্যাঙ্কশাল কোর্টের দ্বারস্থ হন ওই সিমেন্ট সংস্থার মালিক আশিস সুরেখা। শেষমেশ আদালতের নির্দেশে সোমার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে হেয়ার স্ট্রিট থানা।

কিন্তু সোমা এতটা প্রভাবশালী কী ভাবে?

Advertisement

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই প্রতারণার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, পুরুলিয়া জেলা পরিষদের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে সোমার যোগ রয়েছে। ওই নেতার জোরেই সোমা প্রভাবশালী। সোমার প্রতারণার টাকার একাংশ ওই নেতা নিয়েছেন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। সোমাকে পুলিশি হেফাজতে দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে। ওই নেতার সঙ্গে সোমার যোগাযোগের বিভিন্ন নথি হাতে এসেছে পুলিশের। শুধু নথি নয়, ধৃত অভিনেত্রীর সঙ্গে ওই নেতার অন্তরঙ্গ নানা ছবিও তদন্তকারীরা পেয়েছেন। ওই সব নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিমেন্ট কোম্পানির মালিক আশিসবাবুর সঙ্গে পরিচয়ের সময়েও ওই নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দিয়েছিলেন সোমা। সোমার ফোনের সব কললিস্ট পরীক্ষা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: অবশেষে নড়ল পুলিশ, তদন্তে তৈরি বিশেষ দল

আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কয়েক দফায় সোমা ওই সিমেন্ট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। ২০১৬ সালের পরে পুরুলিয়া থেকে বেপাত্তা হয়ে যায় সোমা। তার পরে আশিসবাবু ওই নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

আশিসবাবুর অভিযোগ, পুরুলিয়া জেলার সরকারি সার্কিট হাউসের পাশের একটি সরকারি বাংলোয় বসে ওই নেতা তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘সাড়ে তিন কোটি টাকা আপনি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করুন। আমি আপনাকে ৫০ হাজার টাকার ইট ধারে দিচ্ছি। আপনি বিক্রি করে আমায় টাকা ফেরত দেবেন। এক মাসের বেশি সময় দেব না। এ ছাড়া, আমি আপনার জন্য আর কিছু করতে পারব না।’’

তদন্তকারীদের কথায়, সব অভিযোগেরই সত্যতার প্রমাণ মিলেছে। ওই নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি জেলা পরিষদের শীর্ষ নেতা তথা জনপ্রতিনিধি। ওই নেতার সঙ্গে রাজ্যের দুই মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। সেই কারণে মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের দফতরেও বিষয়টি জানানোর কথা ভাবা হয়েছে।

এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘দুর্নীতির প্রশ্নে কোনও রকম আপস করা হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি পুলিশকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাই মুখ্যমন্ত্রীর দফতর ও মুখ্যসচিবকে বিষয়টি জানানো হবে। ওই নেতার বিরুদ্ধে আদালতগ্রাহ্য অনেক তথ্যপ্রমাণ হাতে এসেছে। প্রয়োজনে তাঁকেও গ্রেফতার করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement