পাল্টা: পুলিশ অভব্যতা করেছে বলে অভিযোগ জানাচ্ছেন স্থানীয় মহিলারা। মঙ্গলবার, মুকুন্দপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়িতে চলছিল শিবরাত্রির পুজো। অভিযোগ, কাছেই প্রকাশ্যে মদ্যপান করছিলেন কয়েক জন যুবক। সঙ্গে বাজছিল তারস্বরে মাইক। উচ্চ মাধ্যমিক চলাকালীন মাইক বাজানো নিষিদ্ধ। তাই ওই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল তিন পুলিশকর্মীর একটি দল। তাঁরা ওই যুবকদের মদ্যপানে বাধা দেন। কয়েক জনকে আটক করে থানায় আনার চেষ্টা করতেই উল্টে বাধা দেন এলাকার বাসিন্দারা। শুরু হয় পুলিশের দলটির সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি। যে বাড়িতে পুজো হচ্ছিল, সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন পরিবারের মহিলা সদস্যেরা। তাঁরাও অভিযুক্তদের থানায় নিয়ে যেতে পুলিশকে বাধা দেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর পরেই পুলিশকর্মীরা তাঁদের লাঠিপেটা করেন। খবর পেয়ে বিরাট পুলিশবাহিনী। তবে তার আগেই পালিয়ে যায় এক অভিযুক্ত।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাতে পূর্ব যাদবপুর থানার মুকুন্দপুরে। প্রায় ৩০ জন বাসিন্দার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মীকে মারধর, কাজে বাধাদান-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কোনও অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়নি। অন্য দিকে, পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধেও যৌন হেনস্থা, মারধর-সহ একাধিক অভিযোগ তুলে পূর্ব যাদবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয়েরা। পূর্ব ডিভিশনের এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারকে (এসি) ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার রাত ১২টা নাগাদ পূর্ব যাদবপুর থানার সাব-ইনস্পেক্টর কৌশিক রায়ের নেতৃত্বে মুকুন্দপুর এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন দুই পুলিশকর্মী। সে সময়ে তাঁরা খবর পান, একটি নির্মীয়মাণ স্কুলের উল্টো দিকে এক বাড়িতে শিবরাত্রি উপলক্ষে জোরে মাইক বাজছে। একই সঙ্গে প্রকাশ্যে চলছে মদ্যপান। খবর পেয়ে কৌশিকবাবুরা ঘটনাস্থলে যান। প্রকাশ্যে মদ খাওয়ার জন্য তাঁরা কয়েক জনকে আটক করেন। এর পরেই ওই পুলিশকর্মীদের ঘিরে ধরেন বাড়িটির বাসিন্দারা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন এলাকার লোকজন। পুলিশকর্মীদের সঙ্গে তাঁদের বচসা এবং ধস্তাধস্তি শুরু হয়। সহকর্মীদের নিগ্রহের খবর পেয়ে থানা থেকে যায় বিশাল বাহিনী। অভিযোগ, তাঁদের কাঠের টুকরো দিয়ে মারধর করা হয়। জখম হন কৌশিকবাবু-সহ ছয় পুলিশকর্মী। বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অবস্থা থমথমে। তার মধ্যেই চলছে খিচুড়ি বিতরণ। এক বাসিন্দা জানান, পুলিশের জন্য তাঁদের প্রচুর প্রসাদ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ওই বাড়ির বাসিন্দা অভিযুক্ত ত্রিনাথ অধিকারী (পুলিশি অভিযোগে তাঁর নাম রয়েছে) এ দিন জানান, রাস্তার উল্টো দিকে তাঁর বাড়ির কিছুটা দূরে কয়েক জন যুবক মদ্যপান করছিলেন। তবে তিনি নিজে মদ খাচ্ছিলেন না। পুলিশ আসায় ওই যুবকদের সরে যেতে বলেন ত্রিনাথবাবু। তাঁর অভিযোগ, উল্টে পুলিশ তাঁকেই আটক করে থানায় নিয়ে যেতে চায়। যাতে বাধা দেন স্থানীয়েরা। তা থেকেই শুরু হয় গোলমাল।
কেন বাড়ির বড় ছেলে ত্রিনাথকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলে বাইরে বেরিয়ে পুলিশকে বাধা দেন বাড়ির মহিলারা। তাঁদের সঙ্গে পুলিশের এক প্রস্ত ধস্তাধস্তি হয়। মহিলা সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছে। মারধরের পাশাপাশি এক জনের পোশাকও ছিঁড়ে দেওয়া হয়। ত্রিনাথবাবুর ভাই ভূতনাথ অধিকারীর অভিযোগ, পুলিশ এতটাই বেপরোয়া ছিল যে ত্রিনাথবাবুকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হয় তাঁর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়েও।
রাতেই ওই এলাকার বাসিন্দারা পূর্ব যাদবপুর থানা ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা দাবি জানান, দোষী তিন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। শেষমেশ পুলিশ তদন্তের আশ্বাস দিলে মঙ্গলবার ভোরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুলিশ অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখে এসি-র রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।