মত্ত চালক ধরতে গিয়ে প্রহৃত পুলিশ

পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ বেহালা থেকে ডায়মন্ডহারবার রোড ধরে খিদিরপুরের দিকে মোটরবাইকে চড়ে আসছিলেন দুই যুবক। চালক এবং আরোহীর মাথায় কোনও হেলমেট ছিল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৪৬
Share:

—প্রতীকী ছবি।

কখনও থানার মধ্যে হানা দেওয়া রাজনৈতিক দলের নেতা-সমর্থকদের তাণ্ডব থেকে বাঁচতে ফাইলপত্র ঢাল করে টেবিলের নীচে লুকিয়ে প়়ড়়ছেন পুলিশকর্মী। কখনও বা নিষিদ্ধ শব্দবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে পুলিশকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের উপরে নিগ্রহের ঘটনা যে প্রায় রুটিনে পরিণত হয়েছে, শুক্রবার রাতের একটি ঘটনা ফের তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ বেহালা থেকে ডায়মন্ডহারবার রোড ধরে খিদিরপুরের দিকে মোটরবাইকে চড়ে আসছিলেন দুই যুবক। চালক এবং আরোহীর মাথায় কোনও হেলমেট ছিল না। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁরা মত্ত ছিলেন। বেপরোয়া গতিতে ছুটতে থাকা মোটরবাইকটি ট্র্যাফিক সিগন্যাল অমান্য করে তারাতলা মোড় পার হচ্ছিল। ঘটনাস্থলে ডিউটি করছিলেন দক্ষিণ-পশ্চিম ট্র্যাফিক গার্ডের সার্জেন্ট নুরুল ইসলাম মোল্লা।

পুলিশ সূত্রের খবর, মোটরবাইকটি আটকাতেই আরোহী প্রান্তিক গোস্বামী ট্র্যাফিক সার্জেন্টকে জোরে ধাক্কা মারেন। ধাক্কা মারায় সার্জেন্ট প্রতিবাদ করলে মোটরবাইক চালক অমিত পাণ্ডে ও আরোহী মিলে তাঁকে মারধর করেন। অভিযোগ, চালক ও আরোহী দু’জনেই মত্ত অবস্থায় ট্র্যাফিক সার্জেন্টের পোশাক ধরে টানাটানি করেন। তারাতলা মো়ড়ে দাঁড়িয়ে থাকা কর্তব্যরত অন্যান্য পুলিশ তখন ছুটে এসে বাইকচালক ও আরোহীকে

Advertisement

আটক করে নিউ আলিপুর থানায় নিয়ে যান। ট্র্যাফিক সার্জেন্টের অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতেই অমিত ও প্রান্তিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। আরোহী দু’জনেই পর্ণশ্রীর বাসিন্দা। আটক করা হয়েছে মোটরবাইকটি। ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদান, মারধর-সহ মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর মামলা রুজু হয়েছে।

বছর তিনেক আগে আলিপুর থানার মধ্যে ঢুকে পড়া দুষ্কৃতীদের থেকে বাঁচতে ফাইলপত্রকে ঢাল করে আত্মরক্ষার চেষ্টায় পুলিশকর্মীর ছবি ‘ভাইরাল’ হয়ে গিয়েছিল। আবার ট্র্যাফিক সিগন্যাল অমান্যকারী বেপরোয়া মোটরবাইক চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে শহরে প্রায়ই হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকে। কালীপুজোর সময় বেআইনি শব্দবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন সিঁথি থানার পুলিশকর্মী। গত সপ্তাহেও গভীর রাতে টালিগঞ্জ থানা এলাকায় এক দম্পতিকে হেনস্থার শিকার হতে দেখে কয়েক জন যুবকের আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এক পুলিশকর্মী। সে দিনই গভীর রাতে ওই পুলিশকর্মীকে খুঁজতে এলাকায় গিয়ে অন্য পুলিশকর্মীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।

আইনশৃঙ্খলা সামলানো যাঁদের হাতে সেই পুলিশের প্রতি মানুষের মনোভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন লালবাজার। প্রাক্তন এক পুলিশকর্তার পর্যবেক্ষণ, ‘‘পুলিশের উপরে বারবার হামলা ও হেনস্থার ঘটনা থেকে পরিষ্কার, উর্দিধারীদের উপরে মানুষের আস্থা কমেছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ রাষ্ট্র বা সরকারের প্রতিনিধি। কিন্তু সরকারের তাঁবেদারি করতে গিয়ে ক্ষোভের শিকার হতে হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন