সন্তান না হওয়ায় ‘গঞ্জনা’, জন্মদিনের দু’দিন পরই রহস্যমৃত্যু অন্তরার

সন্তান না হ‌ওয়ায় নিত্যদিন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের গঞ্জনা শুনতে হত। জন্মদিনের দু’দিন পরে বাগুইআটি থানার রঘুনাথপুরের ফ্ল্যাট থেকে অন্তরা আচার্য (৪০) নামে এক মহিলার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় এমনই অভিযোগ উঠল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা ‌‌

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০৪
Share:

অন্তরা আচার্য এবং ধৃত সুরজিৎ

সন্তান না হ‌ওয়ায় নিত্যদিন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের গঞ্জনা শুনতে হত। জন্মদিনের দু’দিন পরে বাগুইআটি থানার রঘুনাথপুরের ফ্ল্যাট থেকে অন্তরা আচার্য (৪০) নামে এক মহিলার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় এমনই অভিযোগ উঠল। রবিবার অন্তরার স্বামী সুরজিৎ সরকার ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন মৃতার বাবা রণজিৎ আচার্য। আত্মহত্যায় প্ররোচনার ধারায় মামলা রুজু করে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী সুরজিৎকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

মৃতার বাবার অভিযোগ, ২০০৬ সালে বিয়ের পর থেকেই অন্তরার উপরে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালাতেন তাঁর স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ। সন্তান না হলে তাঁকে মরে যাওয়ার কথাও বলা হত। পুলিশ জানায়, গত বুধবার রাতে রঘুনাথপুরের আবাসনের একতলার ফ্ল্যাট থেকে অন্তরার দেহ মেলে। পুলিশের দাবি, ওই দিনও সুরজিৎ সকালে সন্তান না হ‌ওয়া নিয়ে অন্তরাকে কথা শুনিয়েছিলেন বলে তাঁর বাবা অভিযোগ করেছেন।

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করার পরে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন বিরাটির অন্তরা। মেয়ের ইচ্ছাকে গুরুত্ব না দিয়ে বিয়ে দেওয়ার জন্য সোমবার আফশোস করছিলেন রণজিৎবাবু ও মা আলপনা আচার্য। ওই বৃদ্ধ বলেন, “একটি সংস্থায় অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করছিল মেয়ে। সেখানেই ওকে পছন্দ হয় সুরজিতের। ছেলের বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়। মেয়ে বলেছিল, ‘আমি কি বোঝা হয়ে গিয়েছি?’ তখন ভাবলাম, বিয়ে তো এক দিন দিতেই হবে!”

Advertisement

আলপনা জানান, গত ২৩ নভেম্বর তাঁরা গুজরাত গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ অন্তরার সঙ্গে ফোনে কথা হয়। রাতে ফের ফোন করলে অন্তরা ধরেননি। সুরজিৎকে ফোন করেও উত্তর মেলেনি। শেষে কাঁকুড়গাছিতে ছেলে অরিজিৎ আচার্যকে অন্তরার খবর নিতে বলেন। শুক্রবার শহরে না ফেরা পর্যন্ত বোনের মৃত্যুসংবাদ মা-বাবাকে দেননি অরিজিৎ। এ দিন অরিজিৎ বলেন, “মায়ের ফোন পাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে জামাইবাবুর ফোন থেকে এক জন জানান, দিদি আত্মহত্যা করেছে। আবাসনের রক্ষী জানান, দিদিকে চিনার পার্কের হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে।” আলপনাদেবীর বক্তব্য, মেয়ের দেহ কী অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে, তা কেউ জানাননি। ‌এ দিন নিরাপত্তারক্ষী ধর্ম থানদার বলেন, “সুরজিৎবাবু বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ফোন করে বৌদির খোঁজ করেন। কিন্তু কোনও সাড়াশব্দ পাইনি। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ হন্তদন্ত হয়ে ফেরেন তিনি। দেখেন, বৌদির দেহ ঝুলছে। দেখে বলেন, অন্তরা আমার জান, এ কী করলে!’’ অন্তরার সাড়া না পাওয়ায় বিকেলেই কেন বাড়ি এলেন না সুরজিৎ, প্রশ্ন তুলেছেন আলপনা। কেনই বা তাঁদের খবর দেওয়া হল না, জানতে চাইছেন তার উত্তরও।

আরও পড়ুন: হঠাৎ খুন না পরিকল্পিত? রজত মৃত্যুরহস্যে এখনও দিশেহারা পুলিশ

মায়ের আরও অভিযোগ, কয়েক মাস ধরেই অন্তরার উপরে প্রচণ্ড অত্যাচার করছিলেন সুরজিৎ। তাঁর দাবি, “সুরজিতেরই সমস্যা আছে। চিকিৎসা করাতে চায়নি। সন্তান না হওয়ার জন্য মেয়েকেই দায়ী করত।” সুরজিতের মা বীথি সরকার বলেন, “ওরা বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের থেকে আলাদা থাকছে। শারীরিক, মানসিক অত্যাচার তা হলে কী ভাবে করলাম! স্বামী-স্ত্রীর যে সম্পর্ক নিয়ে কথা উঠছে, তা আমার জানা নেই।” পুলিশ সূত্রের খবর, তাঁদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক ছিল না। তা নিয়ে দু’জনেই হতাশায় ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন সুরজিৎ।

কিন্তু অশান্তির কথা জেনেও কেন সতর্ক হলেন না অন্তরার বাবা-মা? অন্তরার বাবা বলেন, “বলেছিলাম, মা তুই বেরিয়ে আয়। ভয় হয়, যদি অঘটন ঘটে! ও বলত, আমি অঘটন ঘটানোর মেয়ে ন‌ই।” আলপনার অভিযোগ, মেয়েকে খুন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “ওই দিন দুপুরে ফোনে অন্তরা এক বান্ধবীকে বিকেলে দেখা করার কথা বলেছিল। ওর কথায় অস্বাভাবিকতা ছিল না বলেই শুনেছি। মেয়ে আত্মহত্যা করতেই পারে না। যারা ওর এই পরিণতির জন্য দায়ী, তাদের কঠিন শাস্তি চাই।” তিনি বলেন, ‘‘ঠিক করেছিলাম এ বার মাম্পিকে নিয়ে আসব‌ই। আমদাবাদে চাকরির ব্যবস্থাও করেছিলাম। সেই সুযোগটা দিল না!’’

পুলিশ জানিয়েছে, কোন‌ও সুইসাইড নোট মেলেনি। অভিযোগের ভিত্তিতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে। এটি খুন না কি আত্মহত্যা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন