নিজের পাতা ফাঁদেই পুলিশের জালে ব্যবসায়ী

তদন্তকারীদের কথায়, গত শনিবার দুপুরে বারুইপুর থানার চম্পাহাটি এলাকায় তিন দুষ্কৃতী প্রায় ৭০ কিলোগ্রাম রুপো লুট করে পালিয়েছে বলে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন দেবকুমার। দুষ্কৃতীরা তাঁকে ভিতরে আটকে শাটার নামিয়ে তালা দিয়ে চলে গিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৮ ০২:২০
Share:

প্রতীকী চিত্র।

নিজের দোকানে চুরি করিয়ে পুলিশের জালে ধরা পড়লেন এক ব্যবসায়ী। দিন কয়েক আগের ওই চুরির ঘটনায় বুধবার রাতে দোকানের মালিক দেবকুমার দেবনাথ-সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে বারুইপুর থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম সরমান গাজি, আব্দুর রহমান গাজি এবং রশিদ মোল্লা।

Advertisement

তদন্তকারীদের কথায়, গত শনিবার দুপুরে বারুইপুর থানার চম্পাহাটি এলাকায় তিন দুষ্কৃতী প্রায় ৭০ কিলোগ্রাম রুপো লুট করে পালিয়েছে বলে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন দেবকুমার। দুষ্কৃতীরা তাঁকে ভিতরে আটকে শাটার নামিয়ে তালা দিয়ে চলে গিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। ওই সময় তাঁর এক মাত্র কর্মচারী সরমান দোকানে ছিলেন না বলে তিনি দাবি করেছিলেন। ভিতর থেকে ধাক্কাধাক্কির আওয়াজ শুনে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তালা ভেঙে দেবকুমারকে উদ্ধার করেন।

পুলিশ কর্তাদের কথায়, প্রথম থেকেই দেবকুমারের বয়ানে অসঙ্গতি ছিল। তদন্তে দেখা যায়, একটি সরু গলির এক দিকে দোকানটি। আশেপাশে রয়েছে আরও দোকান। ভর দুপুরে সেখানে লুট করার ঝুঁকি কোনও দুষ্কৃতীই নেবে না। তা ছাড়া লুট করতে এসে মারধর করা হয়নি, মুখও বাঁধা হয়নি। ব্যবসায়ীর কথা অনুযায়ী, সরমানকে বারুইপুরের সীতাকুণ্ডু এলাকায় পাঠিয়ে ছিলেন তিনি। যা ওই দোকান থেকে কয়েক কিমি দূরে। কিন্তু সরমানের মোবাইলের অবস্থান ওই সময়ে চম্পাহাটিই দেখাচ্ছিল। তদন্তে নেমে জানা যায়, দেবকুমারবাবুর বন্ধকী কারবার রয়েছে। বহু লোকের রুপো তিনি দোকান রেখেছিলেন। পরে আরও জানা যায়, প্রায় ৭০ কিলোগ্রাম রুপো রয়েছে বলে তিনি বিমাও করিয়ে রেখেছেন। তা ছাড়া ব্যাঙ্ক থেকে দেবকুমারবাবু ৫০ লক্ষ টাকা ঋণও নিয়েছেন।

Advertisement

বারুইপুর জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ওই এলাকায় আরও বড় গয়নার দোকান রয়েছে। দুষ্কৃতীরা তা সত্ত্বেও কেন ছোট দোকানে হানা দিল? তদন্তকারীরা জানান, দেবকুমারের কথায় একাধিক অসঙ্গতি মেলায় সরমানের মোবাইলে আড়ি পাতা হয়। জানা যায়, সরমানের দাদা আব্দুর কয়েক কিলোগ্রাম রুপো বিক্রি করা চেষ্টা করছেন। প্রথমে মনে হয়েছিল, সরমানের যোগসাজশেই দেবকুমারবাবুর দোকানে লুট করা হয়েছিল। সরমানকে আটক করে জেরা করতেই ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে আসে। জানা যায়, দেবকুমারই ওই রুপো সরমান ও তাঁর দাদা আব্দুরকে রাখতে দিয়েছিলেন। কিছু রুপো সরমানের বন্ধু কাঠমিস্ত্রি রশিদ মোল্লার কাছে রেখেছিলেন। ওই দিন রুপো নিয়ে যাওয়ার পরে শাটারে তালা দিয়েছিলেন সরমানই। বুধবার রাতেই উদ্ধার করা হয় ১২ কিলোগ্রাম রুপো।

আদতে ১২ কিলোগ্রাম রুপোই সরমান, আব্দুর ও রশিদকে রাখতে দিয়েছিলেন দেবকুমার। পরে ফেরত নেওয়া হবে বলে তিন জনকে জানিয়েও দিয়েছিলেন। রুপো চুরির বিমার টাকা পেলে সেখান থেকে তিন জনকে সমান ভাগ করে দেওয়া হবে বলে দেবকুমার টোপও দিয়েছিলেন। বারুইপুর জেলা পুলিশের সুপার অরিজিৎ সিংহ জানান, ‘‘দেবনাথের ব্যবসায় মন্দা চলছিল। সে কারণেই চুরি ঘটনা সাজিয়ে বিমার টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছিলেন। বিমার টাকা পেলে ৫০ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ শোধ করার পরে বাকিটা তিন জনকে ভাগ করে দেবেন বলে টোপ দিয়েছিলেন দেবকুমার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন