পঞ্চমীর ভিড়কে পুলিশের টক্কর

শাস্ত্রমতে দেবীর এখনও বোধন হয়নি। কিন্তু পঞ্চমীর বিকেলে রাসবিহারী, চেতলা, শ্যামবাজার, উল্টোডাঙা, হাতিবাগান বুঝিয়ে দিল, ভিড়ের বোধন হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৩৫
Share:

জনজোয়ার: পঞ্চমীর সন্ধ্যায় দর্শনার্থীদের ঢল। রবিবার, গড়িয়াহাটে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

শাস্ত্রমতে দেবীর এখনও বোধন হয়নি। কিন্তু পঞ্চমীর বিকেলে রাসবিহারী, চেতলা, শ্যামবাজার, উল্টোডাঙা, হাতিবাগান বুঝিয়ে দিল, ভিড়ের বোধন হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই!

Advertisement

বিকেলে চেতলায় দাঁড়ানো এক পুলিশকর্মীর ওয়াকিটকিতে বার্তা আসছিল, ক্রমশ গাড়ির জট বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে জনতার স্রোত বাদামতলা, ৬৬ পল্লি হয়ে এগোচ্ছে চেতলা অগ্রণীর দিকে! সন্ধ্যায় ভিড় দেখে উচ্ছ্বসিত হাতিবাগানের কাশী বোস লেনের পুজোর সম্পাদক সোমেন দত্ত। শিল্পী প্রদীপ দাসের তৈরি ‘বারান্দা’য় দলে দলে লোক ঢুকছে। ওই এলাকার ভিড় সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন পুলিশ ও পুজো কমিটির সদস্যেরা। ত্রিধারা, দেশপ্রিয় পার্ক, বালিগঞ্জ কালচারাল, সমাজসেবী, হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীনের ভিড় দেখে পুলিশের কয়েক জন স্বেচ্ছাসেবী বলছিলেন, পঞ্চমীতেই যেন অষ্টমীর মেজাজ!

এমনিতেই তৃতীয়া-চতুর্থী থেকে মণ্ডপ ভ্রমণ গত কয়েক বছরে রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পুজোকর্তা ও পুলিশকর্মীরা বলছেন, এ বার পঞ্চমীর ভিড় আরও বেড়েছে। আসলে দিনটাও যে রবিবার। সব মিলিয়ে কার্যত ভিড়ের বোধনের মাহেন্দ্রযোগ তৈরি হয়েছিল। পঞ্চমীর বিকেলে এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনের ভিড় দেখে বোঝা গিয়েছে, উৎসবের কেনাকাটার ‘ফিনিশিং টাচ’ শেষ হয়নি। বিকেলে হাতিবাগান, শ্যামবাজারে কেনাকাটা ও পুজো দেখার ভি়ড়ে কিছু ক্ষণ গতি কমে গাড়ির।

Advertisement

ভিড়, যানজট বনাম পুলিশ! বন্ধুত্বপূর্ণ টক্করের নামই উৎসব কাপ। বৃষ্টিস্নাত চতুর্থীতে যানজট, ভিড়ের কাছে কার্যত গোল খেতে হয়েছিল পুলিশকে। এ দিন মাঠ শুকনো হতেই ম্যাচে ফিরেছেন উর্দিধারীরা। ভি়ড় যতই হোক, পরিস্থিতি আয়ত্তে রাখতে লড়ে গিয়েছেন পুলিশকর্মীরা। কলকাতার রাস্তায় চোখে প়়ড়েছে নীল টি-শার্ট পরা পুলিশের স্বেচ্ছাসেবকদের সক্রিয়তাও!

উৎসবের শহর অথচ যানজট নেই! তেমন হয় নাকি? পুলিশের সূত্র জানাচ্ছে, রবিবার গাড়ির সংখ্যা এমনিতেই কম থাকে। ভি়ড় রাস্তায় নামার সঙ্গে সঙ্গে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, চেতলা, নিউ আলিপুর, হাতিবাগান, উল্টোডাঙা, শ্যামবাজারে গাড়ির উপরে চাপ পড়েছে। ফলে যানজট হয়েছে। সন্ধ্যায় ভিড়ের জন্য খন্না মোড় থেকে অরবিন্দ সরণি বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাসবিহারী অ্যাভিনিউতে ভিড় ও যানজট সামলাতে নাকাল হতে হয়েছে ট্র্যাফিক পুলিশের দুঁদে অফিসারদেরও।

গড়িয়ার মিতালি সঙ্ঘের ভিড়ের দাপটে সোনারপুরের দিকে গাড়ি ঢোকা সাময়িক ভাবে বন্ধ করতে হয়েছিল। লেক টাউনে শ্রীভূমির ভিড়ের ছাপ ভিআইপি ছাড়িয়ে উল্টোডাঙা, বাইপাসে আসছিল। যশোর রোড থেকে ভিড় সোজা ঢুকেছে দমদম পার্ক তরুণ সঙ্ঘের ‘গণশা’-কে দেখতে। খন্না মোড়ে গাড়ি বন্ধ হলেও পিলপিলে ভি়ড় দেখে হাসি ফুটেছে নলিন সরকার স্ট্রিটের পুজো কমিটির মুখে। সেই ভি়ড় নবীন পল্লি, শিকদারবাগান ঘুরে চলে গিয়েছে টালা বারোয়ারির দিকে। মধ্য কলকাতার কলেজ স্কোয়ার, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারেও ভিড়ের ঢল নেমেছে।

আর জি কর হাসপাতালের সামনের ভিড় পায়ে পায়ে ঢুকছে সরকারবাগান সম্মিলিত সরকারবাগানের দিকে। শতবর্ষ পেরোনো এই পুজো এ বার হাতিয়ার করেছে ‘ফেসবুক’-কে। মার্ক জুকারবার্গের সংস্থার হাত ধরে এ বার #বিশ্বপুজোয় সামিল হয়েছে বালিগঞ্জ কালচারালও। চতুর্থীর রাতের ভিড় দেখে খুশি হয়েছিলেন সন্তোষপুর লেকপল্লির কর্তা সোমনাথ দাস। ‘হলুদের মণ্ডপে’ জনতার ঢল দেখে পঞ্চমীর রাতে তিনি বাঁধনছাড়া। পুলিশ সূত্র বলছে, সন্ধ্যার পর থেকেই ভি়ড়ের জেরে গাড়ির চাকা থমকে যায় হরিদেবপুর ৪১ পল্লি, অজেয় সংহতির আশপাশে। নাকতলা উদয়ন, পাটুলি, নেতাজিনগর দুর্গোৎসব কমিটির মণ্ডপেও ভিড় জমেছে। পুজোর আগে মাঝেরহাট সেতু ভাঙায় ‘শোকস্তব্ধ’ হয়ে গিয়েছিলেন বেহালার পুজোকর্তারা। কিন্তু পঞ্চমীর ভিড়ে বোঝাল, পুজোপাগলদের ‘দাবায়ে রাখা যাবে না’।

পুলিশকর্তারা বলছেন, ভিড়ের রাস্তা পারাপারের ফলেই যানজট বেড়েছে। রাস্তা বন্ধ করতে হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারেরা সাময়িক ব্যবস্থাও নিয়েছেন। তাতে কখনও সমস্যা কেটেছে, কখনও কাটেনি। এক ট্র্যাফিক কর্তা বলছেন, ‘‘উৎসবের সময়ে যানজট পুরোপুরি আটকানো অসম্ভব। তবে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যায়নি।’’

পঞ্চমী শেষে স্কোরবোর্ড বলছে, ভিড়, যানজট বনাম পুলিশের টক্কর হয়েছে সমানে সমানে। কিন্তু বোধনের আগের রাতে জিতেছে পুজোপাগলদের ভিড়ই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন