বেপরোয়া বাইক ধরতে বিপদের শঙ্কায় পুলিশই

জীবনকে বাজি রেখে তাঁরা সড়কপথে কার্যত ‘উড়ে’ চলেন। নিয়ম অনুযায়ী কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী কিংবা টহলদারি পুলিশদেরই দায়িত্ব ওই সমস্ত বেপরোয়া মোটরবাইক চালকদের ধরপাকড় করার।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:১৩
Share:

রাতের শহরে দুরন্ত গতিতে ছুটছে মোটরবাইক। হেলমেটের বালাই নেই কারও। পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুলের পাশে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ওঁদের ধরবে কে?

Advertisement

জীবনকে বাজি রেখে তাঁরা সড়কপথে কার্যত ‘উড়ে’ চলেন। নিয়ম অনুযায়ী কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী কিংবা টহলদারি পুলিশদেরই দায়িত্ব ওই সমস্ত বেপরোয়া মোটরবাইক চালকদের ধরপাকড় করার।

কলকাতা থেকে জেলার পুলিশকর্মী, সকলকেই রাস্তায় নিয়ম না মানা মোটরবাইক চালকদের ধরে নিয়মিত কেস দিতে দেখা যায়। কিন্তু সেই পুলিশকর্মীরাই দাবি করছেন, ঝড়ের গতিতে ‘উড়ে’ চলা মোটরবাইক ধরা মানে উভয় পক্ষেরই বিপদ ডেকে আনা। তাই অনেক সময়ে পুলিশকেও নীরব দর্শকের ভূমিকা নিতে হয়।

Advertisement

শহর থেকে শহরতলির পুলিশ কর্মীদের ব্যাখ্যা, ঝড়ের গতিতে ছুটে চলা মোটরবাইকগুলির গতি খুব কম হলেও ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে। সেই সব বাইক ধরতে গিয়ে অনেক সময়েই দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ সূত্রে খবর, কেস থেকে বাঁচতে পুলিশকর্মীকেই ধাক্কা মেরে চোখের নিমেষে উধাও হয়ে গিয়েছেন কোনও বাইকআরোহী, এমন উদাহরণও আছে। আবার পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে আরও দ্রুত গতিতে গাড়ির মাঝখান দিয়ে বেরোতে গিয়ে বাইকের চাকা পিছলে বড়সড় দুর্ঘটনাও ঘটেছে। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বেপরোয়া বাইক ধরে কেস করতে হয় ঠিকই, কিন্তু নিজের প্রাণের মায়াও তো রয়েছে।’’ আবার হাওড়া কমিশনারেটের এক ট্র্যাফিক অফিসারের মন্তব্য, ‘‘আমরা ধরতে গিয়ে যদি কোনও বাইকআরোহী ছিটকে পড়ে মারা যান, তখন দায় তো আমাদের উপরেই বর্তাবে।’’ তবে শুধু দিন নয়। রাতের শহরে দ্রুতগতিতে চলা মোটরবাইকের সংখ্যা বাড়ে বলে জানাচ্ছেন পুলিশকর্মীরাই। শহরতলির রাস্তা ছেড়ে এখন জাতীয় সড়ক এবং এক্সপ্রেসওয়েগুলিতেও উঠছে মোটরবাইকের ‘ঝড়’।

রাজ্যের এডিজি (ট্র্যাফিক) বিবেক সহায় বলেন, ‘‘প্রতিনিয়ত ধরপাকড়ের ফলে আগের থেকে বাইকের বেপরোয়া গতি কমেছে। রাস্তায় আগুপিছু করে ব্যারিকেড দিয়ে রাখাতেও ওই সব বাইকচালকেরা গতি কমাতে বাধ্য হচ্ছেন।’’ তবে চালকদের একাংশ যে কোনও নিয়ম না মেনেই ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বাইক চালাচ্ছেন, তা মেনে নিয়ে ওই পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘এটা তো সিনেমা নয় যে পুলিশ পিছনে তাড়া করবে। তবে রাস্তায় এখন টহলদারি গাড়ি, ওয়্যারলেস পুলিশের সংখ্যা বেড়েছে। এক জায়গা থেকে কেউ পালালেও অন্যত্র ধরা পড়বেই। তবে সব নিয়ম উপেক্ষা করে কেউ চললে তিনি নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবেন।’’

শহর কিংবা শহরতলির ঘিঞ্জি রাস্তায় মোটরবাইক নিয়ে বেশি গতিতে যাতায়াত করা উচিত নয় বলেই দাবি বাইক রেসিংয়ের সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞ চালকদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, ওই সমস্ত রাস্তায় প্রতি ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতে যাওয়াই ‘সুস্থ’ ভাবে বাইক চালানোর নিয়ম। জাতীয় সড়কের ক্ষেত্রে এই গতি হওয়া উচিত ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের অনেকে তা একেবারেই মানেন না বলে অভিযোগ। ঘিঞ্জি রাস্তাতেও অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ওই তরুণেরা বাইক চালান ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে। এক সময়ে বাইক রেসার হিসেবে পরিচিত নীলাদ্রি বসু বলেন, ‘‘এখন ১৫-১৬ বছরের ছেলেরা উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বাইক নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মোটরবাইকটি তাদের বাবা কিংবা মায়ের নামে কেনা হয়েছে। তাই অভিভাবকদের আগে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন