তালাবন্ধ ঘরে মৃত দিদির দেহ আগলে ভাই

মঙ্গলবার ওই ঘরে ঢুকে এমন দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিলেন দমদম থানার পুলিশকর্মীরা। পচা গন্ধে সেই ঘরে ঢুকতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় তাঁদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৫৯
Share:

ঘর থেকে এ ভাবেই উদ্ধার করা হয় বিশ্বরূপ দত্তকে। মঙ্গলবার, দমদমে। নিজস্ব চিত্র

একটা খাট, আর মাঝারি ঘরটিতে ইতস্তত ছড়ানো বিভিন্ন জিনিসপত্র। বিছানার উপরে জড়োসড়ো হয়ে বসে মাঝবয়সি এক ব্যক্তি। মেঝেয় পড়ে পচাগলা এক দেহ। ঘরময় পোকাদের দাপাদাপি। খাটে বসা ওই ব্যক্তি পুলিশ দেখে বলেন, ‘‘দিদি অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছে।’’

Advertisement

মঙ্গলবার ওই ঘরে ঢুকে এমন দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিলেন দমদম থানার পুলিশকর্মীরা। পচা গন্ধে সেই ঘরে ঢুকতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় তাঁদের। এমন ঘটনায় বিস্মিত দমদম জগদীশপুরের জ’পুরের বাসিন্দারা।

পুলিশ জানিয়েছে, বাইরে থেকে তালাবন্ধ ওই ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে রুমা দত্ত (৫৫) নামে এক প্রৌঢ়ার দেহ। রুমাদেবীর দেহের সঙ্গে ওই ঘরেই ছিলেন তাঁর ভাই, বছর পঞ্চাশের বিশ্বরূপ দত্ত। আপাতত পুলিশ তাঁকে থানাতেই রেখেছে। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জেনেছেন, দু’জনেই মানসিক সমস্যার শিকার। কাছাকাছি এলাকার এক আত্মীয়ার বাড়ি থেকে তাঁদের রোজকার খাবার আসত।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, জ’পুরের ওই আবাসনের ফ্ল্যাটে বছর দেড়েক আগে ভাড়ায় এসেছিলেন রুমাদেবীরা। স্থানীয় বাসিন্দা ঈশা সেন জানান, প্রথমে শুধু বিশ্বরূপবাবুই ওই ঘরে থাকতেন। সারা দিন দরজা-জানলা বন্ধ থাকত। তখন বাড়ির মালিককে জিজ্ঞাসা করে জানা যায়, বাড়িটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ইশা বলেন, ‘‘ওই মহিলাকে মাঝেমধ্যে জানলায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতাম। দেখে মনে হত, উনি মানসিক ভাবে সুস্থ নন। তবে কিছু জানতে চাইলে ঠিক মতোই জবাব দিতেন। উনিই বলেছিলেন, তাঁর এক মাসতুতো দিদি দিনে এক বার খাবার পাঠাতেন। তাই খেয়ে দু’বেলা কাটাতে হত।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক দিন ধরে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। সোমবার রাতে তা বহু গুণ বেড়ে যায়। মঙ্গলবার সকালে গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাবাসীরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ জেনেছে, বিশ্বরূপবাবুদের ওই আত্মীয়াই ঘরটি ভাড়ায় নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। বাইরে থেকে ঘর তালা দিয়ে রাখতেন তাঁরা। সারা দিনে এক বার তিনি বা তাঁর ছেলে সঞ্জয় দেবনাথ খাবার দিয়ে যেতেন। আট দিন আগে সঞ্জয়েরা বাইরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সঞ্জয় জানান, বিশ্বরূপবাবুদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

এ দিন বিশ্বরূপবাবু বলেন, ‘‘বেশ কয়েক দিন আগে দিদিকে খেতে দিয়েছিলাম। খাওয়ার পরের দিন দিদি অজ্ঞান হয়ে গেল। তার পর থেকে অজ্ঞানই হয়ে আছে। আমি তো তালা বন্ধ অবস্থায় থাকি। গন্ধ লাগছিল। দিদি ছিল তো, তাই আমিও ছিলাম।’’ পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, কয়েক বছর আগে রুমাদেবীকে ছেড়ে চলে যান তাঁর স্বামী। কাছাকাছি ওই আত্মীয়া ছাড়া আর কোনও পরিজনের খোঁজ মেলেনি। পুলিশ জানিয়েছে, কত দিন আগে রুমাদেবী মারা গিয়েছেন, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আসার পরেই তা জানা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন