পারভেজ আলম। —নিজস্ব চিত্র।
ঋণে জর্জরিত হয়ে মামতো ভাইয়ের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়েছিল ইমরান। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই ইমরানকে খুনের ছক করে মামাতো ভাই পারভেজ আলম। খুনের কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে আসছে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথাও। সোমবার সকালে প্রগতি ময়দান থানা এলাকার আড়ুপোতায় সিআইটি রোডের বাসিন্দা ইমরান খানের খুনের ঘটনায় পারভেজকে গ্রেফতার করল প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ।
বছরের শেষ দিন সকালেই ইমরানের দেহ উদ্ধার হয় রাস্তার পাশে একটি ঝোপে। মাথার পেছনে ছিল আঘাতের চিহ্ন। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল, রবিবার দাদার অ্যাপ ক্যাব নিয়ে রাতে বেরোয় ইমরান। তারপর সকালে তাঁর দেহ পাওয়া যায়। পাশেই দাঁড়করানো ছিল তাঁর অ্যাপ ক্যাব। মৃতের সোনার চেন বা টাকা পয়সাতেও হাত দেয়নি আততায়ী। সেখান থেকেই তদন্তকারীদের ধারণা হয়, লুঠের জন্য নয়, বরং ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরেই এই খুন। তদন্তে নেমে জানা যায় বাজারেইমরানের অনেক টাকা ঋণ হয়ে গিয়েছিল। পাওনাদাররা তাগাদা দিচ্ছিল।প্রথমে সেই তথ্য মাথায় রেখে এগোতে গিয়েই অন্য এক সূত্র পান তদন্তকারীরা। মৃতের মোবাইল ফোনের সূ্ত্র ধরে জানতে পারেন, ওই দিন রাতে মামাতো ভাই পারভেজের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়। তারপর ইমরানের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যায় উত্তর পঞ্চান্ন গ্রাম।
পারভেজ সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ইমরানের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয় পারভেজের। আদতে বিহারের নওয়াদার বাসিন্দা পারভেজ হাওড়ায় থাকে। সেখানে একটি বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার লরি চালায় সে। এক তদন্তকারী বলেন, “ ইমরানের পরিবার ওই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে। তারপর থেকেই ইমরানের বাড়িতে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় পারভেজের।”
(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন— ফিরে দেখা এই দিন।)
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই রাতে প্রথমে ইমরান উত্তর পঞ্চান্ন গ্রামে পারভেজের সঙ্গে দেখা করে। সেখানে পারভেজ ইমরানকে ঘটনাস্থলে অপেক্ষা করতে বলে। জায়গাটি বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়ে থেকে একটু ভিতরে। খুবই নির্জন। পারভেজ তার লরি নিয়ে কাশীপুরের গোডাউনে যায়। সেখানে জিনিসপত্র নামিয়ে ওই নির্দিষ্ট জায়গায় আসে পারভেজ।
আরও পড়ুন: অনটনে জেরবার, অসুস্থ ছেলে, বৃদ্ধা মাকে নিয়ে মহিলার আত্মহত্যার চেষ্টা গড়ফায়
এক তদন্তকারী বলেন, “রীতি মতো খুনের প্ল্যান করেই এসেছিল পারভেজ। লরি নিয়ে এসে সে বনেট খোলে। ইমরানকে বলে একটি যান্ত্রিক ত্রুটির কথা। ইমরান যখন বনেট তুলে লরির ইঞ্জিন দেখতে ব্যস্ত তখন পেছন থেকে ভারি লোহার কিছু দিয়ে পর পর মাথায় আঘাত করে পারভেজ। তারপর দেহ টেনে ঝোপে ফেলে দেয়।”
আরও পড়ুন: বর্ষবরণের রাতে তরুণীকে হেনস্থা, বোন এবং হবু স্বামীকে বেধড়ক মার, গ্রেফতার ৬
কলকাতা পুলিশেক গোয়েন্দা প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন,“আমরা অভিযুক্তের বয়ান খতিয়ে দেখছি। কী দিয়ে মারা হয়েছে সেটাও দেখা হচ্ছে।” তবে সূত্রের খবর, প্রাথমিকভাবে জেরায় পারভেজ জানিয়েছে, লরির ইস্পাতের রেঞ্চ দিয়ে ইমরানকে মারে সে।
(কলকাতা শহরের রোজকার ঘটনার বাছাই করাবাংলা খবরপড়তে চোখ রাখুন আমাদেরকলকাতাবিভাগে।)