এ যেন অনেকটা ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতার চামার কুলপতির নিদান। সেখানে রাজার হুকুম ছিল, তাঁর পায়ে ধুলো লাগা চলবে না। তাই ধুলো ঝেঁটিয়ে, কখনও জল দিয়ে ধুলোকে কাদা করে সমস্যা সমাধানের ব্যর্থ চেষ্টা চলল। শেষে কুলপতি নিদান দিলেন, ‘নিজের দু’টি চরণ ঢাকো, তবে/ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।
প্রায় সেই কায়দাতেই এ বার ব্যাঙ্ক-প্রতারকদের খোঁজ চালানোর পাশাপাশি প্রতারিতদের সচেতন করতে উদ্যোগী হল পুলিশ। মাঝেমধ্যেই ব্যাঙ্ককর্মীর ভুয়ো পরিচয় দিয়ে ফোন করে এটিএমের পাসওয়ার্ড জেনে টাকা হাতানোর ঘটনা ঘটছে। ফাঁদে পড়ে টাকাও খোয়াচ্ছেন অনেকে। বহু ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা পুলিশের নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছে। পরের পর অভিযোগ পেয়ে পুলিশও নাজেহাল।
তাই গ্রাহকেরা যাতে আর এই ফাঁদে পা না দেন, সে জন্য সচেতনতা প্রচারাভিযানে নেমেছে যাদবপুর থানা। অটোতে ঘুরে মাইকে জোর প্রচার শুরু হয়েছে পাড়ায় পাড়ায়। পুলিশের দাবি, ফলও মিলেছে হাতেনাতে। ইতিমধ্যেই অনেকটা কমে গিয়েছে এমন ঘটনা।
পুলিশ জানায়, গত জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে পাঁচটি অভিযোগ জমা পড়ে যাদবপুর থানায়। ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুয়ো পরিচয় দেওয়া কর্মীর খোঁজ মিলত না। উদ্ধার হত না টাকাও। তাই মানুষকে সচেতন করা শুরু হয়’’— বলছেন লালবাজারের এক কর্তা। তিনি জানান, সাউথ সুবার্বন ডিভিশনের মধ্যে যাদবপুরে এমন অভিযোগ সব চেয়ে বেশি জমা পড়ত। তাই ওই থানা এলাকাই বেছে নেওয়া হয়।
পুলিশকর্মীরা অটোয় চেপে মাইকে সচেতনতার প্রচার শুরু করেন। বলা হয়, ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয় দিয়ে কেউ ফোন করে তথ্য চাইলে দেবেন না, প্রয়োজনে ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখা করুন। তেমন ফোন এলেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও বলা হয়। এ বছর অভিযোগের সংখ্যা মাসে গড়ে পাঁচ থেকে একে নেমে এসেছে। তবে প্রচার এখনও চলছে।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান বিশাল গর্গ বলেন, ‘‘যাদবপুর ডিভিশনেই এমন অভিযোগ বেশি হতো। তাই প্রাথমিক ভাবে ওই এলাকা বেছে নেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সুফল পাওয়া গিয়েছে। চেষ্টা হচ্ছে একই পদ্ধতিতে গোটা কলকাতায় প্রচার অভিযান চালু করার।’’