পুজোর আগেই রাতপথে অবাধ্য যানশাসনে পুলিশ

উৎসব এখনও শুরু হয়নি। তার আগেই রাতের বেপরোয়া যান শাসনে নেমে পড়ল লালবাজার। শুক্রবার রাতে শহরের তিনটি ট্রাফিক গার্ডকে দিয়ে বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৪৮
Share:

উৎসব এখনও শুরু হয়নি। তার আগেই রাতের বেপরোয়া যান শাসনে নেমে পড়ল লালবাজার। শুক্রবার রাতে শহরের তিনটি ট্রাফিক গার্ডকে দিয়ে বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে। সূত্রের খবর, প্রথম রাতের অভি‌যানেই পুলিশের জালে এসেছে রেস্তোরাঁ মালিক, ব্যবসায়ী সন্তান-সহ অনেক রাঘববোয়াল। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে দেশি-বিদেশি ১৪টি গাড়ি।

Advertisement

পুলিশের খবর, দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। গত বার তৃতীয়া থেকে ষষ্ঠীর রাত পর্যন্ত মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ১৬ জনের। তার উপরে দিন কয়েক আগে হাজরা রো়ডে বেপরোয়া গা়ড়ি চালানোয় প্রাণ গিয়েছে এক কলেজপড়ুয়া তরুণের। সেই কারণেই রাতে মত্ত অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি এবং মোটরবাইক চালানো রুখতে বিশেষ তৎপর হয়েছেন লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা। পুজোর সময়েও যে এই তৎপরতায় রাশ টানা হবে না, সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন লালবাজারের ট্রাফিক বিভাগের কর্তারা।

লালবাজারের খবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় সাউথ, সাউথ-ইস্ট গার্ড এবং ইস্ট ট্রাফিক গার্ডের ওসি-দের কাছে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বিশেষ নির্দেশ যায়। তাতে বলা হয়, ওই তিনটি গার্ডের এক্তিয়ারে থাকা বিশেষ বিশেষ এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেপরোয়া গাড়ি পাকড়াও করতে হবে। সেই মতো পার্ক স্ট্রিট, গোলপার্ক, শরৎ বসু রোড, পার্ক সার্কাস কানেক্টরের মতো জায়গায় মোতায়েন থাকেন অফিসারেরা। বেপরোয়া গাড়ি দেখলেই গার্ডরেল টেনে আটকেছেন তাঁরা। তার পরেই প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এক অফিসার বলেন, ‘‘অন্য সময় হলে পার্ক স্ট্রিটের ওই রেস্তোরাঁ-মালিকের মতো অনেকেই পুলিশি যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে শাস্তি এড়াতে পারতেন। কিন্তু খোদ সিপি-র নির্দেশ, তাই এ বার রেহাই মেলেনি।’’

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতের অভিযানের পরে শনিবার লালবাজারের ট্রাফিক গার্ডের ওসি-দের নিয়ে বৈঠক করেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) বিনীত গোয়েল-সহ পদস্থ কর্তারা। কী ভাবে এই অভিযান চালানো হবে এবং পুজোর সময়ে বেপরোয়া গাড়ি ও মোটরবাইক রুখতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা নিয়েও আলোচনা করেন পুলিশকর্তারা।

গত বছরের আগে পর্যন্ত পুজোর সময়ে বেপরোয়া মোটরবাইক বা গাড়ি আটকাতে কড়া হতেন না পুলিশ অফিসারেরা। গাড়ি, মোটরবাইক আটকানোর বদলে ভিডিও ক্যামেরায় ছবি তুলে রাখতেন। পুজোর পরে ওই বাইক-আরোহীরা ফল ভুগতেন। অর্থাৎ, জরিমানা দিতেন। কিন্তু গত বছর তৃতীয়া থেকেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকায় সেই পদ্ধতিতে বদল আনে পুলিশ। বেগতিক দেখলেই আটক করে কাগজপত্র দেখতে চাওয়া হচ্ছিল, চালক মত্ত কি না, তা বুঝতে ‘ব্রেথ অ্যানালাইজার’ দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছিল মুখের গন্ধ, আটক করে নেওয়া হচ্ছিল গাড়ি। তার ফলে সাফল্যও মিলেছিল। সপ্তমী থেকেই বদলে গিয়েছিল রাতের শহরের বেপরোয়া চিত্র। গত বছর পুজোর শেষ তিন দিন কমবেশি চার হাজার বাইক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। ‘‘গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে নিলে পুজোর আনন্দ মাটি তো হবেই, গাড়ি ছাড়াতেও ভুগতে হবে লোকজনকে। এই ভয় থাকলে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর সাহস করবে না অধিকাংশই,’’ মন্তব্য এক পুলিশকর্তার। পুলিশ সূত্রের খবর, এ বারও গত বছরের ছকেই যান শাসনে নামতে চাইছে লালবাজার। পুজো বলে কোনও বেপরোয়া মোটরবাইক বা গাড়ি যাতে না ছাড় পায়, তার জন্য এখন থেকেই পুলিশকর্মীদের প্রস্তুত হতে লালবাজার নির্দেশ দিয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে তারই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন ট্রাফিক-কর্তারা।

লালবাজার সূত্রে খবর, এ দিনের বৈঠকে ট্রাফিক গার্ডের ওসি-দের পুজোর ক’দিন গাড়ি, মোটরবাইকের ‘রেস’ রুখতে বাইপাস লাগোয়া ট্রাফিক গার্ডগুলিকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সব এলাকায় পুজোর তেমন চাপ নেই। কিন্তু ওই এলাকার বিভিন্ন রাস্তা মত্ত অবস্থায় বেপরোয়া গাড়ি চালানোর পীঠস্থান। তাই বলা হয়েছে, ওই এলাকার ট্রাফিক অফিসারদের মূল কাজই হবে বেপরোয়া গাড়ি ধরপাকড় করা। এ দিন রাত থেকেই কিছু অফিসারকে ধরপাক়ড়ের কাজ শুরু করতে নামানো হয়েছে। এ ছাড়া, রাতের শহরে উড়ালপুল দিয়ে মোটরবাইক যাতে না চলে, সে কথা প্রতিটি ট্রাফিক গার্ডের ওসি-দের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে এ দিনের বৈঠকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন