kali Puja 2022

বাজি ফাটারই কথা নয়, বাজেয়াপ্ত বাজি নিয়ে ‘সাফল্য’ কিসের

পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, সব থেকে বেশি পরিমাণ বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কলকাতা পুলিশ এলাকা থেকে। ২৪ তারিখ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কিলোগ্রাম বাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২২ ০৭:৫৭
Share:

দূষণ: বাজি পোড়ানোর ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ। মঙ্গলবার রাতে, কসবা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।

কালীপুজোর পরদিন মঙ্গলবারেও কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাজি ফাটার অভিযোগ শোনা গেল। সোমবার বৃষ্টির কারণে শুরুটা দেরিতে হয়েছিল। তবে মঙ্গলবারের দেরি প্রাকৃতিক দুর্যোগে নয়, এমনিতেই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর থেকে ওই দিন বাজি ফাটা শুরু হয়। যদিও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দাবি, বাজি আগের তুলনায় অনেক কম ফেটেছে। তাই বিষয়টির ভুল ব্যাখ্যা উচিত নয়। পরিসংখ্যান দিয়ে পর্ষদ জানিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত কলকাতা-সহ সারা রাজ্যে প্রায় ১৪ হাজার কিলোগ্রাম বেআইনি বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৯৬ জনকে। পর্ষদ এবং পুলিশের সক্রিয়তায় এটা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি পর্ষদকর্তাদের।

Advertisement

পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, সব থেকে বেশি পরিমাণ বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কলকাতা পুলিশ এলাকা থেকে। ২৪ তারিখ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কিলোগ্রাম বাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। গ্রেফতারির সংখ্যাও কলকাতায় সর্বাধিক, ৯২ জন। হাওড়া এবং বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় উদ্ধার হওয়া শব্দবাজির পরিমাণ যথাক্রমে ১৬০০ এবং ১৫০০ কিলোগ্রাম। সুপ্রিম কোর্ট, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মতো যেখানে বাজি ফাটারই কথা ছিল না, সেখানে ১৪ হাজার কিলোগ্রাম বাজি বাজেয়াপ্ত করাকে কী ভাবে ‘কৃতিত্ব’ বলে দাবি করে পর্ষদ, প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর তরফে নব দত্তের বক্তব্য, ‘‘শব্দবাজি ফাটারই কথা নয়। সেখানে বাজি বাজেয়াপ্ত করায় কী ভাবে সাফল্য আসতে পারে পুলিশের? তা ছাড়া, ১৪ হাজার কিলোগ্রাম শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে, এ থেকে অনুমান করা যায়, কত পরিমাণ বাজি খোলা বাজারে ছড়িয়ে রয়েছে। যা পুলিশ ও পর্ষদের আতশকাচের তলায় আসেনি।’’ প্রতিক্রিয়া জানতে মঙ্গলবার পর্ষদের সদস্য-সচিব রাজেশ কুমারকে ফোন করা হলে পরে ফোন করছেন বলে তিনি রেখে দেন।

Advertisement

পর্ষদকর্তাদের অবশ্য বক্তব্য, ২০২০-’২১ সালে করোনা সংক্রমণের কারণে তেমন ভাবে কালীপুজোয় মাতেননি মানুষ। ২০১৯ সালের কালীপুজোর দিন জোরে মাইক ও শব্দবাজি ফাটার অভিযোগ পর্ষদে দায়ের হয়েছিল ১৪০টি। যেখানে ৪০টি অভিযোগ ছিল জোরে মাইকের বিরুদ্ধে এবং শব্দবাজির বিরুদ্ধে ছিল ১০০টি। সোমবার, কালীপুজোর দিনে অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৬২টি। ১৩টি জোরে মাইক বাজানোর বিরুদ্ধে এবং ৪৯টি শব্দবাজির বিরুদ্ধে অভিযোগ। মঙ্গলবার রাত এগারোটা পর্যন্ত জোরে মাইক বাজানো নিয়ে চারটি এবং শব্দবাজি নিয়ে ২০টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অর্থাৎ, মোট অভিযোগ দায়ের হয়েছে ২৪টি। অভিযোগগুলি এসেছে টালিগঞ্জ, কসবা, চারু মার্কেট, আমহার্স্ট স্ট্রিট-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে। পর্ষদের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘তথ্যেই বোঝা যাচ্ছে, আগের থেকে শব্দবাজি বা জোরে মাইকের উপদ্রব কমেছে। রাতারাতি সমস্তটা পাল্টে যাবে না। কিন্তু বাজি বা জোরে মাইকের দাপট যে ধীরে ধীরে কমছে, তা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট।’’

মঙ্গলবার রাত বাড়তেই সবুজ মঞ্চের কন্ট্রোল রুমে চেতলা, টালিগঞ্জ, তিলজলা, কসবা, মানিকতলা, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, হাজরা রোড, ডোভার রোড থেকে বাজি ফাটার অভিযোগ করেছেন মানুষ। এক পরিবেশবিজ্ঞানীর মতে, ‘‘সমস্যাটা হল, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বরাবর এক রকমের তথ্য ও পরিসংখ্যান পেশ করে। নাগরিকদের অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলে। শব্দবাজির দাপটে বিভিন্ন এলাকার মানুষকে অহেতুক ভুগতে হয়।’’ অন্য দিকে কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, কালীপুজো পর্যন্ত এফআইআর, জিডি-র মোট সংখ্যা ৪৫০। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৯৬ জনকে। ওই কর্তার বক্তব্য, ‘‘পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকলে নিশ্চয়ই এগুলো ঘটত না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন