জল বিষিয়েই ছটপুজোয় জলাঞ্জলি কোর্টের নির্দেশ

রবীন্দ্র সরোবর নিয়ে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ থাকলেও সুভাষ সরোবর নিয়ে তেমন কিছু ছিল না। তবে ওই সরোবর পরিষ্কার রাখতে তৎপর ছিল কেএমডিএ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০৭
Share:

অমান্য: রবীন্দ্র সরোবরে নেমে অবাধেই ছটপুজো করলেন অগণিত মানুষ। যার জেরে নোংরা হল জল। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

জাতীয় পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়েই ছটপুজো হল রবীন্দ্র সরোবরে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হলেও জলে নেমে অবাধেই পুজো করেছেন বহু মানুষ। কোনও তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি ওই সরোবরের দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ-র তরফেও। আদালতের নির্দেশ মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার কথা যাদের, কার্যত তারাই এ দিন দর্শকের ভূমিকায় ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। আর তার ফাঁক গলেই কয়েক হাজার পুণ্যার্থী সরোবরের জলে ফেলেছেন ফুল, তেল, প্লাস্টিক।

Advertisement

প্রায় একই ছবি দেখা গিয়েছে সুভাষ সরোবরেও। সেখানেও নাকি নজরদারি ছিল। তবে তার মধ্যেই জলে ইচ্ছেমতো ফুল, তেল, প্লাস্টিক ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ। এক দিকে মাইকে প্রচার চলেছে। তার মধ্যেই জলে নেমে পুণ্যার্থীরা স্নানপর্বও সেরে ফেলেছেন। সুভাষ সরোবরে শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগও উঠেছে।

রবীন্দ্র সরোবরে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন প্রসঙ্গে এলাকার বিধায়ক ও রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘আদালতের ওই রায় নিয়ে আমি বিস্তারিত জানি না। তবে আমি সরোবরের ভিতরে যাব না। এলাকার বিধায়ক হিসেবে বাইরে পুণ্যার্থীদের দেখভাল করব।’’ পরে বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ রক্ষা করা আমার কাজ নয়। সেটা পুলিশের কাজ। আমাকে সরকার যে নির্দেশ দেবে, তা-ই করব।’’

Advertisement

সুভাষ সরোবরে ফাটানো হচ্ছে শব্দবাজি।

পরে অবশ্য পুলিশ জানায়, এ দিন রবীন্দ্র সরোবর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি ডিজে বক্স ও প্রচুর শব্দবাজি। গ্রেফতার করা হয়েছে এক জনকে। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তিনটি মামলা রুজু করেছে।

এ দিন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসের জবাব আসেনি। প্রতিক্রিয়া মেলেনি পুলিশকর্তাদের তরফেও। পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, আইন-শৃঙ্খলার যাতে অবনতি না হয়, এ দিন সে দিকেই বেশি নজর ছিল তাদের। ফলে পুলিশের সামনে দিয়েই পুণ্যার্থীরা ঢুকেছেন ভিতরে। আর এক মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে অবশ্য সাফ বলেন, ‘‘রবীন্দ্র সরোবরে কী হয়েছে, আমি জানি না। তবে পুকুর বা জলাশয় সংস্কার করতে অনেক টাকা খরচ হয়। সে সব ভাল রাখা দরকার।’’

পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের করা মামলার জেরে রবীন্দ্র সরোবরে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। সুভাষবাবু এ দিন বলেন, ‘‘পুলিশ এবং কেএমডিএ-র বিরুদ্ধে আদালতে যাব। আদালত অবমাননার জন্য শাস্তির আর্জি জানাব। রবীন্দ্র সরোবরের দায়িত্ব যাতে কেএমডিএ-র হাত থেকে নিয়ে নেওয়া হয়, তার আবেদনও করব।’’ আর এক পরিবেশকর্মী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকার নিজেই যদি আদালতের নির্দেশ না মানে, তা হলে কী করা যাবে? এ দিন তো সেখানে আদালত অবমাননার উৎসব হয়েছে।’’ সুমিতা জানান, এ দিন তাঁদের তরফে রবীন্দ্র সরোবর থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।

রবীন্দ্র সরোবরে ঢোকার মুখেই নিষেধাজ্ঞার বোর্ড।

রবীন্দ্র সরোবর নিয়ে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ থাকলেও সুভাষ সরোবর নিয়ে তেমন কিছু ছিল না। তবে ওই সরোবর পরিষ্কার রাখতে তৎপর ছিল কেএমডিএ। শর্তসাপেক্ষে সেখানে ছটপুজোর অনুমতি দিয়েছিল তারা। তবে পুণ্যার্থীরা অবশ্য নির্বিকার চিত্তেই পুজোর ফল, প্রদীপ, তেল ফেলেছেন সেখানে। যার জেরে ছট-উদ্‌যাপনের প্রথম দিনই আবর্জনায় ভরে ওঠে সুভাষ সরোবর চত্বর। সেই সঙ্গেই অভিযোগ, পুলিশের সামনেই সেখানে ফাটানো হয়েছে শব্দবাজি। সুভাষ সরোবরে উপস্থিত এক পুলিশ আধিকারিক বললেন, ‘‘দেখছি। দেখলেই ধরব।’’ সুভাষ সরোবরে আসা রেশমা টোডি নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘রাতে এখানেই থাকব। ভোরে ফের পুজো শুরু হবে।’’ জলে আবর্জনা ফেলা নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘জলে একটু তো পড়বেই। যতটা পারছি, বাইরেই ফেলছি।’’ আজ, বুধবারই সুভাষ সরোবর নিয়ে পরিবেশ আদালতে যাওয়ার কথা পরিবেশকর্মীদের।

ছটপুজোর সময়ে পুজোর সামগ্রী ফেলে রবীন্দ্র সরোবরের জল নোংরা করা হয়। সঙ্গে চলে বাজি পোড়ানো। এমন অভিযোগকে সামনে রেখেই জাতীয় পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পরিবেশকর্মীরা। সেই মামলাতেই আদালত রবীন্দ্র সরোবরে সব রকমের পুজোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ বছর দু’টি সংগঠনের তরফে সেখানে ছটপুজো করার আর্জি জানানো হলেও সোমবার আদালত তা খারিজ করে দেয়। পরে পুলিশ জানায়, পুজো দিতে আসা লোকজন যাতে সরোবর চত্বরে ঢুকতে না পারেন, তার জন্য গেট বন্ধ রাখা হবে।

ছটপুজোর সকালে রবীন্দ্র সরোবর এলাকাতেই উপস্থিত বিধায়ক ও মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।

কিন্তু মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, রবীন্দ্র সরোবরে ঢোকার সব ক’টি গেটই খোলা। পুণ্যার্থীদের জন্য জলে রয়েছে মই। সরোবর জুড়েই গাছে লাগানো হ্যালোজেন আলো। পুণ্যার্থীরা দাবি করেন, ওই মই তাঁদের নয়। প্রশাসনের তরফেই তা রাখা হয়েছে। আলোও লাগানো হয়েছে। সরোবরের নিরাপত্তারক্ষীরা জানালেন, কে বা কারা ওই মই বা আলো লাগিয়েছে, তা তাঁরাও জানেন না। যদিও ওই ব্যবস্থাপনার পিছনে কলকাতা পুরসভা এবং কেএমডিএ-র নাম উঠে এসেছে। মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘রবীন্দ্র সরোবর পুরসভার নয়। তাই কিছু বলার নেই।’’

কেএমডিএ-র এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘আদালতের নির্দেশের কথা আমরা পুলিশকে জানিয়েছিলাম।’’ পুলিশ জানায়, সোমবারই লালবাজারের তরফে কেএমডিএ-কে চিঠি দিয়ে রবীন্দ্র সরোবরের গেট বন্ধ রাখতে বলা হয়। কিন্তু তা করা হয়নি। রবীন্দ্র সরোবরে আদালতের নির্দেশ মানা হচ্ছে না, এই খবর সকালে প্রচারিত হওয়ার পরেই পুণ্যার্থীদের সহায়তায় তৃণমূলের তরফে শরৎ চ্যাটার্জি অ্যাভিনিউয়ে যে মঞ্চ করা হয়েছিল, তা খুলে ফেলা হয়।

—নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন