ধ্বংসের স্মৃতি নিয়ে পোস্তা উড়ালপুল ভগ্নস্তূপই

‘ভাল লাগে না এ রকম জীবন’

গত মার্চেই পোস্তার উড়ালপুল ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল ২৭ জনের। জখম হয়েছিলেন আরও ৮০ জন। তাঁদেরই এক জন রেজিনগরের আব্দুল হুদা শেখ। তাঁর বাঁ হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত এখনও গার্ড বাঁধা।

Advertisement

মধুমিতা দত্ত

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৭ ০০:০০
Share:

আব্দুল হুদা শেখ

গত মার্চেই পোস্তার উড়ালপুল ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল ২৭ জনের। জখম হয়েছিলেন আরও ৮০ জন। তাঁদেরই এক জন রেজিনগরের আব্দুল হুদা শেখ। তাঁর বাঁ হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত এখনও গার্ড বাঁধা। বাঁ পায়ের পাতাতে সাড় নেই। খুব জোরে আর হাঁটতে পারেন না। জোর পান না বাঁ হাতেও। হাঁটতে হয় ক্রাচে ভর দিয়েই। ভেঙে গিয়েছিল ডান বুকের পাঁজর। জোরে দম নিতে গেলে এখনও কষ্ট হয়। ডান হাতের হাড় থেকে মাংস ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। জঙ্ঘার থেকে মাংস নিয়ে ডান হাতে জুড়েছিলেন চিকিৎসকেরা। সেই হাতেও খুব জোর পান না। বাঁ চোখেরও দৃষ্টিও ক্ষীণ। এখন এ ভাবেই কর্মক্ষমতাহীন অবস্থায় বেঁচে আছেন তিনি।

Advertisement

আব্দুলের বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী ও সাত ছেলেমেয়ে। এত বড় সংসারে বড় ছেলে সফিউর শুধু সিভিল ডিফেন্সে চাকরি করেন। আর কারও কোনও রোজগার নেই। সরকারের পক্ষে আব্দুলকে দেওয়া হয়েছিল দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ। এক বছরের এই কর্মহীন জীবনের কথা বলতে গিয়ে জলে ভিজে যায় আব্দুলের চোখ। ‘‘কর্মঠ একটা মানুষ আচমকাই এ রকম হয়ে গেলাম। এমনই কী হওয়ার ছিল?’’ আফশোস করে বলেন আব্দুল।

আরও পড়ুন

Advertisement

ভবিষ্যৎ বলার ভার পেল খড়্গপুর

এক বছর আগে ভেঙে পড়া সেতুর তলায় চাপা পড়েছিলেন আব্দুল। বুধবার বলেন, ‘‘কী করে যে বেঁচে আছি, সেটাই আশ্চর্যের! কাজকর্ম করতে পারি না। এ ভাবে কি আর বাঁচতে চেয়েছিলাম?’’

রেজিনগর থেকে এসে কলকাতায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন আব্দুল। গ্রামের আরও কয়েক জন একই পেশার মানুষের সঙ্গে থাকতেন বিডন স্ট্রিট এলাকায়। গত বছর ৩১ মার্চ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার দিন আব্দুলের কয়েক জন সঙ্গী রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন ক্যানিং স্ট্রিটে। আব্দুল তাঁদের দুপুরের খাবার পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন। খাবার দিয়ে ফেরার সময়ে উঠেছিলেন ট্রামে। চিৎপুরে যানজট ছিল খুব। তাই ট্রাম থেকে নেমে যান আব্দুল। ভেবেছিলেন, বাকি রাস্তাটুকু হেঁটেই পার করে দেবেন। উড়ালপুলের তলা দিয়ে যাওয়ার সময়েই তা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে মাথার উপরে। অনেকের সঙ্গে চাপা পড়ে যান বছর পঁয়তাল্লিশের আব্দুলও। কিছু ক্ষণেই হঠাৎ যেন বদলে গেল জীবনটা।

ঠিক বিধানসভা নির্বাচনের আগে এমন ঘটনা ঘটায় রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল এই উড়ালপুল দুর্ঘটনাকে ঘিরে। সে সবের মধ্যেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্রায় দু’মাস একের পর এক অস্ত্রোপচারে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন আব্দুল। কিন্তু এ সবের মধ্যে কর্মক্ষমতা একেবারেই শেষ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। মাঝেমাঝে ডাক্তার দেখাতে কলকাতায় আসেন। তাও সঙ্গী না থাকলে আসতে পারেন না।

সারাদিন বাড়িতে বসে থাকতে ভাল লাগত না আব্দুলের। আত্মীয়েরা তাই তাঁকে ভ্যানে করে নিয়ে গিয়ে গ্রামের বাজারে বসিয়ে রাখতেন। লোকজনের সঙ্গে দেখা হলে কথা বলে যাতে একটু মন ভাল হয়। কিন্তু তাঁকে দেখতেই ভিড় জমে যেত বাজারে। মানুষের এত আগ্রহ একেবারেই ভাল লাগেনি আব্দুলের। তিনি বলেন, ‘‘ভাল লাগে না এ রকম জীবন। তাই বাজারেও আর যাই না আজকাল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন