গাছ দেবতা নয়, পড়ল পোস্টার

গত মঙ্গলবার থেকে উল্টোডাঙার রমাকান্ত সেন লেনের একটি ডুমুর গাছ নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। স্থানীয়রা জানান, রবিবার সন্ধ্যার ঝড়ে ভেঙে যাওয়া কিছু গাছ সোমবার কেটে দিয়ে যায় পুরসভা। কাটা পড়ে ওই ডুমুর গাছটিও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৩৭
Share:

পড়েছে কুসংস্কার-বিরোধী বিজ্ঞপ্তি। তাতেও ভাঙেনি বিশ্বাস। শুক্রবার, উল্টোডাঙায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

গাছের সামনে পাহারা বসেছে। পালা করে সকাল-সন্ধ্যা পাহারা দিচ্ছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। ফুল-মালা, মোমবাতি নিয়ে কেউ পুজো দিতে এলেই তাঁদের দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে গাছের গায়ে এবং তার চার পাশে সাঁটা বিজ্ঞপ্তি। তাতে লেখা, ‘কুসংস্কারে কান দেবেন না’। বিজ্ঞপ্তিদাতার পরিচয় হিসেবে লেখা, ‘পৌরপিতা’। উল্লেখ রয়েছে স্থানীয় ‘বিজ্ঞান মঞ্চ’-এর প্রতিনিধিদের নামও।

Advertisement

গত মঙ্গলবার থেকে উল্টোডাঙার রমাকান্ত সেন লেনের একটি ডুমুর গাছ নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। স্থানীয়রা জানান, রবিবার সন্ধ্যার ঝড়ে ভেঙে যাওয়া কিছু গাছ সোমবার কেটে দিয়ে যায় পুরসভা। কাটা পড়ে ওই ডুমুর গাছটিও। মঙ্গলবার রাত থেকেই কোনও তরল চুঁইয়ে পড়তে শুরু করে ওই গাছ থেকে। তা নিয়ে স্থানীয়দের একাংশ ঘোষণা করেন, ‘‘এই গাছে ভগবান আছে। এখানে মন্দির তৈরি হবে।’’ খবর শুনে আশপাশের বাসিন্দারা ভিড় করেন। মোমবাতি জ্বেলে পুজো চলতে থাকে। জলের পাত্রে গাছের গায়ের তরল ভরতে হুড়হুড়ি পড়ে যায়। অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে গিয়ে ওই তরল মাথায় বোলাতে শুরু করেন কেউ কেউ। বসানো হয় প্রণামীর বাক্সও।

এই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে গাছ ঘিরে কুসংস্কার রুখতে বিজ্ঞপ্তি লাগান কলকাতা পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুণ্ডু। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের গাছের সামনে পাহারাতেও বসান তিনি। পুলিশকে অনুরোধ করেন শান্তি রক্ষার। শুক্রবার শান্তিরঞ্জন বলেন, ‘‘ওই গাছ ঘিরে রীতিমতো ব্যবসা শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রণামীর বাক্স বসেছিল। এ সব হতে দেওয়া যায় না।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘কেউ গাছকে পুজো করতে চাইলে কিছু বলার নেই। তবে কারও বাড়ির গেট আটকে মন্দির বানানোর চেষ্টা করলে বাধা দেবই। তা ছা়ড়া এটা কুসংস্কার।’’ একই কথা বলছেন, পাশের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূলেরই কেউ কেউ ওখানে ব্যবসা করতে চেয়েছিল। শান্তিরঞ্জন ভালই করেছেন। আমার ওয়ার্ড হলেও আমি তা-ই করতাম।’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাত থেকেই অবশ্য গাছ থেকে তরল বেরোনো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবারই উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছিলেন, এর পিছনে বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। তাঁরা বলেছিলেন, ওই তরল আদতে গাছের বর্জ্য। যা ক্ষরণ হয়। গাছের কাণ্ডের দিকের বেশি অংশ কেটে নেওয়ার ক্ষরণের মাত্রা এ ক্ষেত্রে বেশি হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে গাছ থেকে তরল বার হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে বলেও জানান উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞেরা।

মন্দির তৈরির অন্যতম উদ্যোক্তা তথা এলাকার তৃণমূলকর্মী মিঠু পোদ্দার বললেন, ‘‘মানুষ চেয়েছিল তাই গাছ পুজোয় পাশে ছিলাম। এখন সমস্যা হচ্ছে তাই সরে গিয়েছি। টাকা-পয়সার ব্যাপারে ঢুকতে চাই না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন