একটি পাড়ায় বাড়ি ১০০টি। সেখানে বিদ্যুৎ দিয়ে প্রতি মাসে বাড়ি পিছু ২০০ টাকা করে নেয় পাড়ার দাদা। চুরির বিদ্যুতে প্রতিটি বাড়িতে চলে দু’টি আলো, একটি পাখা। আর ওই বিদ্যুৎ বিক্রি করে মাসে দাদার রোজগার গড়ে ২০ হাজার টাকা। সিইএসসি এলাকার মধ্যে বিদ্যুৎ চুরি করে বাড়ি বাড়ি দিয়ে এর চেয়েও বেশি টাকা রোজগার করে, এমনও বহু দাদা রয়েছে। বছরের পর বছর যারা হাইটেনশন লাইন থেকে হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরি করে বিক্রি করে চলেছে। বিদ্যুৎ কর্তাদের ভাষায় যাদের বিদ্যুৎ মাফিয়া বলা হচ্ছে।
সিইএসসি এলাকার বাইরে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন এলাকাতেও রয়েছে এই ধরনের দাদারা। তবে তুলনামূলক ভাবে কম। অভিযোগ, ওই দাদাদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এক শ্রেণির বিদ্যুৎ কর্মীদেরও। তারা বিদ্যুৎ চুরিতে মদত দিয়ে মাসোহারা পেয়ে থাকে। তবে বণ্টন এলাকায় দাদাদের বাইরে অনেকে আবার নিজেদের মতো করে হুকিং, ট্যাপিং করে সরকারি বিদ্যুৎ চুরি করে আলো, পাখা, টিভি, পাম্প চালিয়ে যায়। যে কারণে বণ্টন সংস্থার প্রতি বছর কোটি-কোটি টাকা আর্থিক লোকসান হয়। একই ভাবে লোকসান হচ্ছে সিইএসসি-রও। প্রতি বছর তাদেরও ১৫০-২০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে বলে জানান কর্তারাই।
সিইএসসি-র এক কর্তা জানান, তাদের পরিষেবা এলাকার মধ্যে বেশ কয়েকটি অঞ্চল রয়েছে যেখানে ওই দাদাদের বিদ্যুৎ ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে। ওই সমস্ত এলাকায় কেউ শুধুমাত্র নিজের ব্যবহারের জন্য হুকিং করে না। দাদাই একেবারে সিইএসসি-র হাইটেনশন লাইন থেকে হুকিং করে বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এই দাদাদের আবার রয়েছে নির্দিষ্ট রেটও। মধ্যবিত্তদের জন্য এক রকম রেট, গরীবদের জন্য আর এক রকম। দোকান বা গুদাম হলে আবার রেট অনেকটাই বেশি। একটা আলোর জন্য ১০০ টাকা। আলো-পাখার জন্য ২০০ টাকা। ওই দাদাদের অধীনে আবার বেশ কয়েকজন ছেলে কাজ করে, যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতি মাসে টাকা তুলে আনে বলেই সিইএসসি-র কর্তারা জানাচ্ছেন। এক কর্তা বলেন, “আমরা মাঝেমধ্যে গিয়ে ওই সমস্ত হুকিং লাইন কেটে দিয়ে আসি। কিন্তু সেগুলি আবার লাগিয়ে দেওয়া হয়। এ ভাবেই মাসের পর মাস দাদারা বিদ্যুৎ চুরি করে লক্ষ-লক্ষ টাকা আয় করে চলেছে।” হুকিং, ট্যাপিং করতে গিয়ে অনেক সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে, মৃত্যু পর্যন্ত হয়। কিন্তু তা চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় বলে মেনে নিচ্ছে প্রশাসনের একাংশ।
শুধু এই পদ্ধতিতেই নয়, অনেক সময়ে সিইএসসি-র পোলও নিলাম হয়ে বলে বিদ্যুৎ কর্তারা অভিযোগ করছেন। পাড়ার দাদা পোল নিলাম করে দেয় আর এক দাদাকে। বিনিময়ে সে কিছু থোক টাকা নিয়ে নেয়। যে দাদা পোল পায়, সে আবার সেখান থেকে হুকিং করে বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। সেগুলিকেই এক একটি ছোট ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম বলছে সিইএসসি। এই ব্যবসার জন্য কোনও পুঁজিও লাগে না। প্রয়োজন হয় না কোনও পরিশ্রম বা বুদ্ধিরও। সংস্থার কর্তারা জানান, অনেক সময়েই পুলিশ নিয়ে অভিযানে যাওয়া হয়। প্রচার চালানো হয় বিদ্যুৎ চুরি না করার জন্য, চুরি করা বিদ্যুৎ ব্যবহার না করার জন্য। কিন্তু তাতেও সেই চুরি চলছেই।