কম্যান্ডো অভিযানে ‘জঙ্গি দখলমুক্ত’ চৌরঙ্গির গ্র্যান্ড!

সাড়ে তিন ঘণ্টার কম্যান্ডো অভিযানে ‘জঙ্গি দখলমুক্ত’ হল চৌরঙ্গির গ্র্যান্ড হোটেল। নিহত ৮ জঙ্গি, আহত এক কম্যান্ডো।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৫১
Share:

‘অভিযান’: ভিতরে কম্যান্ডোরা। পাশের রাস্তায় ব্যারিকেড। নিজস্ব চিত্র

সাড়ে তিন ঘণ্টার কম্যান্ডো অভিযানে ‘জঙ্গি দখলমুক্ত’ হল চৌরঙ্গির গ্র্যান্ড হোটেল। নিহত ৮ জঙ্গি, আহত এক কম্যান্ডো।

Advertisement

সাহায্য চেয়ে লালবাজার থেকে এসওএস গিয়েছিল সোমবার রাত ৮টা ৫ মিনিটে। ‘জঙ্গি হামলা, পণবন্দি করে রাখা হয়েছে বেশ কয়েক জনকে, আপনারা যত শীঘ্র সম্ভব এসে ব্যবস্থা নিন।’ বার্তা গেল উত্তর ২৪ পরগনার বাদুতে ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড (এনএসজি)-এর হাবে ও হেস্টিংসে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ফোর্স-এর দফতরে। সমবেত অভিযানের পরে রাত একটায় হোটেল জঙ্গি-মুক্ত বলে জানানো হয়।

ছ’টি গাড়িতে ৭০ জন কম্যান্ডো একে ফর্টি সেভেন, গ্লক পিস্তলে সজ্জিত হয়ে সাড়ে আটটার মধ্যে বেরোন হেস্টিংস থেকে। পৌনে ন’টায় তাঁরা পৌঁছন হোটেলে। এনএসজি তখনও পৌঁছয়নি। হোটেলের তেতলা ও চার তলার একটি করে ঘর তখন ৭-৮ জন জঙ্গিদের দখলে। বন্দি হোটেলের ১০-১২ জন অতিথি।

Advertisement

সমবেত কম্যান্ডোদের বারট্রাম স্ট্রিটে ‘ব্রিফিং’ হল আধ ঘণ্টা। ততক্ষণে জংলা পোশাকের, ইনস্যাসধারী, কমব্যাট ফোর্স-এর ১২ জন মোতায়েন হয়েছেন। রাত ৯টা ২০-তে হোটেলে ঢুকতে শুরু করেন কম্যান্ডোরা।

আরও পড়ুন:​ সুন্দরবনে পৌঁছতে নয়া সেতু

পাঁচ কোটি চেয়ে প্রহার

অধিকাংশই বিভিন্ন প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকলেন, তবে চার কম্যান্ডো ছাদ থেকে দড়ি বেয়ে নামলেন তেতলা ও চার তলায়। প্রথমে একতলার লবি ও তার পর দোতলা দখল করে কম্যান্ডো যখন ‘অল ক্লিয়ার’ সঙ্কেত দিলেন, তখন রাত পৌনে ১১টা। তবে ততক্ষণে কলকাতা পুলিশের এক কম্যান্ডো জঙ্গিদের গুলিতে গুরুতর জখম। তাঁকে বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যেরা সরিয়ে নিয়ে গেলেন।

এমন সময়ে ৩০ কিলোমিটার পথ উজিয়ে পৌঁছলেন এনএসজি-র ১০০ কম্যান্ডো। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত ওই ব্ল্যাক ক্যাট কম্যান্ডোরা। সঙ্গে দু’রকম আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি গ্রেনেড ও কম্যান্ডো নাইফ।

এ বার কলকাতা পুলিশ ও ব্ল্যাক ক্যাট কম্যান্ডোরা একযোগে ঢুকতে শুরু করলেন সব চেয়ে বিপজ্জনক জায়গায়। ৫০ মিনিটের মাথায় তেতলা দখলে এল, যেখানে খতম হল দুই জঙ্গি। কয়েক জন পণবন্দিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হল সেখানে। তার পর অন্তিম লড়াই শুরু হল চারতলায়। যেখানে ছ’জন জঙ্গি। ঘুটঘুট করছে অন্ধকার। তার মধ্যেই তুমুল গুলি বিনিময়। শেষমেশ রাত ১টায় বাকি ছ’জন জঙ্গিই নিহত হল, অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হল পণবন্দিদের।

না, কলকাতায় সত্যি জঙ্গি হামলা হয়নি। পুরোটাই মহড়া। নিজেদের তৈরি রাখতে এনএসজি এই মহড়া দেয়, সামিল করা হয় কলকাতা পুলিশকে। হোটেলের যে অংশে অতিথিরা ছিলেন, তা মহড়া থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। দু’বছর হল এই ধরনের মহড়া। শেষ বার হয়েছিল আলিপুরের এক হোটেলে। সে বার হোটেলকে রাত তিনটের আগে ‘জঙ্গি দখলমুক্ত’ করতে পারেননি কম্যান্ডোরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন