অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু, অভিযুক্ত হাসপাতাল

পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার রাত সওয়া ৮টা নাগাদ বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের বাসিন্দা স্বপ্না হেলা (৩০) প্রসবযন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে এক সময়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৮ ০৩:০১
Share:

স্বপ্না হেলা

কেঁদেই চলেছে বছর তেরোর কওসর। সোমবার ছিল তার জন্মদিন। তার অন্তঃসত্ত্বা মা রাতে অজ্ঞান হয়ে গেলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু মা যে আর ফিরবে না, সে কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি কওসর। মঙ্গলবার সকালে বাবাকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকা ওই কিশোরী কিছু বলার মতো অবস্থায় ছিল না।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার রাত সওয়া ৮টা নাগাদ বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের বাসিন্দা স্বপ্না হেলা (৩০) প্রসবযন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে এক সময়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন।
তাঁকে নিয়ে লেডি ডাফরিন হাসপাতালে আসেন তাঁর স্বামী ঋষি হেলা-সহ পরিবারের লোকজন। কিন্তু অভিযোগ, কোনও চিকিৎসক তাঁকে দেখতে আসেননি। হাসপাতালের ভিতরেও নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে এক চিকিৎসক এসে স্বপ্নাকে দেখে জানিয়ে দেন, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। স্বপ্নার সঙ্গে মৃত্যু হয়েছে তাঁর গর্ভস্থ সন্তানেরও।

তাঁদের আরও অভিযোগ, স্বপ্না মারা গেছেন জানিয়ে দেওয়ার পরে তাঁর গর্ভস্থ সন্তানকে বাঁচানোরও চেষ্টা করা হয়নি হাসপাতালের তরফে। স্বপ্নার স্বামী ঋষি হেলার অভিযোগ, গত ৮-৯ জুন তাঁর
স্ত্রীর প্রসবের তারিখ দিয়েছিলেন ওই হাসপাতালেরই চিকিৎসক। কিন্তু তখন স্বপ্নাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওই চিকিৎসক জানান, প্রসবের ঠিক সময় আরও ২০ দিন পরে। হাসপাতালে ভর্তি না নিয়ে তাঁর স্ত্রীকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ঋষির।

Advertisement

এর পরে বাড়িতেই ছিলেন স্বপ্না। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যা থেকেই তিনি অসুস্থ বোধ করতে শুরু করলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, ভর্তি করাতে চাইলে বলা হয় হাসপাতালে কোনও শয্যা নেই। প্রথম থেকেই স্বপ্নাদেবীকে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই দেখেছেন। সেই টিকিটও স্বপ্না পরিজনেরা দেখান। কিন্তু অভিযোগ, তাতেও হাসপাতাল ভর্তি নিতে রাজি হয়নি। এমনকি, হাসপাতাল থেকে কোনও চিকিৎসকেও দেখাতে দেওয়া হয়নি। অভিযোগ, হাসপাতালের গেট বন্ধ ছিল। স্বপ্নাকে ভিতরে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের। তাঁরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে এক চিকিৎসক এসে স্বপ্নাকে দেখেন এবং বুকে পাম্প করতে শুরু করেন। পরে তিনি জানান, মারা গিয়েছেন ওই বধূ। ঋষির বলেন, ‘‘আমরা তখনই বলি অন্তত অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়ে বাচ্চাকে বের করে দেখুন যদি সে বেঁচে থাকে! কিন্তু আমাদের কোনও কথাই শোনা হয়নি।’’

এর পরেই স্বপ্নার পরিবারের লোকজন অভিযোগ তোলেন, চিকিৎসা না করে ফেলে রাখার জন্যই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। হাজির হন স্বপ্নার পরিজন-সহ পড়শিরা। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে হাসপাতাল চত্বর। মুচিপাড়া থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছয় পরিস্থিতি সামাল দিতে। পৌঁছন স্থানীয় কাউন্সিলরও। পরে ঋষি মুচিপাড়া থানায় হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে স্বপ্নার দেহ ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ।

এই অভিযোগ নিয়ে অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনও কথা বলবেন না বলে জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, যা বলার, স্বাস্থ্য ভবন থেকে বলা হবে। পুলিশ সূত্রে খবর, হাসপাতাল থেকে দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেটে বলা হয়েছে, সেখানে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয়েছে স্বপ্নার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন