খাস কলকাতায় অন্তঃসত্ত্বাকে ‘যৌন হেনস্থা’

শনিবার রাত ১০টা নাগাদ পূর্বাশা বাসস্ট্যান্ডে নেমে ডিএ ব্লকের ১১ নম্বর বাড়ির সামনে আক্রান্ত হন ওই তরুণী। রবিবার তরুণী জানান, আচমকা পিছন থেকে এক যুবক তাঁর গায়ে হাত দিয়ে পালিয়ে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০২:২৮
Share:

আঁধারি: রাতে ডিএ ব্লকের রাস্তা। রবিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে শনিবার রাতে সল্টলেকের ডিএ ব্লকের রাস্তায় এক অন্তঃসত্ত্বা তরুণীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠল অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের বিরুদ্ধে। যে ঘটনার তদন্তে নেমে স্থানীয় বাসিন্দাদের অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়ল বিধাননগর সিটি পুলিশ। আক্রান্ত তরুণীর দাবি, পুলিশের কাছে এক প্রবীণ মহিলা অভিযোগ করেন, ওই অঞ্চলে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাত ১০টা নাগাদ পূর্বাশা বাসস্ট্যান্ডে নেমে ডিএ ব্লকের ১১ নম্বর বাড়ির সামনে আক্রান্ত হন ওই তরুণী। রবিবার তরুণী জানান, আচমকা পিছন থেকে এক যুবক তাঁর গায়ে হাত দিয়ে পালিয়ে যায়। এ দিন তরুণীর স্বামী বলেন, ‘‘স্ত্রীর বাড়ি ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে ফোন করে ঘটনার কথা জানতে পারি। ওই অবস্থায় আমার স্ত্রী ছেলেটির পিছু নেয়। কিন্তু ডিএ ৭ এবং ডিএ ৮ নম্বর বাড়ির মাঝের অন্ধকার গলিতে ছেলেটি ঢুকে পড়লে ও পিছিয়ে আসে।’’ গলির মুখে দাঁড়িয়ে সাহায্যের জন্য ১০০ ডায়ালে ফোন করেন মহিলা। দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে পুলিশের টহলদারি গাড়ি।

তরুণী জানান, প্রাথমিক তদন্তে নেমে সিসি ক্যামেরার ফুটেজের আশায় ডিএ ৮ নম্বর বাড়ির বাসিন্দাদের একটু আগে কী ঘটেছে তা জানান পুলিশকর্মীরা। তরুণীর কথায়, ‘‘তখনই এক বয়স্ক মহিলা বলেন, এখানে প্রায়ই তো মহিলাদের সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে!’’ এ দিন সেই বক্তব্যের সঙ্গে সহতম পোষণ করেন ডিএ ব্লকের বাসিন্দা শুভ্রা সরকার। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সন্ধ্যার পরে গলির দিকের জানলা খুলতে পারি না। গলির মধ্যে নেশার আসর বসে। সেই সঙ্গে অশালীন গালিগালাজ। আমরা সন্ধ্যার পরে এই গলি দিয়ে যাতায়াত করি না।’’ আর এক প্রবীণ প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘কোনও একা মেয়ে এই রাস্তায় হাঁটতে গেলে আমরাই বারণ করি। ওই রাস্তাটা জুড়ে আজেবাজে ছেলেরা হইচই করে। অতিষ্ঠ হয়ে আমরা দেওয়ালে কাঁটাতার দিয়েছি।’’ একইসঙ্গে ওই অঞ্চলে পর্যাপ্ত আলো নেই বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। তাঁদের বক্তব্য, সোডিয়াম ভেপারের আলো ম্রিয়মাণ। সব পুর এলাকায় এলইডি হচ্ছে। শুধু সল্টলেক সোডিয়াম ভেপারে পড়ে রয়েছে।

Advertisement

পুলিশের অবশ্য দাবি, ডিএ ব্লকের পরিস্থিতি এতটাও খারাপ নয়। পুলিশের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ওই গলিতে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে মহিলারা যদি হাঁটতে না পারেন, তা হলে বাসিন্দারা থানায় কেন অভিযোগ করছেন না? তা হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন তো ১০০ ডায়ালে ফোন করলেই হয়। ওই আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘শনিবার আক্রান্ত তরুণী তো ১০০ ডায়ালে ফোন করেই সাহায্য পেয়েছেন। আলো বাড়ানোর কথা পুলিশের তরফে পুরসভাকে বলা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে সেই আর্জি বাসিন্দারাও তো করতে পারেন!’’ অভিযোগকারীদের অবশ্য বক্তব্য, পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। বিধাননগর সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। আলো নিয়ে পুরসভার সঙ্গে কথা বলব।’’

আরও পড়ুন: রাতের সল্টলেকে মেয়েরা হাঁটবে না!

পুরসভার মেয়র পারিষদ তথা স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর রাজেশ চিরিমার বলেন, ‘‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ওখানে যে আলো কম রয়েছে, তা আমাকে কেউ বলেননি। অভিযোগ সত্যি হলে আলো বাড়ানো নিয়ে মেয়রের সঙ্গে কথা বলব। এই মুহূর্তে বিভিন্ন ওয়ার্ডে আলো বৃদ্ধি নিয়ে পুরসভায় একটা নীতিগত অচলাবস্থা চলছে। আমি সব ওয়ার্ডে এলইডি আলো লাগানোর পক্ষপাতী। অচলাবস্থা কাটিয়ে পুরসভা যদি তা করতে পারে, তা হলে ভাল হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement