Nursing Home

রিপোর্ট ছাড়াই করোনা ওয়ার্ডে, বিল ৫৩ হাজার

কীসের ভিত্তিতে চিকিৎসক তাঁকে ভর্তি করলেন, কার্যত কোনও চিকিৎসা না করে কী করে ৫৩ হাজার টাকার বিল হল

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২০ ০৬:০৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

লালারস পরীক্ষা ছাড়াই এক মহিলাকে বেসরকারি হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করলেন চিকিৎসক। অভিযোগ, দেড় দিনের হাসপাতাল-বাসে কোনও ডাক্তার এক বারের জন্য তাঁর শরীরের তাপমাত্রা বা অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা দূরে থাক, শয্যার পাশে পর্যন্ত ঘেঁষলেন না। শুধু একগাদা পরীক্ষা করানো হল। তার পর দেড় দিনের জন্য ধরানো হল ৫৩ হাজার ৫৪৩ টাকার বিল! মহিলা তাঁর করোনার পজ়িটিভ রিপোর্ট পেলেন হাসপাতাল থেকে ফেরার এক দিন পরে!

Advertisement

উত্তর শহরতলির সিঁথির বাসিন্দা ওই মহিলার কিশোর পুত্র করোনায় আক্রান্ত ছিল। নামী বেসরকারি হাসপাতালের ‘করোনা হোম প্যাকেজ’ এর অধীনে অনলাইনে তার চিকিৎসা চলছিল। অনলাইনে ছেলের চিকিৎসা করার সময়ে মহিলাকে কাশতে শুনে চিকিৎসক তাঁকেও ওষুধ দেন। কিন্তু তাতে দিন কয়েক পরেও কাশি কমেনি। অভিযোগ, তাতেই ‘শারীরিক অবস্থা উদ্বেগজনক’ জানিয়ে মহিলাকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন ডাক্তারবাবু। ভর্তি না হলে বিপদ হতে পারে বলেও জানান। করোনা পরীক্ষা না করেই সোজা তাঁকে ফর্টিস হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চার জন রোগীর সঙ্গে এক ঘরে ভর্তি করা হয়!

ওই মহিলার অভিযোগ, তাঁর শারীরিক অবস্থা ‘গুরুতর’ বলে চিকিৎসক তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করলেও দেড় দিন ভর্তি থাকাকালীন ওই চিকিৎসক কিংবা অন্য কোনও ডাক্তারবাবু তাঁকে দেখতে আসেননি। শুধু কিছু পরীক্ষার জন্য এক জন নার্স এসে তাঁর রক্ত, মূত্র, লালারস পরীক্ষার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। বহু চেঁচামেচি করে তিনি একটি কেবিন পান ও এক রাত কাটিয়ে জোর করে বন্ড দিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন। তাঁর বিলের ৫৩ হাজার ৫৪৩ টাকার মধ্যে ৩৩ হাজার ৪৫০ টাকাই নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন রকম পরীক্ষার জন্য।

Advertisement

কীসের ভিত্তিতে চিকিৎসক তাঁকে ভর্তি করলেন, কার্যত কোনও চিকিৎসা না করে কী করে ৫৩ হাজার টাকার বিল হল, এ সব জানতে চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে গত ৪ অগস্ট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই মহিলা। তিনি বলেন, ‘‘নোংরা অস্বাস্থ্যকর ওয়ার্ড। রাতে যখন আমার কাশি শুরু হয় তখনও কেউ দেখতে আসেননি। শুধু দরজার বাইরে এক জন গরম জল রেখে চলে যান।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমার অবস্থা যদি জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো খারাপ হবে, তা হলে ডাক্তারবাবু কেন এক বারও এসে পরীক্ষা করলেন না? কেন কোনও ওষুধ দেওয়া হল না?’’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত চিকিৎসক জয়দীপ ঘোষের পাল্টা দাবি, ‘‘ওঁর কাশিটা সত্যিই আমার ভাল লাগেনি। তার উপরে উনি করোনা রোগীর সংস্পর্শে ছিলেন। করোনার ক্ষেত্রে অনেকের অবস্থা এত দ্রুত খারাপ হয় যে বাঁচানো যায় না। সেই অবস্থায় উনি যাতে না পড়েন তাই দ্রুত হাসপাতালে যেতে বলেছিলাম।’’

কিন্তু ওঁর করোনা তো তখনও পরীক্ষা হয়নি।

চিকিৎসকের বক্তব্য, ‘‘ওঁর সিটি স্ক্যান করে ফুসফুসের অবস্থা দেখে নেওয়া হয়েছিল। তাতে লালারসের রিপোর্ট ছাড়াও করোনার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। বিশেষ করে যাঁরা করোনা রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন, এমন মানুষদের ক্ষেত্রে। প্রথমে আলাদা কেবিন না থাকায় ওঁকে করোনা ওয়ার্ডেই রাখা হয়।’’ মহিলাকে এক বারও দেখতে না-আসা সম্পর্কে জয়দীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘ওঁর ব্যাপারে লাগাতার খবর নিয়েছি। ওঁর শারীরিক অবস্থার দিকে নজর রাখতেই আইসিএমআরের নির্দেশিকা মেনে সব পরীক্ষা করা হয়েছে।’’

ওই মহিলার বিলে ৪৫৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে ‘আদার প্রসিডিওর’ হিসাবে এবং ৪৫৯৮ টাকা ‘বেড সাইড প্রসিডিওর’ হিসাবে। এর যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিতে পারেননি। তাঁরা জানিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী তদন্ত চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন