ফুলকি থেকে আগুন, পুড়ে ছাই সন্তোষপুরের পুজো মণ্ডপ

পুলিশ ও দমকল সূত্রের খবর, এ দিন বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ খবর আসে, সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্কের পুজো মণ্ডপে আগুন লেগেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৪৩
Share:

ভস্মীভূত: আগুনের গ্রাসে সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্কের পুজো মণ্ডপ। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

ফুলকি থেকে আগুন লেগে ভস্মীভূত হয়ে গেল সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্কের পুজো মণ্ডপ। শুক্রবার সকালে মণ্ডপটি খুলে ফেলার সময়ে এই ঘটনা ঘটেছে। আগুনের তাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি দোকান এবং একটি বাড়ি।

Advertisement

পুলিশ ও দমকল সূত্রের খবর, এ দিন বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ খবর আসে, সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্কের পুজো মণ্ডপে আগুন লেগেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুর্গাপুজোর পরে লক্ষ্মীপুজোর জন্য মণ্ডপটি রাখা ছিল। শুক্রবার সেটি খোলার কাজ শুরু করেছিলেন কর্মীরা। খড় আর লোহার রড জুড়ে তৈরি সেই মণ্ডপ খোলার সময়ে কর্মীরা আগে খড় সরাননি। ওয়েল্ডিং যন্ত্রের সাহায্যে লোহার রডগুলি খোলার কাজ চলছিল। সেই সময়েই ওই যন্ত্র থেকে আগুনের ফুলকি এসে পড়ে খড়ের উপরে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে মণ্ডপ।

খবর পেয়ে সার্ভে পার্ক থানার পুলিশ ও দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায় আগুন নেভাতে। তত ক্ষণে অবশ্য আগুনের গ্রাসে সব পুড়ে গিয়েছে। আগুনের তাপ এসে পড়ে মণ্ডপ লাগোয়া কয়েকটি দোকানে। সেগুলির সাইনবোর্ড ও বাতানুকূল যন্ত্র আগুনের তাপে পুড়ে গলে গিয়েছে। মণ্ডপের পাশেই রয়েছে একটি বাড়ি। দু’-তিন ফুটের মধ্যে থাকা সেই বাড়ির দোতলার কাচ আগুনের তাপে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ে।

Advertisement

এলাকাবাসীর অভিযোগ, আগুনের হল্কা দোকানের বাইরে এমন ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল যে, বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে শাটার বন্ধ করে ভিতরে আটকে থাকতে হয়েছিল। কিন্তু ভিতরেও আগুনের তাপ ছড়াতে থাকে। দমবন্ধ হয়ে আসছে দেখে আগুনের হল্কার মধ্যে দিয়েই বাইরে বেরিয়ে আসতে হয়। ঘটনার জেরে একটি বিউটি পার্লারের দুই তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেই পার্লারের পুরুষ বিভাগেও এসেছিলেন কয়েক জন। তাঁদের মধ্যেও এক জন আগুনে একটু জখম হন।

তবে আগুনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাশের একটি বাড়ি। ওই বাড়ির দোতলার ঘরটি বছর বারোর এক স্কুলপড়ুয়ার। আগুনের তাপে ওই ঘরের কাচ ভেঙে পড়তে থাকে। তবে ওই পড়ুয়া স্কুলে থাকায় তার কোনও ক্ষতি হয়নি।

ওই বাড়ির বাসিন্দা নূপুর রায় বলেন, ‘‘আমি কোনও মতে স্বামীকে নিয়ে বইয়ের আলমারি আর খাটের তোশক-বিছানা সরাই। না-হলে ঘরে আগুন ছড়ালে সব শেষ হয়ে যেত।’’ তাঁর পাশের ঘরটাই ছোট জা পারমিতা রায়ের। এক বছরের মেয়েকে নিয়ে ঘরেই ছিলেন তিনি। আগুনের তাপে ওই ঘরের এসি পুড়ে গলে যায়। ভয়ে মেয়েকে নিয়ে ঘরের ভিতরের দিকে ঢুকে পড়েন তিনি। যদিও আগুনের হল্কা এতটাই ছিল যে, পারমিতা আতঙ্কে কাঁদতে শুরু করেন।

ওই দুই বধূই পুজো কমিটির গাফিলতির দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁদের প্রশ্ন, জনবসতির মধ্যে এত ছোট জায়গায় কী করে পুজোর অনুমতি দেয় পুলিশ-প্রশাসন?

পুলিশের অবশ্য দাবি, কলকাতার অনেক এলাকাতেই জনবসতির মধ্যে পুজো হয়। ওই মণ্ডপের পাশে আট-দশ ফুট জায়গা খালি রেখেই পুজো হয়। পুজোর সময়ে কোনও রকম অনিয়ম হয়নি। সব রকমের সতর্কতা অবলম্বন করেই পুজো করা হয়েছিল। কিন্তু মণ্ডপ খোলার সময়ে সতর্কতার অভাব ছিল। শুক্রবার রাত পর্যন্ত অবশ্য এই ঘটনায় কোনও ‌অভিযোগ দায়ের হয়নি।

পুজো কমিটির লোকজন অবশ্য গাফিলতির কথা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, মণ্ডপ খোলার সময়ে আগুন লাগেনি। পরে কোনও ভাবে লেগেছে। কী করে, তা কেউ জানে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন