পুজোর শহরে হারানো দিনের কথা

এ শহরের বুকে বাসা বেঁধে আছে হাজারো গল্পের কোলাজ। সে গল্প কখনও মনে করিয়ে দেয় পথের বাঁকে ভুলে ফেলে আসা মাটির সোঁদা গন্ধ, কখনও বা চলতি পথের আধুনিকতার জয়গান। শরতের মিঠে-কড়া রোদ, কাশফুলের রাশ, নীল আকাশের হাতছানিতে ডাক দিয়ে বাঙালি মণ্ডপে মণ্ডপে গল্প বলে জীবনের। আবার গল্প বলতে গিয়ে উঠে আসে চারপাশের বাতাবরণও। গোটা বিশ্ব জুড়েই এখন সন্ত্রাসের আবহ।

Advertisement

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০৫
Share:

এ শহরের বুকে বাসা বেঁধে আছে হাজারো গল্পের কোলাজ। সে গল্প কখনও মনে করিয়ে দেয় পথের বাঁকে ভুলে ফেলে আসা মাটির সোঁদা গন্ধ, কখনও বা চলতি পথের আধুনিকতার জয়গান। শরতের মিঠে-কড়া রোদ, কাশফুলের রাশ, নীল আকাশের হাতছানিতে ডাক দিয়ে বাঙালি মণ্ডপে মণ্ডপে গল্প বলে জীবনের।

Advertisement

আবার গল্প বলতে গিয়ে উঠে আসে চারপাশের বাতাবরণও। গোটা বিশ্ব জুড়েই এখন সন্ত্রাসের আবহ। তবু তো অহর্নিশি ছড়িয়ে পড়া হিংসা আর অস্থিরতাকে জয় করেই পৌঁছে যায় শান্তির অমোঘ বাণী। তাই খিদিরপুর মিলন সঙ্ঘের (কবিতীর্থ পার্ক) এ বারের ভাবনা ‘শক্তি রূপেণ সংস্থিতা, শান্তি রূপেণ সংস্থিতা’। পুরাণ মতে দেবী দুর্গা একাধারে সৃষ্টিশীল, সংরক্ষণশীল এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিহারকের ভূমিকাতেও অবতীর্ণা। ৭৫ বছর পেরোনো এই পুজোয় ‘সৃষ্টি, স্থিতি, লয়’ ত্রিশক্তির অধিকারিণী দেবী মহামায়ার চরিত্রের বিপরীত দুই ভূমিকা প্রকাশিত। মণ্ডপের বাইরের সজ্জায় তিনি শান্তির বরাভয় দানকারী, আশীর্বাদিকা। আর ভিতরে তিনি প্রতিহারক, ত্রিশূল হাতে অসুর-বিনাশী। পুজোর বিষয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই মণ্ডপসজ্জাতেও তাই রাখা হয়েছে বৈপরীত্য। তা সাজানো হয়েছে বর্ধমান এবং বাঁকুড়ার কাঠের ভাস্কর্য ও ধাতব পাতের মেলবন্ধনে। কাঠের রথের উপরে ধাতব পাতের কারুকাজ আসলে হয়ে উঠেছে শক্তিরই প্রতীক।

অতীতকে নিয়েই তো মানুষের এই দীর্ঘ পথ চলা। কিন্তু নগরায়ণের পথে চলতে গিয়ে অনেক সময়েই ছিন্নমূল হয়ে আমরা ভুলে যাই আমাদের চিরন্তন প্রথাগুলি। ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসে গ্রাম বাংলার মাটির টান। তা মনে করিয়ে দেওয়ার কাজটাই এ বার করছে পল্লি মঙ্গল সমিতি। প্রাচীন কালের নানা ব্রতের উপচার, যার মধ্য দিয়ে দৃঢ় হয়ে উঠত পারিবারিক বন্ধন, সেই ঐতিহ্যবাহী প্রথাকেই ‘মাতৃরূপেণ’ ভাবনায় আবার মনে করিয়ে দেবার চেষ্টা করছে তারা। ৫৫তম বর্ষে এ বার তারা মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করছে অবলুপ্ত হয়ে আসা ব্রতের নানা উপকরণ সাধারণ ঘট, মঙ্গলঘট, জলশঙ্খ, জয়শঙ্খ ইত্যাদি।

Advertisement

হারিয়ে যাচ্ছে পেঁচা, জিরাফ, কচ্ছপের মতো প্রাণীরা। তাদের নিয়ে মানুষকে আরও বেশি সচেতন করে তোলার প্রচেষ্টাই এ বার দেখা যাবে লস্করপুর জাগৃতি সঙ্ঘের সানপ্যাক, এসির পাইপ, থার্মোকল, নানা রকম কাগজ দিয়ে তৈরি মণ্ডপে। এ বার পুজোয় তাদের ভাবনা ‘সমাপ্তির গর্ভে সূচনা’।

দেখা মিলবে বাংলার নানা প্রান্তের বিলুপ্তপ্রায় পুতুল শিল্পেরও। ঠিকানা বেহালার নন্দনা যুব সঙ্ঘ। প্রান্তিক শিল্পীদের হাতে তৈরি নানা রকম পুতুল এবং বাঁশ দিয়ে সাজানো হচ্ছে এই মণ্ডপ। আবার পরিবেশ দূষণের কথা মাথায় রেখে আনুমানিক ১ লক্ষ ৫০ হাজার পেন, পেন্সিল, রবার ইত্যাদি দিয়ে মণ্ডপ সাজাচ্ছে নবরাগ সংঘ। তাদের প্রতিমা সাবেক আদলের। সল্টলেকের এ কে ব্লকের পুজোর এ বারের ভাবনা ‘একতা’। খেজুর ও তালপাতা দিয়ে বানানো হরেক উপকরণের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের মহামন্ত্র ‘চাইছি তোমার বন্ধুতা’। ই সি ব্লক আবার মণ্ডপ সাজিয়েছে ঝিনুক, শাঁখ, মুক্তোয়। তাদের ভাবনা যদিও বাঙালির সেই চিরকালীন ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’।

তাই এ বার পুজোয় ফিরে দেখারই পালা। বহু প্রতীক্ষিত উৎসবে এগিয়ে চলা দূষণহীন শান্তির বার্তা নিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন