রসগোল্লা উৎসব হবে কবে, সংশয়

প্রসঙ্গত, বাংলার রসগোল্লা ‘জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশনস’ (জিআই) বা ভৌগোলিক পরিচিতির মর্যাদা পেয়েছে গত নভেম্বরে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৮ ০৩:১৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

রসগোল্লা উৎসব আদৌ হবে কি না, আপাতত তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ তাপমাত্রার পারদ যে ভাবে বাড়ছে, তাতে চলতি মাসে কতটা রসগোল্লা উৎসব করা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মিষ্টি ব্যবসায়ীদের একাংশ। গরমে এই উৎসব করলে রসগোল্লা নষ্ট হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন অনেকে। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে ‘রসগোল্লা উৎসব’ আপাতত বাতিল হয়ে যেতে পারে বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

প্রসঙ্গত, বাংলার রসগোল্লা ‘জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশনস’ (জিআই) বা ভৌগোলিক পরিচিতির মর্যাদা পেয়েছে গত নভেম্বরে। সেই সঙ্গে বাগবাজার থেকে যে আধুনিক রসগোল্লার যাত্রা শুরু, চলতি বছরেই সেই রসগোল্লার জন্মের ১৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। ফলে ওই দুই ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি উৎসব করা হোক, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এমনটাই আবেদন করেছিলেন শহরের মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। মুখ্যমন্ত্রী তাতে সম্মতিও দিয়েছিলেন। সেই উৎসবের আয়োজন নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে কথাবার্তাও বলেছিলেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরা।

মিষ্টি ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, ফেব্রুয়ারিতেই ওই উৎসব হওয়ার কথা ছিল। কারা কারা ওই উৎসবে অংশগ্রহণ করবেন, সেই তালিকাও সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে উৎসবে ৩০টির মতো স্টল থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তার পরে সরকারের তরফে আরও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি বলেই জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় চলতি মাসে আদৌ ওই উৎসব করা যাবে কি না, তা নিয়েই সন্দিহান সকলে। কারণ, গরমে রসগোল্লা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে কারণে রসগোল্লা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টলে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। রসগোল্লার রসে বেশি মিষ্টি দিলে তার স্থায়িত্ব কিছুটা বেশি হয় ঠিকই, যেমনটা পাড়ার ছোট দোকানগুলির ক্ষেত্রে দেখা যায়, কিন্তু আধুনিক রসগোল্লা তৈরির সূত্রই বলছে যে, রসে যতটা সম্ভব কম মিষ্টি থাকবে। বিশেষ করে বড় দোকানগুলির রসগোল্লার রসে কতটা চিনির মিশ্রণ থাকবে, তারও একটা নির্দিষ্ট মাপকাঠি রয়েছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সেই রসগোল্লা নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রশ্নই থেকে যাচ্ছে।

Advertisement

শহরের প্রসিদ্ধ এক মিষ্টি ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘তাপমাত্রা যে ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে এখন আর এই উৎসব করা সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। সকলে তো আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টল করতে পারবে না।’’ জেলার এক মিষ্টি ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘রাতে তৈরি করে রসগোল্লা এই গরমে কী ভাবে নিয়ে যাব! দু’-তিন ঘণ্টা পরেই তো সেই রসগোল্লা নষ্ট হয়ে যাবে গরমে।’’

শহরের এক বিখ্যাত মিষ্টি বিপণির কর্ণধার ধীমান দাস বলেন, ‘‘যে কারণেই হোক এতদিন যখন উৎসব হয়নি, তখন এখন আর হবে বলে মনে হয় না। কারণ, এই গরমে রসগোল্লা কয়েক ঘণ্টা ধরে রেখে দেওয়া খুবই মুশকিল।’’ ‘পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতি’র কলকাতা জেলার সহ-সম্পাদক জগন্নাথ ঘোষ বলেন, ‘‘উৎসবে মিষ্টি ব্যবসায়ীদের কারা কারা অংশগ্রহণ করবেন, সরকারের কাছে তালিকাও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তার পরে আর সরকারের তরফে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।’’ তবে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ওই উৎসব যদি আগামী নভেম্বরে করা যায়, তা হলে ভাল হয়। কারণ, সে মাসেই বাংলার রসগোল্লা ভৌগোলিক পরিচিতি পেয়েছিল।

প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, মিষ্টি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন