Bio medical wastes

‘বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ে সচেতন হলেই ঝক্কি বাড়বে!’

বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাড়ি থেকে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহের কোনও পরিকাঠামো এখনও রাজ্যে গড়ে ওঠেনি।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:০৪
Share:

বজবজে সাধারণ বর্জ্যের ভাগাড়ে পড়ে রয়েছে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের প্যাকেট। নিজস্ব চিত্র

পারস্পরিক দায় ঠেলাঠেলি নাকি মূল আইনেরই ফাঁক? ঠিক কী কারণে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের স্তূপ রাজ্যে ক্রমে বাড়ছে? এমনটাই প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদ ও জনস্বাস্থ্য চিকিৎসকেরা।

Advertisement

তাঁদের বক্তব্য, কোভিড-বর্জ্য সামলাতে এখন হিমশিম অবস্থা রাজ্য সরকারের। যার কারণ, বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ে জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশেরই সচেতনতা এবং রাজ্য ও পুরসভাগুলির বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। তাঁদের প্রশ্ন, কোনও সচেতন নাগরিক বাড়ির বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য আলাদা করলেও সেটা কে নিয়ে যাবে? সেটাই তো স্পষ্ট নয়!

বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাড়ি থেকে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহের কোনও পরিকাঠামো এখনও রাজ্যে গড়ে ওঠেনি। এ জন্য মূল আইনেই ফাঁক রয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পরিবেশ সংক্রান্ত মামলার আইনজীবী পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১৬ বা পরবর্তীকালে সংশোধিত আইনে হাসপাতাল, নার্সিংহোম-সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বর্জ্যের উল্লেখ থাকলেও বাড়ির বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহের কোনও উল্লেখই নেই। তাঁর কথায়, ‘‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১৬-এ স্যানিটারি ন্যাপকিন, ডায়াপারের মতো অপচনশীল (নন-বায়োডিগ্রেডেবল) বর্জ্য আলাদা করে রাখতে বলা হয়েছে। কিন্তু সিরিঞ্জ, অক্সিজেন সিলিন্ডার-সহ আরও অন্য বর্জ্য সম্পর্কে কোনও দিশাই দেওয়া নেই।’’ কলকাতা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তথা জঞ্জাল অপসারণ দফতরের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদারের কথায়, ‘‘জঞ্জাল সাফাই দফতরের দায়িত্ব পুর এলাকার যাবতীয় পচনশীল এবং অপচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করা। কিন্তু বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব স্বাস্থ্য দফতরের।’’

Advertisement

আবার পুর স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, শহরের বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থা রয়েছে। সেই সংশ্লিষ্ট সংস্থার বক্তব্য, প্রতি বাড়ি থেকে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব তাদের নয়। তা হলে কার? সংস্থার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন্স) কৃষ্ণেন্দু দত্তের কথায়, ‘‘সেটা আইনে স্পষ্ট করে উল্লেখ নেই। আমরা শুধুই পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ করি।’’

কোনও সচেতন নাগরিক যদি বাড়িতে সিরিঞ্জ, সুচ, অক্সিজেন সিলিন্ডার, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া ওষুধ-সহ বিভিন্ন বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য আলাদা করে রাখেন এবং সেগুলি পৃথক ভাবে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে চান, তা হলে কী করতে হবে? ‘‘সে ক্ষেত্রে তাঁকে ওই এলাকার পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আবেদন করতে হবে, তখন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা করা হবে।’’ জানাচ্ছেন কৃষ্ণেন্দুবাবু। যার পরিপ্রেক্ষিতে এক পরিবেশবিদ শ্লেষের সুরে বলছেন, ‘‘মানে পরিস্থিতি যা দেখা যাচ্ছে, তাতে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ে সচেতন হলেই ঝক্কি বাড়বে! বরং সেগুলি এ দিক-ও দিক ফেলে দেওয়াটাই সহজ কাজ।’’

আর এই টানাপড়েনেই প্রতি বছর রাজ্যে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। আর কোভিড সংক্রমণ সেই পরিমাণকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। খোলা ভাগাড়ে বিপজ্জনক ভাবে পড়ে থাকছে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের প্যাকেট!

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে কোভিড-বর্জ্য সংক্রান্ত যে কমিটি গড়া হয়েছে তার যুগ্ম আহ্বায়ক নব দত্তের কথায়, ‘‘২০১৬ সালে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন তৈরি হয়েছে। অথচ তা নিয়ে এখনও কোনও পক্ষেরই হেলদোল নেই।’’ জাতীয় পরিবেশ আদালতে কোভিড-বর্জ্য নিয়ে মামলাকারী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘এই নিয়ে সরকারের হিমশিম অবস্থার কারণই হল বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ে রাজ্যের এত দিনের ঢিলেঢালা মনোভাব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন