রবীন্দ্র মিউজিয়ামের বদলে হবে পার্কিং প্লাজা

আয় বৃদ্ধি যে কোনও সরকারেরই উন্নয়নের অভিমুখ। সে জন্য অনেক সময় আগে নেওয়া কোনও সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আয়ের লক্ষে নতুন পথও খোঁজে সরকার। কেন্দ্র বা রাজ্য কারও ক্ষেত্রেই এমন নজির বিরল নয়। সেই পথে হেঁটেই এ বার একটি সিদ্ধান্ত নিল রেল, যার ফলে হাওড়ায় রবীন্দ্র মিউজিয়ামের জন্য চিহ্নিত জমিতে গড়া হবে পার্কিং জোন।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

হাওড়া স্টেশনের পাশে এখানেই গড়ে উঠবে পার্কিং প্লাজা। — নিজস্ব চিত্র

আয় বৃদ্ধি যে কোনও সরকারেরই উন্নয়নের অভিমুখ। সে জন্য অনেক সময় আগে নেওয়া কোনও সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আয়ের লক্ষে নতুন পথও খোঁজে সরকার। কেন্দ্র বা রাজ্য কারও ক্ষেত্রেই এমন নজির বিরল নয়। সেই পথে হেঁটেই এ বার একটি সিদ্ধান্ত নিল রেল, যার ফলে হাওড়ায় রবীন্দ্র মিউজিয়ামের জন্য চিহ্নিত জমিতে গড়া হবে পার্কিং জোন।

Advertisement

পরিকল্পনা ছিল গঙ্গার পাড়ে রেলের জায়গায় তৈরি করা হবে রবীন্দ্র মিউজিয়াম। মিউজিয়ামের পাশেই গঙ্গার তীর বরাবর থাকবে বাহারি ফুলের বাগান। থাকবে পায়ে চলা পথ ও বসার জায়গাও। কিন্তু সে সব কিছুই হলই না, উল্টে ওই জায়গায় পিচ ঢেলে তৈরি হল গাড়ি রাখার পার্কিং জোন। লক্ষ, রেলের আয় বৃদ্ধি।

এমনটাই ঘটেছে হাওড়া স্টেশন এলাকায়। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন হাওড়া স্টেশনের উল্টো দিকে গঙ্গার তীর বরাবর একটি রবীন্দ্র মিউজিয়াম তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। এ জন্য প্রায় চায় বিঘা জায়গা নিয়ে থাকা রেলের একটা দোতলা ভবন ভেঙে ফেলাও হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি। সম্প্রতি নদী তীরের সেই জমিতেই পার্কিং জোন তৈরি করে একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিল পূর্ব রেল। রেলের বক্তব্য, স্টেশন চত্বরে পার্কিংয়ের সমস্যা মেটাতে এবং রেলের আয় বাড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

২০০৯ সালে রেলমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা হাওড়া স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্সের উল্টো দিকে এই মিউজিয়াম করার পরিকল্পনা করেন। এ জন্য প্রায় চার বিঘা জায়গা জুড়ে থাকা রেলের একটি পুরনো বাড়ি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি ওই মিউজিয়ামের সামনে গঙ্গার তীর বরাবর একটি মনোরম পার্ক তৈরির করাও পরিকল্পনা করা হয় যাতে সাধারণ মানুষ গঙ্গা তীরের শোভা দেখতে দেখতে রবীন্দ্র চর্চা করতে পারেন। ঠিক হয় ওই মিউজিয়ামের রবীন্দ্রনাথের লেখা সমস্ত গ্রন্থ ছাড়াও রাখা হবে তাঁর আঁকা দুষ্প্রাপ্য ছবি। মিউজিয়াম ছাড়াও তৈরি হবে একটা বড় অডিটোরিয়াম, যেখানে বিভিন্ন সময়ে রেলের নানা অনুষ্ঠান করা যাবে।

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর প্রস্তাব মতোই কাজও শুরু হয়ে গিয়েছিল ২০১০ সালে। নিউ কমপ্লেক্সের উল্টো দিকে গঙ্গার তীর বরাবর ছিল একটা বহু পুরনো ভবন, যেটি মূলত রেলের প্রিন্টিং প্রেস হিসেবে বিখ্যাত ছিল। পরে অবশ্য ওই জায়গা থেকে প্রেস সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই জায়গায় আরপিএফ জওয়ানদের ব্যারাক হিসেবে বাড়িটি ব্যবহার করা হতো। এ ছাড়াও ছিল আরপিএফের একটা আউট পোস্ট।

কিন্তু ভবনটি ভেঙে দেওয়ায় সবই সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়। ব্যারাক ভেঙে দেওয়ায় সমস্যায় পড়েন আরপিএফের জওয়ানরা। তাঁদের জায়গা হয় হাওড়া স্টেশনের আরপিএফ অফিসের পাশে আর একটি বাড়িতে। এ সবেই মধ্যেই রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলে রেলমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা। রেলমন্ত্রী করেন মুকুল রায়কে।

এর পর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে যায়। কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে বিজেপি সরকার। প্রস্তাবিত রবীন্দ্র মিউজিয়ামের জায়গাটি ঝোপ জঙ্গলে ভরে যায়। রাত হলেই জায়গাটি চলে যায় মাদকাসক্ত ও দুষ্কৃতীদের হাতে। স্টেশন চত্বরে পরপর কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। এর পরেই রেল নড়েচড়ে বসে। জায়গাটি টিন দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়মিত ঝোপঝাড় না কাটায় গঙ্গাতীরের ওই জায়গাটি দুষ্কৃতীদের আঁখড়া হয়ে দাঁড়ায় বলে অভিযোগ।

এরই মধ্যে রেল সিদ্ধান্ত নেয় জায়গাটিতে ঝোপ ঝাড় পরিষ্কার করে পার্কিং জোন তৈরি করা হবে। কারণ এতে একদিকে যেমন পার্কিংয়ের সমস্যা মিটবে, তেমনই রেলের আয় বাড়বে। সিদ্ধান্ত মতো কাজও শুরু হয়ে যায়। কিন্তু প্রশ্ন হল, যেখানে রবীন্দ্র মিউজিয়াম তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল সেখানে পার্কিং জোন তৈরি করে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হল কেন?

হাওড়ার ডিআরএম আর বদ্রীনারায়ণ বলেন, ‘‘হাওড়া স্টেশনে গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যা দিনদিন বাড়ছে। তাই ঝোপঝাড় হয়ে থাকা জায়গাটি পরিষ্কার করে পার্কিং প্লাজা করে দেওয়া হল। মানুষের সুবিধা হবে, রেলের আয়ও হবে।’’ ডিআরএম জানান, রবীন্দ্র মিউজিয়ামের বিষয়টা তিনি জানেন না, রেল বোর্ডের নির্দেশেই এই পার্কিং জোন হচ্ছে।

একই ধরনের একটি ভাবনা মাথায় রেখে প্রেসিডেন্সি ও আলিপুর জেলের মূল ফটকটি ঠিক রেখে বন্দিদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই জায়গাগুলিকে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন