শরতের মেঘ আনাগোনা করলেও আকাশে মাঝেমাঝেই বর্ষার ঘনঘটা। তারই মধ্যে সেজে উঠছে কলকাতা। পুজো এ বার চার দিনই হোক বা তিন দিন, উৎসবের রং কিন্তু কোনও ভাবেই ফিকে হচ্ছে না। পুজো উপলক্ষে কলকাতা যেন ফের এক রঙিন অচেনা শহর। কোথাও চোখে পড়ে প্রাচীন মন্দিরের আদল, কোথাও বা বসে গ্রাম্য মেলা, কোথাও আবার আলো আর প্রযুক্তির মায়াবী খেলা।
যেমন কাঁকুড়গাছি যুবকবৃন্দের পুজো মণ্ডপে এলে দেখা যাবে রথের মেলা। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, শীত পড়তেই নানা ধরনের মেলা বসে শহরে। অথচ আমাদের সেই পুরনো রথের মেলাটা যেন হারিয়ে যাচ্ছে। এই প্রজন্মের অনেকেই জানেন না রথের মেলা কী। তাই এ বার তাদের মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে রথের আদলে। কাঠ খোদাই করে সাজানো হবে সেই রথ। কৃৃষ্ণের সারা জীবনের নানা কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হবে সেখানে। প্রবেশপথে রথের সামনে থাকবে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মুর্তি। রথের মেলার মতোই এখানেও বিশেষ আকর্ষণ পাঁপড়ের দোকান।
চন্দ্র মণ্ডল লেন ও প্রতাপাদিত্য রোডের মোড়ে শারদীয়া সম্মিলনীর মণ্ডপে এ বার দেখা যাবে এক টুকরো গ্রাম। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, ধানের গোলা থেকে কুঁড়েঘর, সবই দেখা যাবে এখানে। কানে আসবে নানা রকম পাখির ডাক। মণ্ডপের গেট থেকে শুরু করে প্রতিমা দর্শন, সবটাই গ্রামের পথ ধরে। উদ্যোক্তাদের কথায়, শহরে বড় হওয়া এই প্রজন্মের অনেকেই গ্রাম দেখেননি। এ বার তাদের পা পড়বে গ্রামের পথে।
উত্তরের দমদম পার্ক ভারত চক্র ক্লাবের পুজোয় এ বার প্রযুক্তির সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটছে শিল্পের। উদ্যোক্তারা জানালেন, তাঁদের এ বারের থিম ‘সৃষ্টি যখন বর্ণময়।’ মণ্ডপ জুড়ে থাকবে স্টেনলেস স্টিলের এফেক্ট। পুজো-কর্তারা জানালেন, মণ্ডপে ঢুকলেই দর্শকদের পুজোর রঙিন জামাকাপড় স্টেনলেস স্টিলে প্রতিফলিত হয়ে আরও বর্ণময় হয়ে উঠবে। স্টেনলেস স্টিলে নানা ধরনের আলোর প্রতিফলন ঘটিয়ে তৈরি করা হবে ‘ইলিউশন এফেক্ট’। তাঁরা আরও জানালেন, শুধু শিল্পীরাই নন, কয়েকজন পেশাদার ইঞ্জিনিয়ারও যুক্ত এই মণ্ডপ সজ্জার সঙ্গে।
কাশী বোস লেনের এ বারের থিম ‘দেবীর মায়ায় আলো ছায়ায়’। লজেন্স বা চকোলেট বোমা যে রকম রঙিন রাংতায় মোড়া থাকে, এ বার তা-ই ব্যবহার করা হবে প্রতিমার সাজে। মণ্ডপ জুড়ে থাকবে নানা আলোর খেলা। একশো প্রদীপের উপর পেরেকের গ্লোব থেকে আলো ছড়িয়ে পড়বে গোটা মণ্ডপে। কর্মকর্তারা জানান, রাজস্থানের যোধপুরে মান্দর গ্রামের পুরোহিতরা এ বার তাঁদের প্রতিমা সাজানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই প্রতিমায় থাকবে এক অন্য রকম ছোঁয়া।
বেহালার আর্দশপল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির থিম ‘সুবর্ণ বর্ণমালায় দুর্গা লিখন।’ নানা বর্ণে, অক্ষরে সেজে উঠবে মণ্ডপ। শকুন্তলা পার্কের নেতাজি সঙ্ঘের ভাবনা ‘চক্রযান’। এখানে এলে দেখা যাবে চাকার নানা বিবর্তন। উদ্যোক্তারা জানালেন, কী ভাবে চাকার বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে মানব সভ্যতা অগ্রগতির দিকে এগিয়ে গিয়েছে, তা-ই দেখানো হবে এই মণ্ডপে।