এ বার আম-আদমিকেও ট্রাফিকের পাঠ দিতে চাইছে লালবাজার। তা-ও আবার রিয়্যালিটি শো-এর ধাঁচে। যার আয়োজক কলকাতা পুলিশ।
পুলিশের আয়োজিত ট্রাফিক নিয়ে সচেতনতার পাঠ, তাই স্বাভাবিক ভাবেই এখানে প্রতিযোগী থাকবেন ইচ্ছুক পথচারী, যাত্রী ও গাড়ির চালকেরা। বাদ থাকবে না বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারাও। প্রতিযোগিতা শেষে মেগা ফাইনাল। বিজয়ীদের দেওয়া হবে পুরস্কারও। এই গোটা অনুষ্ঠানের রূপরেখা তৈরি করতে সোমবার লালবাজারে ২৫টি ট্রাফিক গার্ডের ওসিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন শীর্ষকর্তারা। লালবাজার সূত্রে খবর, আইআইটি-র প্রাক্তনীদের তৈরি একটি সংস্থার সাহায্যে প্রায় এক বছর ধরে ‘জাগো কলকাতা জাগো’ নামে এই সচেতনতা অনুষ্ঠান করা হবে। তবে কবে থেকে ওই অনুষ্ঠান চালু হবে তা নিয়ে এখনও মুখে কুলুপ পুলিশের কর্তাদের।
ট্রাফিক সচেতনতা প্রসারে অবশ্য এই প্রথম অনুষ্ঠান করছে না কলকাতা পুলিশ। প্রতি বছরই পালিত হয় পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ। স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এক দিনের ‘ডিসি ট্রাফিক’ হওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়। তা হলে ফের এই নতুন প্রতিযোগিতা কেন?
সোমবার লালবাজারে ট্রাফিক ও পুলিশকর্তাদের বৈঠকে বলা হয়েছে, পুলিশের সঙ্গে পথচারী, চালক বা যাত্রীদের কারওই সমন্বয় থাকে না। এক পুলিশকর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘সমন্বয় বাড়ানোর লক্ষ্যেই রিয়্যালিটি শো-এর ধাঁচে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে, যাতে থাকবেন ট্রাফিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সকলেই’’। অনুষ্ঠানটি শুরুর আগে বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে বলে লালবাজার সূত্রে খবর।
পুলিশ জানায়, প্রতিযোগীদের বেছে নেওয়ার পর্বকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে প্রতিটি ট্রাফিক গার্ডে একটি করে ট্রেনিং স্কুল করা হবে। যেখানে প্রতিদিন চার দফায় প্রায় ৬০ জনকে ট্রাফিকের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন ট্রাফিক কর্তারা। বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহীদের নিয়ে আসা হবে ওই প্রশিক্ষণের জন্য। তবে প্রশিক্ষণে কী ভাবে চালক, যাত্রী ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে, তা ঠিক করবে আইআইটি-র প্রাক্তনীদের ওই বেসরকারি সংস্থাটি। প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে অডিও ও ভিডিও-র মাধ্যমে। তাই প্রতিটি ট্রাফিক গার্ডে ২০০ বর্গফুটের ঘর বরাদ্দ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওসিদের। যেখানে কম্পিউটর থেকে শুরু করে ক্লাস নেওয়ার সমস্ত আধুনিক ব্যবস্থা থাকবে। প্রশিক্ষণের পরে উপস্থিতি থেকে শুরু করে আগ্রহ— সব দেখে সেরাদের বাছা হবে পরবর্তী ধাপের জন্য। তাঁরা সুযোগ পাবেন রিয়্যালিটি শো-এর মেগা ফাইনালে।
শুধু বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই নয়, রাস্তাঘাটে ট্রাফিক সিগন্যাল বা পার্কিংয়ে দাঁড়ানো যাত্রী, চালক বা পথচারীদের বিভিন্ন প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমেও বেছে নেবেন ট্রাফিক কর্তারা। স্মার্ট ফোন বা ট্যাবে ‘গেম’-এর মাধ্যমেই হবে বাছাই।
অন্য দিকে, ট্রাফিক বিভাগের কর্তারা শহরের বাছাই করা স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ট্রাফিক ব্যবস্থা সম্পর্কে শিক্ষিত করে তুলবেন। সচেতন করা হবে যান চলাচলের বিষয়েও। সপ্তাহে দু’দিন করে ওই ক্লাস হবে। এ ক্ষেত্রেও প্রায় ৪২ সপ্তাহ ধরে ওই সচেতনতা অনুষ্ঠানের পরে পড়ুয়াদেরও বেছে নেওয়া হবে মেগা ফাইনালের জন্য। বাছাই করবেন ট্রাফিক ও ওই বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।
তিন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও বাছাইয়ের পরে সাত সপ্তাহ ধরে চলবে ফাইনাল খেলা। ৫০ সপ্তাহের মাথায় মেগা ফাইনাল। তা সরাসরি সম্প্রচারিত হবে টিভি-তে। তা থেকে বিজয়ীকে বেছে পুরস্কৃত করা হবে। তবে এ সবই এখনও পরিকল্পনা স্তরে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
প্রশ্ন উঠেছে, এক বছরের এই অনুষ্ঠানে কতটা সাড়া মিলবে? ব্যস্ত শহরের আম-আদমি বা পড়ুয়ারা কি আদৌ উৎসাহিত হবেন? এ ছাড়া, এত দিন ধরে এমন অনুষ্ঠান চালানোর মতো পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বাহিনীর অন্দরে। যদিও পুলিশকর্তাদের অনেকেরই দাবি, সব দিক খতিয়ে দেখেই এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে এই অনুষ্ঠান যে জনমানসে সচেতনতা অনেকটা বাড়িয়ে দেবে, তা অবশ্য জোর গলায় বলছেন না তাঁরা। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘অনুষ্ঠান সফল হলেও জনসচেতনতা বাড়তে কয়েক বছর লাগবে। এই অনুষ্ঠান এক বার করে থেমে গেলে চলবে না।’’