অবাধ্য বাইক ধরে ‘মাসুল’ দিলেন সার্জেন্ট

বেপরোয়া গাড়িকে নিয়মে বাঁধতে চাওয়ার ‘অপরাধে’ কর্তব্যরত সার্জেন্টকে জখম করার ঘটনা আগেও দেখেছে এ শহর। সেই তালিকাতেই জুড়ল বুধবার সকালের ই এম বাইপাস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৪১
Share:

বেপরোয়া গাড়িকে নিয়মে বাঁধতে চাওয়ার ‘অপরাধে’ কর্তব্যরত সার্জেন্টকে জখম করার ঘটনা আগেও দেখেছে এ শহর। সেই তালিকাতেই জুড়ল বুধবার সকালের ই এম বাইপাস। অভিযোগ, মুকুন্দপুরের কাছে একটি নিয়ম-ভাঙা মোটরবাইককে নিষেধ করায় উল্টে ওই সার্জেন্টকেই ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায় বাইকটি। শেষমেশ অবশ্য ওই সার্জেন্টের তৎপরতাতেই ধরা হয় ওই চালককে। এ ছাড়া বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জেরেই গত ২৪ ঘণ্টায় শহরে তিনটি পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দু’জন, আহত আরও এক।

Advertisement

পুলিশ জানায়, রাতের ডিউটি সেরে বুধবার সকালে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন পূর্ব যাদবপুর ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট অনীক পাল। ছিটকালিকাপুর থেকে বাইপাস ধরে মুকুন্দপুরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। পুলিশ জানায়, তখন ওই পথেই এক যুবক তীব্র গতিতে মোটরবাইক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পিছনে বসেছিলেন এক মহিলা।

অনীকবাবুর কথায়, ‘‘পাশ দিয়ে ওই যুবক বেপরোয়া ভাবে মোটরবাইক চালিয়ে যাচ্ছিল। পিছনের মহিলার মাথায় হেলমেটও ছিল না। আমি আস্তে চালাতে বলি। কিন্তু তা না শুনে উল্টে সে বাইক নিয়ে আমার মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। আমি ছিটকে পড়ে যাই।’’

Advertisement

পুলিশ জানায়, ওই সার্জেন্ট বাইক থেকে ছিটকে পড়লেও পরক্ষণেই রাস্তায় উঠে দাঁড়ান। তখন তাঁর বাঁ হাত থেকে রক্ত ঝরছে। ওই অবস্থাতেও অনীকবাবু নিয়ম-ভাঙা বাইকটির নম্বর দেখে ওয়্যারলেসে খবর দেন মুকুন্দপুর মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে। মুকুন্দপুরের মোড়ের কাছে বাইকটিকে ধরে ফেলে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় চালক তৌফিক আলমকে। আটক করা হয়েছে মোটরবাইকটিও।

শহরে বেপরোয়া গাড়ির বিরুদ্ধে পুলিশকে কঠোর হতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার রাতে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িই এক বেপরোয়া সেডানের ধাক্কা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যায়। বেপরোয়া গাড়ির জরিমানার অঙ্ক বাড়ানো যায় কি না, সে ব্যাপারে আইন সংশোধনের ভাবনা চলছে পরিবহণ দফতরে। তবে চালকদের একাংশ যেন ঠিকই করে নিয়েছেন, তাঁরা নিয়মের তোয়াক্কা না করেই গাড়ি চালাবেন।

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে চারু মার্কেটে বেপরোয়া লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয় হরিদেবপুরের বাসিন্দা অর্জুনচন্দ্র সাহার (৭০)। পুলিশ জানায়, ভবানীপুরে অর্জুনবাবুর চায়ের দোকান রয়েছে। তিনি ভবানীপুর থেকে স্কুটি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। দেশপ্রাণ শাসমল রোড ও প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের মোড়ে লরিটি পিছন থেকে এসে ধাক্কা মারলে অর্জুনবাবু রাস্তায় ছিটকে পড়েন। লরিটি তাঁকে পিষে দিয়ে রাস্তার ডিভাইডারে ধাক্কা মারে। অর্জুনবাবুকে বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনার পরে লরি ফেলে পালিয়ে যান চালক। রাতেই উত্তর কলকাতার রাজবল্লভপাড়ার কাছে যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ে বরযাত্রী বোঝাই একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মারে। আহত হন এক ফুটপাথবাসী। তিনি স্থানীয় নার্সিংহোমে ভর্তি। বেপরোয়া বাস চালানোর অভিযোগে পুলিশ চালক আনন্দ রুইদাসকে গ্রেফতার করেছে।

অন্য দিকে, বুধবার ভোরে ভিআইপি রোডে বাঙুরের কাছে বিমানবন্দরগামী একটি অ্যাপ ক্যাব একটি ট্রেলারের পিছনে ধাক্কা মারলে প্রাণ হারান ক্যাবের চালক হনুমানপ্রসাদ সিংহ (৪০)। তাঁর বাড়ি তিলজলায়। পুলিশ জানায়, এ ট্রেলারটি বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তখনই ক্যাবটি দ্রুত বেগে তাতে ধাক্কা মারে। আরজি করে চালককে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন