শতায়ুর জীর্ণ শরীরে এ বার নতুন প্রলেপ

দেশ তাকে এক ডাকে চেনে। যে মজবুত ইস্পাতে টাইটানিক জাহাজ গড়া হয়েছিল, তাতেই তৈরি তার বিপুলায়তন শরীর। এবং ১০৫ বছর ধরে অক্ষত দাঁড়িয়ে থাকা। এতগুলো বছরে যাকে তেমন কোনও ‘অসুখে’ও ভুগতে দেখেনি টালা থেকে টালিগঞ্জ।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায় ও কৌশিক ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৩০
Share:

দেশ তাকে এক ডাকে চেনে।

Advertisement

যে মজবুত ইস্পাতে টাইটানিক জাহাজ গড়া হয়েছিল, তাতেই তৈরি তার বিপুলায়তন শরীর। এবং ১০৫ বছর ধরে অক্ষত দাঁড়িয়ে থাকা। এতগুলো বছরে যাকে তেমন কোনও ‘অসুখে’ও ভুগতে দেখেনি টালা থেকে টালিগঞ্জ।

তবে জরাগ্রস্ত হওয়া শুরু হয়েছে বছরখানেক। সারা গায়ে একাধিক ছিদ্র মেরামত করতে তাই এই প্রথম পুরোদস্তুর সংস্কার শুরু হবে এশিয়ার বৃহত্তম, ঐতিহাসিক টালা ট্যাঙ্কের।

Advertisement

পুরসভা সূত্রে খবর, একাধিক জায়গায় হওয়া ছিদ্র দিয়ে জল বেরিয়ে দুর্বল হচ্ছে স্টিলের কাঠামোও। এখনও কলকাতার একটা বড় অংশে পানীয় জলের জোগান দেওয়া এই ট্যাঙ্ক অক্ষত রাখতে তাই ৮০ কোটি টাকা খরচের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে গ্লোবাল ই- টেন্ডারও ডাকা হয়েছে। আগামী ১০ জানুয়ারি চূড়ান্ত হবে সেই পর্ব।

কলকাতা যখন ভারতবর্ষের রাজধানী, তখনই তৈরি হয় প্রায় সাড়ে আট হাজার মেট্রিক টন ওজনের এই জলভাণ্ডার। পুরসভা সূত্রের খবর, ১৯০৯ সালে টালায় জলাধার গড়ার কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৯১১ সালে। তার পর থেকে দু’এক বার ছোটখাটো সংস্কার হয়েছে। সত্তরের দশকে কংক্রিটের কিছু কাজ হয়েছিল। তবে গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছিল, ট্যাঙ্কে নানা জায়গায় ফুটো হয়ে জল পড়ছে। স্টিলের এই জলাধারের অনেক জায়গার পাতও পুরনো হয়ে গিয়েছে।

পুরসভার এক আধিকারিক জানান, কোনও ছিদ্র পেলে জলের প্রবাহ তা ক্রমশ বড় করে তোলে। তাই দ্রুত সারাই না হলে বড় সমস্যার আশঙ্কায় চিন্তিত হয়ে পড়ছিলেন পুরকর্তারা। কারণ টালা ট্যাঙ্কের একারই জলধারণ ক্ষমতা ৯০ লক্ষ গ্যালন। সে ক্ষেত্রে কোনও কারণে ট্যাঙ্ক ফেটে গেলে তা কলকাতা শহরের একটা বড় অংশ ভাসিয়ে দিতে পারে। অথচ টাকার অভাবে কিছু করাও যাচ্ছিল না।

পলতায় গঙ্গা থেকে পরিশোধিত জল প্রায় ২২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ৬টি পাইপের মাধ্যমে টালায় পৌঁছয়। তা জমা হয় নীচের জলাধারে। সেখান থেকে ৬০ ইঞ্চি পাইপে সেই জল ওঠে মাটি থেকে প্রায় ১১০ ফুট উপরের ওই ট্যাঙ্কে। পুরসভার দাবি, এশিয়ার বৃহত্তম এই জলাধার এক সময়ে সারা কলকাতায় জল সরবরাহ করত। পরে গার্ডেনরিচ জলপ্রকল্প হওয়ায় টালার উপরে চাপ কিছুটা কমেছে।

কলকাতা পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল বিভাস মাইতি জানান, এই জলাধার সারানোর জন্য অনেক দিন ধরেই পরিকল্পনা চলছিল। কিন্তু টাকার অভাবে তা করা সম্ভব হচ্ছিল না। বছর তিনেক আগে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদনও জানানো হয়েছিল। প্রস্তুতি অনেকটা এগোনোর পরে কেন্দ্রের ওই প্রকল্প বাতিল হয়। তাতে ধাক্কা খায় টালা ট্যাঙ্ক সংস্কারের অগ্রগতি। ফের কেন্দ্রের নতুন প্রকল্প অম্রুত-এর সাহায্যের জন্য আবেদন জানায় রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) পাঠানোর পরে টালা ট্যাঙ্ক প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে।

বিভাসবাবু জানান, সংস্কারের কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অম্রুতের সাহায্য মোট ব্যয়ের এক তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ প্রায় ২৬ কোটি টাকা। রাজ্য সরকার দেবে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা এবং বাকি আট কোটি দেবে পুরসভা।

কবে থেকে শুরু হবে কাজ? পুরসভা সূত্রের খবর, এই কাজ যে সে সংস্থার পক্ষে করা সম্ভব নয়। তাই দরপত্রে স্পষ্ট বলা হয়েছে, মাটি থেকে ২৫ মিটার উপরে ৫০০ মেট্রিক টন লোহার কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সংস্থাই শুধু আবেদন করতে পারে। আগামী ১০ জানুয়ারি টেন্ডার খোলা হবে। সে দিনই ঠিক হয়ে যাবে, কোন সংস্থা ওই কাজের বরাত পাবে। ক’দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে, জানা যাবে তা-ও।

সংস্কারের কাজ চলাকালীন কি জল সরবরাহ বন্ধ থাকবে?

‘‘একেবারেই না,’’ বললেন জল সরবরাহ দফতরের এক আধিকারিক। তিনি জানান, বর্গাকার (৩২১ ফুট বাই ৩২১ ফুট) মূল ট্যাঙ্কটি চারটি আলাদা চেম্বারে বিভক্ত। একটিতে যখন কাজ চলবে, তখন বাকি তিনটি চালু থাকবে। পর্যায়ক্রমে এ ভাবেই কাজ হবে। তাতে জল সরবরাহে কোনও বিঘ্ন ঘটবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন